Image of মো: মোহতাসিম হাসান ফাহিম

নাম: মো: মোহতাসিম হাসান ফাহিম

জন্ম তারিখ: ২ অক্টোবর, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান :মেয়র চলন্তের বাসায়।

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: মোহতাসিম হাসান ফাহিমের জন্ম পাঁচবিবি থানার অন্তর্গত পূর্ব রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক বাবা আব্দুল মালেক মন্ডল ও মাতা উম্মে হাবিবার ঘরে। তিনি হাকিমপুর ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। বাবা মায়ের দুই সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ের ভিতরে বড় ছেলে ছিলেন ফাহিম। একমাত্র বোনটি বাঘজানা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। পড়াশুনায় বেশ মনোযোগী ও মেধাবী ছিলেন শহীদ ফাহিম। ঘটনার দিনেও সে প্রাইভেট শিক্ষকের বাসায় প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। প্রাইভেট থেকে ফেরার পথে বিজয় মিছিলে যোগ দেন ফাহিম। মিছিল থেকে এলাকার চিহ্নিত আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং হাকিমপুর পৌর মেয়র চলন্তের বাসায় আটকে রাখে। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ জনতা মেয়রের বাসায় আগুন ধরিয়ে দিলে তাতে বন্দী করে রাখা ফাহিম অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। শাহাদাতের ঘটনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন তুঙ্গে। সরকার সারাদেশে কারফিউ জারি করে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের গুন্ডাবাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে সাধারণ ছাত্রজনতার বিপক্ষে। সরকার যে কোন মূল্যে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে মরিয়া। টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, ছড়রা গুলির ব্যবহার ছাড়াও স্নাইপার ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছে হত্যাযজ্ঞ। লাশের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে। অবশেষে ৩ আগস্ট শহীদ মিনার থেকে আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সরকার পদত্যাগের এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করেন। এক দফা ঘোষণার সময় শহীদ মিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য সমন্বয়কগণ। শুরুতে ৬ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন "লং মার্চ টু ঢাকা" কর্মসূচি ঘোষণা করে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সমন্বয়করা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে এনে ৫ই আগস্ট ঘোষণা করেন। আন্দোলনকে ঘিরে ৫ আগস্ট অনেক জেলায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, এতে একদিনে ১০৮জন সাধারণ নাগরিক ও পুলিশ নিহত হয়। ৫ আগস্ট খুনি হাসিনা এক দফা দাবির প্রেক্ষিতে সম্মিলিত ছাত্র-জনতার এক গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে এবং দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়।এরই মধ্য দিয়ে তার ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান ঘটে। সারাদেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। অলিতে গলিতে শুরু হয় বিজয় মিছিল। সেদিন প্রাইভেট শেষে বাসায় যাচ্ছিল মুহতাসিম হাসান ফাহিম। পথিমধ্যে সেও জনতার সাথে বিজয় মিছিলের শামিল হয়। কিন্তু হাসিনা পালিয়ে গেলেও রেখে যায় তার আওয়ামী গুন্ডা বাহিনী। বিজয় মিছিল থেকে স্থানীয় চিহ্নিত আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাকে সহ দুইজনকে ধরে নিয়ে উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন হাকিমপুর পৌর মেয়র জাহিদ হোসেন চলন্তের বাসায় আটকে রাখে। উল্লেখ্য ভবনের দরজা ছিল ফিংগার লক দেয়া। পরিকল্পিতভাবেই তাদের আটকিয়ে রাখা হয়েছিল এই ভবনটিতে। অপহরণের সংবাদ শুনে বিক্ষুদ্ধ জনতা চলন্তের বাসা ঘেরাও করে। কিন্তু তারা তাকে বাসায় না পেয়ে এক পর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ভবনটিতে। ঐদিন বিকেল থেকে তার পরিবার তার মোবাইল বন্ধ পায়। বিকেল গড়িয়ে রাত হলেও তাকে ফোনে পায়নি তার পরিবারের সদস্যরা। চিন্তায় বিচলিত হয়ে পড়েন তার বাবা ও মা সহ পরিবারের সবাই। অবশেষে রাত সাড়ে ১১ টায় ফাহিমের শাহাদাত বরণের ঘটনা ফাহিমের চাচাতো ভাইকে ফোনে জানানো হয়। সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই পৌর মেয়রের বাসার দিকে ফাহিমের পরিবারের সদস্যরা ছুটে যান, গিয়েই ফাহিম ও দিনাজপুরের আরেক বীর শহীদ আশাদুজ্জামান নুর সূর্যের অগ্নিদগ্ধ লাশ দেখতে পান। তবে এ ঘটনায় গত ১৯ আগস্ট সকালে আসাদুজ্জামানের বড় ভাই মো. সুজন বাদী হয়ে হাকিমপুর থানায় যে হত্যা মামলা করেন, তাতে ভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৪ আগস্ট বেলা আড়াইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে হাকিমপুর পৌর শহরে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের নির্দেশে হাকিমপুর উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হিলি রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের নিচে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। এ সময় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে অংশ নেওয়া আশাদুজ্জামান নূর, নাফিজ, মোস্তাকিম মেহেদী, মহিদুল ও বাবু আহম্মেদকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। পরে আসাদুজ্জামানকে ও পরদিন ৫ তারিখ মোহতাসিম হাসান ফাহিমকে পৌর মেয়র জাহেদ হোসেনের বাড়ির টর্চার সেলে নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। নির্যাতনের ফলে সেখানে সূর্য ও ফাহিমের মৃত্যু হয়। পরে আসামিরা এ দুজনের লাশ গুম করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে গভীর রাতে নাফিজ, মোস্তাকিম মেহেদী, মহিদুল ও বাবু আহম্মেদ কৌশলে পৌর মেয়রের বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নিহত এ দুজনের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলে হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌর মেয়র জামিল হোসেনের বাড়ি থেকে আসাদুজ্জামান ও ফাহিমের মরদেহ উদ্ধার করে। নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি ফাহিম ভালো ভদ্র ও নামাজি ছেলে ছিল বড়দের সম্মান করত এবং ছোটদের স্নেহ করতো। পড়াশুনাতেও সে অত্যন্ত ভালো ও নিয়মিত ছিল। ঘটনার দিন পড়া থেকে বিজয় মিছিলে যোগদান করে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ মাটির তৈরি টিনের ঘরে বসবাস করেন। বাবা কৃষিকাজ করে অল্প আয়ের সংসার পরিচালনা করতেন। প্রস্তাবনা : ১ বোনের পড়ালেখার খরচ বহন করা যেতে পারে ২ বাবার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: মোহতাসিম হাসান ফাহিম জন্ম তারিখ : ০২-১০-২০০৬ পিতা : মো: আব্দুল মালেক মন্ডল মাতা : মোসা: উম্মে হাবিবা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পূর্ব রামচন্দ্রপুর, ইউনিয়ন: বাঘ জানার, থানা: পাঁচবিবি, জেলা: জয়পুরহাট পেশা : ছাত্র (দ্বাদশ শ্রেণি, মানবিক বিভাগ) প্রতিষ্ঠান : হাকিমপুর ডিগ্রী কলেজ, জয়পুরহাট ঘটনার স্থান : হিল স্টেশনের মিছিল থেকে ধরে নিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পৌরমেয়র জাহিদ হোসেন চলন্তের বাসায় আটকে রাখে আহত হওয়ার সময়কাল : ৫-৮-২০২৪, বিকেল ৩:৩০ মিনিট শাহাদাতের সময়কাল : ৫-৮-২০২৪ বাসায়, রাত দশটা, মেয়র চলন্তের বাসায় আঘাতের ধরন : অগ্নিদগ্ধ আক্রমণকারী : স্থানীয় উত্তেজিত জনতার অগ্নিসংযোগ শহীদের কবরের অবস্থান : গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: মোহতাসিম হাসান ফাহিম
Image of মো: মোহতাসিম হাসান ফাহিম
Image of মো: মোহতাসিম হাসান ফাহিম
Image of মো: মোহতাসিম হাসান ফাহিম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শাহিনুর আলম

বদিউজ্জামান

মো: সুজন হোসেন

মো: রবিউল ইসলাম রাহুল

মোসলেম উদ্দিন মিলন

মো: নুর আলম

মো: জোবায়ের হোসেন

মো: মামুন

মো: সাজু ইসলাম

মো: সাহান পারভেজ

মানিক মিয়া

মো: সাজ্জাদ হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo