Image of মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম

নাম: মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১৪ জানুয়ারি, ২০০৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : রামপুরা বাসার সামনে, ঢাকা।

শহীদের জীবনী

মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম। ২০০৭ সালের ১৪ জানুয়ারি দিনাজপুর জেলার গোপালগঞ্জ ইউনিয়নের নরহরিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফরিদুল ইসলাম ও মাতা আরিশা আফরোজের মধ্যে বিচ্ছেদ হয় যখন তিনি মাত্র ২ বছর বয়সী ছিলেন। মা তার দুই বছর বয়সী একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং টেইলারিংয়ের কাজ করে আশিকুলকে বড় করতে থাকেন। পরবর্তীতে মায়ের অন্যত্র বিয়ে হলেও আশিক মায়ের নতুন সংসারেই থাকতেন। সেই সংসারে আশিকের ৬ মাস বয়সী একটি ছোট ভাইও আছে, যাকে আশিক আদর করে "চকলেট" ডাকতো। মাঝে মাঝে তার গ্রামের বাড়ি নরহরিপুরেও ছিলো তার আসা যাওয়া। আশিকুল ইসলাম ঢাকার নিবরাস ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার ৯ম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন এবং পাশাপাশি হিফজও করতেন। শাহাদাতের ঘটনা ২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার তার ক্ষমতাকে বাংলাদেশর রাজনীতিতে চিরস্থায়ী করতে প্রথমেই বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলখানায় ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এই শাসনামলে যে কোন আন্দোলন কিংবা ন্যায্য দাবি আদায়ের কর্মসূচিকে সরকার বিরোধী আন্দোলন বলে তা কঠিন হস্তে করার দমন করার কর্মপন্থা অবলম্বন করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে জুডিশিয়াল কিলিং, পুলিশ, র‌্যাবসহ সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে বিরোধী মতাদর্শের যেকোনো ব্যক্তিকে খুন-গুম-ক্রসফায়ার, ডিজিএফআই কর্তৃক আয়না ঘর নামক বন্দিশালায় রোমহর্ষক নির্যাতন ও হত্যা যেন বিরোধী কর্মপন্থাকে দমানোর বৃহৎ পরিকল্পনার ক্ষুদ্র অংশ। ২০১৮ সালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে আপামর ছাত্র জনতা। এ আন্দোলনকে নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা হঠাৎ করেই ঘোষণা করে বসেন- কোন কোটাই আর থাকবে না। ছাত্ররা বুঝতে পারে বিরাট এক রসিকতার সম্মুখীন হয়েছে তারা। কিন্তু তাদের আর কিছুই করার থাকে না। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের জুন মাসে আদালত কর্তৃক বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বহাল হলে জনতা রাস্তায় নেমে আসে। তারা বলেন আমরা কোটা ব্যবস্থার বিলুপ্তি চাই না বরং এর সঠিক ও যৌক্তিক সংস্কারের দাবি জানাই। কিন্তু ততদিনে আওয়ামী সরকার চতুর্থ বারের মতো মসনদে বসে নিজেকে অপ্রতিরোধ্য ভাবতে শুরু করেছে। তারা চিন্তা করতে থাকে, যেভাবে ২০০৯ সালে পিলখানায় ৫৭ জন সামরিক অফিসার কে হত্যা করে দেশের সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করা হয়েছিল, যেভাবে ২০১৩ সালের ৫ মে রাতের অন্ধকারে হেফাজতের গণজমায়েতে ম্যাসাকার চালানো হয়েছিল, যেভাবে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে ঠিক তেমনিভাবে জুন মাসে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনকেও দমিয়ে ফেলতে সক্ষম হবে সরকার। তাই পূর্বের কর্মপন্থা ও পদ্ধতি অবলম্বন করে সরকার ১৬ জুলাই থেকে ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। সেই দিন রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামের ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও ওয়াসিম আকরাম সহ মোট ছয়জন নিহত হওয়ার খবর দেশে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র জনতা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। ১৭ ও ১৮ জুলাই যথাক্রমে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর শিক্ষার্থীদের উপর চলে লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও গুলি বর্ষণের ব্যাপক ঘটনা। এতে লাশের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় শতকের ঘর। লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকলে জনসাধারণ বুঝতে পারে এই সরকারের আর কিছুতেই ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। ১৯ জুলাই শুক্রবার পবিত্র জুমার দিন। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মসজিদ থেকে নামাজের পর জনস্রোত বেরিয়ে আসে রাজপথ গুলোতে। তবে মুসল্লিদের এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে গুলি চালাতে সরকারি বাহিনীগুলোর হাত এতোটুকু কাঁপেনি। সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ,আওয়ামীলীগ, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী কর্তৃক মুসল্লিদের উপর গুলি চালানোর সংবাদ আসতে থাকে। থেমে থেমে জুমার পর থেকেই চলতে থাকে সংঘর্ষ। শহীদ আশিকুল ইসলাম প্রথম থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন। আশিক বয়সে ছোট হলেও তার শারীরিক গঠন বেশ ভালো ছিল। রামপুরায় ছাত্রদের মিছিলে যখন পুলিশ হেলিকপ্টার ব্যবহার গুলি চালাতে শুরু করে তখন তিনি দিগি¦দিক শুন্য হয়ে দৌড়াতে থাকা কয়েকজন ছাত্রকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাদেরকে নিরাপদ স্থানে পাঠানোর পর ছাত্রজনতা আবার যখন প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে তখন বিজিবি কর্তৃক এলোপাথাড়ি ছুঁড়তে থাকা একটি বুলেট এসে লাগে আশিকের মাথায়। ডানকানের পেছনে বুলেটটি বিদ্ধ হয়ে বাম কান এর পিছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। সাথে সাথেই লুটিয়ে পড়েন আশিক। গলগল করে বেরিয়ে আসে তাজা রক্ত, ধুলোয় ধুসরিত শুকনো রাজপথ সিক্ত হয় তাতে। যোগ দেন শহীদের মিছিলে। আন্দোলনের ইতিহাসে তার নাম মুদ্রিত হয় "শহীদ আশিকুল ইসলাম" হিসেবে। শাহাদাতকালে এ নশ্বর ধরায় রেখে যান তার মা, ছোট ভাই চকলেট ও এক বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ার প্রয়াস। শহীদের নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি ১. তার মা বলেন, সে আমার বড় ছেলে। অতি আদরের ছেলে। সেই ছিল আমার একমাত্র অবলম্বন। সে তার ৬ মাস বয়সী ছোট ভাইয়ের সাথে সারাদিন খেলা করত। ভাইকে ডাকত "চকলেট" বলে। বলতো 'আমার ভাইটা একদম চকলেটের মত।' এখন সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আমি কিভাবে তার কথা ভুলবো। ২. তার গ্রামের মো: সাইদুল ইসলাম জানান, আশিক খুব মিশুক ও অমায়িক ছেলে ছিল। শহীদ হওয়ার ২৩ দিন আগে সে বাড়িতে এসেছিলেন। সে হিফজ পড়াও শুরু করেছিল। অর্থনৈতিক অবস্থা : তার মা টেইলারিং এর কাজ করেন। আশিকের ছোট্ট ভাইকে নিয়ে ঢাকার রামপুরায় থাকেন। প্রস্তাবনা : ১. মায়ের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে ২. ছোট ভাইয়ের বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনার খরচ বহনের দায়িত্ব নেওয়া যেতে পারে একনজরে শহীদ আশিক নাম : মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ১৪-০১-২০০৭ পিতা : ফরিদুল ইসলাম মাতা : আরিশা আফরোজ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নরহরিপুর, ইউনিয়ন: গোপালগঞ্জ, থানা: নবাবগঞ্জ, জেলা: দিনাজপুর পেশা : ছাত্র শ্রেণি : ৯ম, পাশাপাশি হিফজও করছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : নিবরাস ইন্টান্যাশনাল মাদরাসা, রামপুরা, ঢাকা ঘটনার স্থান : রামপুরা, ঢাকা। ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে। আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯-৭-২০২৪, বিকেল ৪:৩০ শাহাদাতের সময়কাল : ১৯-৭-২০২৪, বিকেল ৪:৩০, রামপুরা বাসার সামনে, ঢাকা আঘাতের ধরন : কানের পেছনে গুলির আঘাত আক্রমণকারী : বিজিবি শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম
Image of মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম
Image of মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: গোলাম রব্বানী

মো: আজিজুল ইসলাম

আব্দুল লতিফ

মো: মিরাজুল ইসলাম

মো: রায়হানুল ইসলাম

মো: সাজ্জাদ হোসেন

মো: সুমন পাটয়ারী

আল শাহ রিয়াদ

মোসলেম উদ্দিন মিলন

মো: মামুন

তাহির জামান প্রিয়

মো: সোহাগ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo