Image of মো: সুমন পাটয়ারী

নাম: মো: সুমন পাটয়ারী

জন্ম তারিখ: ২৫ নভেম্বর, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা:পোশাক শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান :বাইপাইল, আশুলিয়া।

শহীদের জীবনী

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দিনাজপুরের শহীদ সুমন পাটয়ারী। ২০০৩ সালের ২৫ নভেম্বর। চিরিরবন্দর থানার, ৬ নম্বর অমরপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে পিতা মো: ওমর ফারুক ও মাতা মর্জিনা বেগমের কোল জুড়ে আসেন পরিবারের প্রথম সন্তান সুমন পাটয়ারী। পারিবারের অভাব ও দারিদ্রতার কারণে সুমন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর স্থানীয় মাদরাসায় পড়াশোনা করে কোরআনের হাফেজ হন। সেইসাথে স্থানীয় মসজিদে ইমামতি করতেন। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসারের খরচ নির্বাহ করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই সংসারের স্বচ্ছলতা এবং মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে বাধ্য হয়ে ছুটে যান ঢাকার আশুলিয়ায়। সেখানে সুমন একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে একটু হাসি ও স্বচ্ছলতার জন্য ঢাকায় ভাগ্যের সন্ধানে এসেছিলেন সুমন। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন উপলক্ষ্যে বিজয় মিছিলে পুলিশের বন্দুকের গুলিতে নিহত হন তিনি। সন্তানকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ মা-বাবাসহ স্বজনেরা। শাহাদাতের ঘটনা ২৯ শে ডিসেম্বর ২০১৮। ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে একটি পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর বাংলাদেশে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিলুপ্তি ঘটায়। এরপর দলীয় সরকারের অধীনে পরপর তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের একক নির্বাচন। সর্বমোট ৩০০ টি সংসদীয় আসনের মাত্র ১৪৭ টি আসনে নির্বাচন হয়। বাকি ১৫৩ টি আসনে এর আগেই জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। ২০১৮ সালে নৈশভোটের নির্বাচন। যাতে নির্বাচনের আগের দিন রাতেই নৌকা মার্কায় সিল মারা ব্যালট পেপার দিয়ে ব্যালট বক্স পূর্ণ করে রাখা হয়। ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না নেওয়ার ঘোষণা দিলে আওয়ামী লীগ নিজেই বিভিন্ন আসনে তাদের দলের একাধিক ডামি প্রার্থী দাঁড় করায়। নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য করানোর উদ্দেশ্যই ছিলো এই ভাঁওতাবাজির প্রধান কারণ। দীর্ঘ ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসন, সমাজের রন্ধে রন্ধ্রে আসন গেঁড়ে বসা দুর্নীতি, বিরোধীদল ও মতের প্রতি সীমাহীন অসহিষ্ণুতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোকে দলীয় মহড়ার মঞ্চে পরিণত করা, নতজানু পররাষ্ট্র নীতি, সীমান্তে পাখির মত মানুষ হত্যা সহ এমন কোন অপরাধ নেই যার দায় এই ফ্যাসিস্ট সরকার এড়াতে পারে। প্রায় দেড় যুগের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ ছাত্রদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়। সর্বশেষ ছাত্রজনতা ৫ আগস্ট গণভবন উদ্দেশ্যে লংমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করলে, সারাদেশ থেকে মানুষ ঢাকা অভিমুখে রওনা হয়। প্রবল প্রতিরোধের মুখে অবশেষে বোন শেখ রেহানাসহ আওয়ামী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা পালিয়ে যায় ভারতে। এ সংবাদে দেশজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। উচ্ছ্বসিত জনতা বিজয় মিছিল বের করে দেশের অলিতে-গলিতে, রাজপথে। কিন্তু হাসিনার রেখে যাওয়া প্রেতাত্মা পুলিশ লীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তখনো তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্ট বিকেল ৩ টায় সুমন পাটয়ারী কয়েকজন বন্ধু মিলে বাহিরে বের হন এবং ছাত্রজনতার আনন্দ মিছিলে শামিল হোন। কিন্তু মিছিলে পুলিশ অতর্কিত গুলি ছুঁড়লে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিকবিদিক পালাতে থাকে। সুমনের অন্য বন্ধুরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু সুমন পালাতে পারেনি। পুলিশের বন্দুক থেকে ছোঁড়া তপ্ত বুলেট সুমনের কপাল ভেদ করে মাথায় ঢুকে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। সাথে সাথেই লুটিয়ে পড়েন সুমন। শহীদের উষ্ণ লাল রক্তে ভিজে যায় রাজপথের কালো পিচ। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। সুমন স্বপ্ন দেখতেন যেই অভাবের কারণে তিনি তার পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি, অল্প বয়সেই ধরতে হয়েছে সংসারের হাল, সেই অভাবের কারণে ছোট ভাই বোনের পড়াশোনা থেমে যেতে পারে না। কিন্তু তার সেই স্বপ্নকে থামিয়ে দিল অত্যাচারী, জালিম আওয়ামী শাসকের পেটোয়া পুলিশ। অঙ্কুরেই ঝরে গেলো স্বপ্নালু এক তাজা প্রাণ। গত ৬ আগস্ট সকাল ১১টায় চিরিবন্দর উপজেলার অমরপুর ইউনিয়নের শান্তিরবাজারের লক্ষিপুর গ্রামের বাড়িতে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা-বাবা। পরিবারের অনুভূতি সুমনের বাবা মো: ওমর ফারুক কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, ‘আমাদের ছেলে পরিবারের একটু সুখের আশায় আশুলিয়ায় কাজের সন্ধানে যায়। কিন্তু সেই সুখ আর আমাদের কপালে সইলো না। সে আমাদের মাঝে অক্ষত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে আসল না। এলো তার লাশ।’ এ দিকে, উপজেলার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র সমন্বয়কেরা উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে শহীদ সুমন মিনি স্টেডিয়াম রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা : বাবা পিকাপ চালক। শহীদ সুমন পাটয়ারী হাফেয, পরিবারের সহযোগিতার জন্য চাকরি করতেন। কলেজ ও স্কুল পড়ুয়া ছোট দুই ভাই বোন রয়েছে। প্রস্তাবনা : ছোট ভাই বোনদের পড়াশোনার খরচ যোগানে সহযোগিতা করা যেতে পারে। একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: সুমন পাটয়ারী জন্ম তারিখ : ২৫-১১-২০০৩ পিতা : মো: ওমর ফারুক মাতা : মর্জিনা বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: লক্ষীপুর ইউনিয়ন: ৬ নং অমরপুর , থানা: চিরিবন্দর, জেলা: দিনাজপুর বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত পেশা : পোশাক শ্রমিক ঘটনার স্থান : বাইপাইল, আশুলিয়া আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট বিকেল ৪:৩০ শাহাদাতের সময়কাল : ৫ আগস্ট বিকেল ৬:০০ আঘাতের ধরন : মাথায় গুলি আক্রমণকারী : পুলিশ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : লক্ষীপুর গ্রামের বাড়িতে, পারিবারিক কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সুমন পাটয়ারী
Image of মো: সুমন পাটয়ারী
Image of মো: সুমন পাটয়ারী
Image of মো: সুমন পাটয়ারী
Image of মো: সুমন পাটয়ারী

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শাহাবুল ইসলাম ( শাওন )

আশাদুজ্জামান নূর সূর্য্য

বদিউজ্জামান

মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম

মো: রায়হানুল ইসলাম

রুদ্র সেন

মো: রুবেল ইসলাম

মো: রায়হানুল হাসান

মো: সাজ্জাদ হোসেন

মো: নুর আলম

মানিক মিয়া

মো: আবু ছায়েদ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo