Image of মো: জিয়াউর রহমান

নাম: মো: জিয়াউর রহমান

জন্ম তারিখ: ১ মার্চ, ১৯৯৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ফ্লোরেন্স গ্রুপে কুয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার শাহাদাতের স্থান: উত্তরা আজমপুর এলাকা

শহীদের জীবনী

শহীদ মোঃ জিয়াউর রহমান ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ সালে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলাধীন ৬ নং ভাটরা ইউনিয়নের নাড়াবাড়ি মুন্সিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম আব্দুল কাফি ও মাতা মরহুমা খালেদা বেগম। শহীদ জিয়াউর রহমানরা পাঁচ ভাই। সীমান্তঘেরা গ্রাম নাড়াবাড়ি মুন্সিপাড়া। গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে দাঁড়াইল বিল। ছায়ায় ঘেরা মায়ায় ভরা গ্রামটিতে প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য এনে দিয়েছে অসংখ্য ছোট বড় পুকুর আর দিঘী। ছবির মত এমনই সুন্দর গ্রামে কেটেছে শহীদ মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানের শৈশবকাল। গ্রামে রয়েছে বেশ কয়েকটি লিচুবাগান। বাগানের গাছগুলোর ছায়ায়। বসে, মধু মাস জ্যৈষ্ঠতে বাগানের লিচু খেয়ে আর গ্রামের মেঠো পথে হেঁটে হেঁটে হয়তো এক সময় শৈশব শেষ হয়েছে তাঁর। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুর গুলোতে হয়তো গ্রামের দিঘী আর পুকুর গুলোর শীতল পানি প্রাণ জুড়িয়েছে তাঁর। গ্রামটির বর্ণনা শুনে মনের অজান্তেই মনে পড়ে যায় পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের সেই বিখ্যাত কবিতা 'নিমন্ত্রণ' এর কিছু চরণ, "তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়, গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়: মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি, মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়, তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়।" আপোষহীন শহীদ মোঃ জিয়াউর রহমানের আত্মত্যাগ শহীদ মোঃ জিয়াউর রহমান পড়াশুনা শেষ করে, তৈরী পোশাক খাতে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি সুদীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছিলেন। সর্বশেষ তিনি ফ্লোরেন্স গ্রুপের কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্বৈরাচারী হাসিনার শাসনামল পুরোটাতেই দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে। বেঁচেছে বাংলাদেশের আপামর জনগন। কি ছিল না খুনী হাসিনার শাসনামলে। বিচারবহির্ভূত হত্যা-গুম, ঋণখেলাপি, রিজার্ভ চুরি, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার, শিক্ষাখাতে অনিয়মের মহোৎসব, চিকিৎসা খাতের বেহাল দশা আর বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থতার কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল জিয়াউর রহমানদের, আর তাই তো স্বৈরাচারী সরকার পতনের আন্দোলন যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে, তখন তিনি নিজে সময় সুযোগ অনুযায়ী ছাত্রজনতার সাথে একাত্মতা পোষণ করে, সকল কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন তিনি। বাড়িতে অনেকটা গোপনীয়তা রক্ষা করেই আন্দোলনে যেতেন তিনি। কখনো কখনো বলতেন, "অফিসের কাজ আছে।" অথচ বাসায় এসে তার দুই সন্তান ছাড়া স্ত্রীকে গর্ব ভরা বুক নিয়ে বলতেন আন্দোলনের সেদিনের ইতি বৃত্তান্ত। প্রথমদিকেই স্ত্রী শাহনাজ বাঁধা দিলেও পরবর্তীতে তাঁর এমন দৃঢ়চেতা মনোভাব দেখে আর বাঁধা দিতে পারেননি তিনি। সর্বশেষ ৫ আগষ্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদফা কর্মসূচি লংমার্চ টু ঢাকা সফল করার লক্ষ্যে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। তাঁদের মিছিলটি উত্তরা আজমপুর এলাকায় আসলে, লংমার্চে অংশ নেয়া সাধারণ মানুষের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে অতি উৎসাহী নরপিশাচ পুলিশ। ঘাতক পুলিশের বুলেট জিয়াউর রহমানের বুকের বামপাশ ছিদ্র করে পিছন দিকে বেরিয়ে পড়ে। সাথে সাথেই রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। উনার সাথে থাকা এক সহকর্মী উনাকে নিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে যান। তবে সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে ক্যান্সার হাসপাতালে নিয়ে যান। পরবর্তীতে সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা জিয়াউর রহমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। দীর্ঘ চারদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে, অবশেষে আগষ্টের ৯ তারিখ সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মুক্ত বাতাস, প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছি যতবার, পড়ছো মনে তোমরা সকল জাতির অহংকার। শহীদ সম্পর্কে স্ত্রীর সহোদর ভাইয়ের অনুভূতি শহীদের স্ত্রী শাহানাজ আক্তার বলেন, "আমার স্বামী কি রকম ছিল, তা হয়তো আমি বর্ণনা করে বোঝাতে পারবো না। মানুষ কতটা অমায়িক হতে পারে তা ওকে দেখে আমি শিখেছি। নিয়মিত সালাত আদায় করতো সে আর আমাকেও উৎসাহ দিত। ইসলামের মৌলিক বিধান গুলো মেনে চলার চেষ্টা করতো। সবার সাথে আন্তরিকতার সম্পর্ক ছিল তাঁর। আত্মমর্যাদার দিক থেকেও সে ছিল সবার চেয়ে আলাদা।" শহীদ সম্পর্কে তাঁর বড় ভাই বলেন, 'জিয়াউর ছিল আমাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ। কর্মসূত্রে সে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করতো। ওর সহজ সরল জীবনযাপন মুগ্ধ করতো আমাদের। এখন তাঁর দুটি সন্তান এতিম হয়ে গেল। আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে হলেও, এই নৃশংস হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।" শহীদ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ শহীদ মো: জিয়াউর রহমান পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর আয় দিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দেই সংসার চলতো। তবে তার শাহাদাতের ঘটনায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে অসহায় পরিবারটির ওপর। পরিবার নিয়ে জিয়াউর রহমান ঢাকার যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, অর্থাভাবে তা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তাঁর স্ত্রী। গ্রামের বাড়িতে কিছুদিন পূর্বেই ঘর নির্মাণ শুরু করেছিলেন শহীদ মোঃ জিয়াউর রহমান কিন্তু মাঝ পর্যায়েই বন্ধ হয়ে গেল তা। ঢাকা ছেড়ে তাঁর পরিবার গিয়ে এখন সেই আধপাকা বাড়িতেই বসবাস শুরু করবে। এদিকে অনিচ্ছা শর্তেও, শহীদের পুত্র সারাফ হোসেনের প্রিয় 'সানরাইজ পাবলিক স্কুল' ছাড়তে হচ্ছে তাকে। সাথে স্কুল ছাড়ছে হচ্ছে তার ছোট্ট বোন জাফনাকেও। পরিবারটির সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রস্তাবনা-১: শহীদ পরিবারের বর্তমান অভিভাবক তাঁর স্ত্রীকে এককালীন কিছু অর্থ সহযোগিতা করা অত্যন্ত জরুরী। প্রস্তাবনা-২: শহীদের পিতৃহীন দুই সন্তানের উচ্চ শিক্ষা ও ভবিষ্যতের জন্য স্থায়ী কোন সহযোগিতা করা। প্রস্তাবনা-৩: শহীদের নির্মাণাধীন বাড়িটির নির্মাণসম্পন্ন করতে সহযোগিতা করা। একনজরে শহীদ পরিচিতি শহীদের পূর্ণনাম : মো: জিয়াউর রহমান জন্ম তারিখ : ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১ পেশা বা পদবী : চাকুরীজীবী পিতার নাম : মরহুম মো: আব্দুল কাফি মাতার নাম : মরহুম মোছা: খালেদা স্ত্রীর নাম : মোসা: শাহনাজ আক্তার স্ত্রীর পেশা ও বয়স : গৃহিনী, ৩৫ বছর পরিবারের মাসিক আয় : শহীদের অবর্তমানে কোন আয় নেই পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৩ জন আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪ আহত হওয়ার স্থান : আজমপুর, উত্তরা, ঢাকা আক্রমণকারীর পরিচয় : পুলিশ নিহত হওয়ার সময়কাল : ৯ আগস্ট, ২০২৪, সন্ধ্যা: ৭:২০ মিনিট নিহত হওয়ার স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ শহীদের কবরের অবস্থান : নাড়াবাড়ি মুন্সিপাড়া, বিরল, দিনাজপুর জিপিএ লোকেশন :25 3958.2″N 88°28'43.3"E ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা: গ্রাম: নাড়াবাড়ি, মুন্সিপাড়া, ইউনিয়ন: ৬ নং ভান্ডারা, উপজেলা: বিরল, জেলা: দিনাজপুর

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: জিয়াউর রহমান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আসাদুল হক বাবু

মো: রায়হানুল হাসান

মো: সুমন পাটয়ারী

মো: সাজু ইসলাম

আবু সাঈদ

মো: সুমন ইসলাম

মো: মিরাজুল ইসলাম

সাজ্জাদ হোসেন

মো: আল মামুন

মো: জাহিদুর রহমান

মো: শাহিনুর আলম

মো: গোলাম রব্বানী

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo