Image of মো: নুর আলম

নাম: মো: নুর আলম

জন্ম তারিখ: ১০ জুলাই, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: রাজমিস্ত্রী, শাহাদাতের স্থান : শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর

শহীদের জীবনী

তিন মাসের সন্তানকে গর্ভে রেখে শহীদ হলেন নূর আলম অকালে নিভে যাওয়া প্রদীপ শহীদ মো: নুর আলম ছিলেন অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার পিতা জনাব আমির আলী ভ্যান চালিয়ে জীবিন নির্বাহ করেন। পাশাপাশি মা গাজীপুরের একটি পোশাক শিল্পে কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন। তাঁদের উভয়ের উপর্জন করা সত্ত্বেও পরিবারে যেন অভাব অনটন লেগেই থাকেতো। জীবিকার অন্বেষণে খুব ছোট থাকতেই ২০১৯ সালে গাজীপুর আসেন শহীদ নূর আলম। গাজীপুরে পিতা-মাতার ছোট্ট একটি ভাড়া করা ঘরেই তিনি উঠেন। সেখানে তিন বন্ধুর সাথে মিলে একজন কমান্ডারের আন্ডারে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তার রাজমিস্ত্রির আয় থেকে বেশ ভালোভাবেই চলছিল পরিবারটি। মাত্র তিন মাস পূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান ধারণ করছেন। শহীদ নুর আলম অত্যন্ত বিনয়ী ও ভালো মনের মানুষ ছিলেন। ছুটিতে বাড়িতে গেলে বন্ধুদের সাথে খুব আনন্দচিত্তে হেসে খেলে সময় কাটাতেন। উৎফুল্ল সেই তরুণ যুবকটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে মারা যান। সন্তান দুনিয়ায় আসার পরে কাউকে বাবা বলে কাউকে তার সৌভাগ্য হবে না। পিতা-মাতা, স্ত্রী ও স্বজনরা নুরকে হারিয়ে দুখ, কষ্ট ও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ঘটনার সংক্রান্ত বিবরণ দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে তাকে অল্প বয়সেই কাজের সন্ধানে যেতে হয় গাজীপুরে। গাজীপুরে তিনি পিতা-মাতার সাথেই একটি ভাড়া করা বাসায় বসবাস করতেন। এখানে তিনি এক কমান্ডারের অধীনে রাজমিস্ত্রীর কাজ খুঁজে পান। তিন বন্ধু ছিলেন যারা একই সাথে কাজ করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে ছাত্র-জনতা গাজীপুর চৌরাস্তা দখল করে রাখেন। গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় নেমেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও কারফিউ এর মধ্যেই চলছিল প্রতিবাদ সমাবেশ। কোনভাবেই ছাত্র-জনতাকে রাস্তা থেকে সরানো যাচ্ছিল না। স্বৈরাচার সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমন করার জন্য টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, বুলেটসহ ভারি অস্ত্র দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপর অমানবিক নির্যাতন করেন। দেশের মধ্যে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, যেন দেশে এখন যুদ্ধ চলছে। দেশের সাধারণ জনসাধারণ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়ে যান। অনেকেই নিজ কর্মস্থলেও যাওয়ার সাহস করতে পারেনি । শহীদ নুর আলম এমন পরিস্থিতিতে কাজে যাওয়া থেকে বিরত থাকতেন। তবে ২০২৪ এর ১৯ জুলাই তার পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য বাসা থেকে তার বন্ধুর সাথে বের হন। যখন বাহিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলছিল। এলাকার গলি দিয়ে যখন তিনি গাজীপুর চৌরাস্তায় পৌঁছান তখন হেলিকপ্টার যোগে সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। নুর আলম গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে মেইন রাস্তা দিয়ে দৌড়িয়ে নিরাপদে অবস্থান নিতে চান। তবে তিনি আর নিরাপদ স্থানে যেতে পারেননি। তার আগেই আকাশ থেকে ছোড়া গুলিতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। সেদিন সশস্ত্র বাহিনীর গুলি বর্ষণে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। একারণে রাস্তায় অসংখ্য লাশ পরে থাকলেও লাশের পাশে যেতে সাহস করেনি কেউ। তার বন্ধুর ভাষ্যমতে, হেলিকপ্টার চলে গেলে তিনি নুর আলমকে খুঁজতে থাকেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার সন্ধান পাওয়া যায় না। পরে তার মোবাইল ফোনে কল দিলে একজন কল রিসিভ করে বলেন সে শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজে আছে। ডাক্তার ইতোমধ্যেই তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। এই সংবাদ শোনার পরে তার বন্ধুটি তার বাবাকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানান। তার বাবা ও বন্ধুসহ মোট ছয় জন তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজে গিয়ে লাশ খুঁজতে থাকেন। লাশ খুঁজে পেলে দেখতে পান তার কপালে গুলি লেগে মাথার পিছন দিয়ে বের হয়ে গিয়েছে। সন্তানের এই দৃশ্য দেখে তারা আর কেউ স্থির থাকতে পারেনি। সকলেই চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তারপর শহীদের মাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে তার মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু বাহিরে এমন পরিস্থিতিতে তার মা তখনও হাসপাতালে আসতে পারেনি। বিকাল তিনটার দিকে তার মা অনেক কষ্ট করে হাসপাতালে এসে আবারো অঝোরে কাঁদতে থাকেন।এরপর পরিবার হাসপাতাল থেকে লাশ চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ দিতে অস্বীকৃতি জানান। অনেক চেষ্টা-প্রচেষ্টার পর রাত এগারোটার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশটি হস্তান্তর করে। স্বজনেরা আহাজারি করতে করতে এম্বুলেন্সযোগে কুড়িগ্রামে লাশ নিয়ে যান। এম্বুলেন্সটি যখন গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তখন রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা এলাকার মানুষের চোখের পানি আটকানো যায়নি। গ্রামে সকল পেশার মানুষ জানাজায় উপস্থিত হয়ে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। এছাড়াও গ্রামবাসী আল্লাহর কাছে এর বিচার চান। একটা যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য নিহত নিরীহ শ্রমজীবী মানুষটি এভাবেই দুনিয়া থেকে চলে যেতে হল। পরিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ নূর আলম এর পিতা পেশায় একজন ভ্যান চালক। মা গাজিপুরের একটি গার্মেন্টস্ এ অল্প বেতনে চাকরি করেন। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে অল্প বয়সেই তিনি ঢাকায় গিয়ে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। শহীদ মো: নুর আলম মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁর মা দীর্ঘ ১ মাস গার্মেন্টসে অফিস করতে পারেনি। বাবারও ভ্যান চালানোর মত পরিস্থিতি ছিল না। এখন তাঁদের সংসারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ।মা গার্মেন্টস এ কাজ করে যে বেতন পান ঐটা দিয়েই সংসার চালাচ্ছেন। এছাড়াও অন্তসত্ত্বা স্ত্রীর জীবন হয়েছে দুঃখময়। একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: নুর আলম জন্মতারিখ : ১০-০৮-২০০২ ধর্ম : ইসলাম পেশা : রাজমিস্ত্রী পিতার নাম, বয়স, অবস্থা : মো: আমির আলী (৫০), ভ্যান চালক মায়ের নাম, পেশা : মোসা: নুর বানু বেগম (৪৩), গার্মেন্টস কর্মী পারিবারিক সদস্য : ৪ জন ছেলে মেয়ে : গর্ভে সন্তান আছে ভাই বোন সংখ্যা : ২ ভাই : ১. শহীদ নূর আলম : ২. ছোট ভাই নূর জামাল, বয়স: ১৫ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ভোগীরভাটা, ইউনিয়ন: ভোগডাঙ্গা, থানা: কুড়িগ্রাম সদর, জেলা: কুড়িগ্রাম ঘটনার স্থান : চৌরাস্তা, গাজীপুর আঘাতকারী : আওয়ামীলীগের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ আহত হওয়ার সময় কাল : ১৯ জুলাই, ২০২৪, সকাল: ১০.৩০ টা নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : ২০জুলাই, ২০২৪, সকাল: ১১ টা, শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর শহীদের কবরে বর্তমান অবস্থান : পরিবারিক কবরস্থান, ২৫ক্ক৫১'৫৫.০"ঘ ৮৯ক্ক৪০'৩৫.১"ঊ

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: নুর আলম
Image of মো: নুর আলম
Image of মো: নুর আলম
Image of মো: নুর আলম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শাহরিয়ার আল আফরোজ শ্রাবন

লাবলু মিয়া

মো: সোহাগ

মো: নুরুজ্জামান

মো: মেরাজুল ইসলাম

আব্দুল্লাহ আল তাহির

মো: জাহিদুর রহমান

মো: রুবাইদুজ্জামান রেজওয়ান নাইম

রুদ্র সেন

মো: গোলাম রব্বানী

মো: তৌফিক ইসলাম ভূঁইয়া

আব্দুল লতিফ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo