Image of আব্দুল্লাহ আল মাহিন

নাম: আব্দুল্লাহ আল মাহিন

জন্ম তারিখ: ১১ জুলাই, ২০০৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: শিক্ষার্থী, শাহাদাতের স্থান : হাসপাতালের আইসিইউ, উত্তরা।

শহীদের জীবনী

শহীদ আব্দুল্লাহ আল মাহিন। পিতা জামিল হোসেন সোহেল ও মাতা সামিরা জাহান মুনির ঘর আলোকিত করে এই ধরণীতে আগমন করেন ১১ জুলাই ২০০৮ সালে। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালি থানার চরপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত পুরোহিত পাড়া গ্রামে। পেশায় মাহিন ছিলেন ছাত্র। পড়াশোনা করতেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি, ঢাকাতে। এই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তিনি ডিপ্লোমা কোর্সে ১ম সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনায় মাহিন ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। মাহিন ছিলেন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তার পিতা জামিল হোসেন সোহেল ছিলেন প্রবাসী। দীর্ঘদিন তিনি সিঙ্গাপুর ছিলেন। দেশে এসে আবারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রোমানিয়া যাওয়ার। কিন্তু একমাত্র পুত্রের অকাল মৃত্যুতে তিনি আর দেশ ছেড়ে কোথাও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে একমাত্র বুকের মানিকের মৃত্যুতে তার মা সামিরা জাহান মুনি পাঁচ দিন যাবত মুখে কিছু তোলেননি। ফলে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাহিনকে হারিয়ে তার পিতা-মাতা এখন নিঃস্ব অসহায়। যেভাবে শহীদ হন মাহিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ৯ দফা দাবি আদায়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও আন্দোলনে ঢাকার রাজপথ থেকে শুরু করে সারাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবক থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ সংহতি প্রকাশ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। দিনটি ৪ আগস্ট ২০২৪। উত্তরা আজামপুর মোড় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল। সেখানেই ছিলেন মাহিন; এক সাহসী তরুণ, যিনি চোখে স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে হাহাকার । আন্দোলনের উত্তপ্ত মুহূর্তে একপর্যায়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছোঁড়ে পুলিশ ও কুখ্যাত ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। একটা বুলেট মাহিনের বাম চোখ দিয়ে ঢুকে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে। সেই মুহূর্তটা যেন এক ভয়াবহ ধ্বংসের বার্তা নিয়ে আসে তার জন্য। স্থানীয় বাসিন্দারা রক্তাক্ত মাহিনকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে তার কোনো স্থান হয়নি। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ারও কেউ ছিল না। অতঃপর অনেক চেষ্টা করে তাকে অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ওঈট-তে দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা মৃত্যুর সাথে লড়াই করেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। মাহিনের প্রাণপাখি উড়ে যায় অজানা গন্তব্যে। মৃত্যুর আগে তিনি তার মায়ের নামই বারবার উচ্চারণ করছিলেন। বলছিলেন, 'আমার মায়ের নাম মুনি।' এই কথাই যেন তার শেষ কথা, এই কথাই যেন এক বুক আর্তনাদ।! শহীদ মাহীন সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য শহীদ আব্দুল্লাহ আল মাহিন ছিলেন অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল ও সদা তৎপর এক মেধাবী ছাত্র। তিনি উত্তরা ইউনাইটেড কলেজ থেকে ২০২৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ হতে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন ঢাকা শহরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজিতে। এই প্রতিষ্ঠানের সিএসই ডিপার্টমেন্টের ডিপ্লোমা কোর্সের ১ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। আকাশে ঘন কালো মেঘ! তীব্র ঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে প্রকৃতি! ঠিক তেমনই এক প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে শেষ হলো ময়মনসিংহের তরুণ আব্দুল্লাহ আল মাহিনের তাজা প্রাণ। বাবামায়ের একমাত্র ছেলে, পরিবারের স্বপ্নের প্রদীপ! সবে কলেজের সিঁড়িতে পা রাখা মাহিন আজ আর নেই! এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা ভেঙ্গে চুরমার করে দিলো একটি স্বপ্নময় জীবন। শহীদ মাহিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই তার পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। শোকে পাথর হয়ে যান তার বাবা-মা। মাহিনের মা মুনি তার সন্তানের অকাল মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে তার সব স্বপ্ন, সব আশা! তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষাও কারো নেই। একমাত্র ছেলের এই অকাল মৃত্যুতে শোকাহত মা টানা ৫ দিন ধরে কিছুই খাননি। মাহিনের বাবা জনাব জামিল হোসেন প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাকে সংসারের প্রয়োজনেই উৎসর্গ করতে হয়েছে। তার একমাত্র ছেলে মাহিন ছিল তার স্বপ্নের আশ্রয়। কিছুদিন হলো তিনি দেশে ফিরেছেন এবং নতুন কর্মজীবনের খোঁজে রোমানিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তারই অংশ হিসেবে ভিসাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই তার রোমানিয়ায় পাড়ি জমানোর কথা ছিল। কিন্তু ছেলের অকাল মৃত্যু তার সেই পরিকল্পনাকে চিরতরে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এখন তার কাছে কোনো বিদেশের স্বপ্ন, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা- সবই অর্থহীন। চোখের সামনে যে তার একমাত্র সন্তান অদৃষ্টের নির্মমতায় বিদায় নিয়েছে! জীবন যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা কেউ ভাবেনি। ময়মনসিংহের এই তরুণ, যে এখনও কৈশোরের গন্ধ মেখে জীবনের পথ চলছিলেন, আজ তাকে হারিয়ে সবাই স্তব্ধ। এলাকার মানুষজনেরও যেন বিশ্বাস হতে চায় না, তাদের পরিচিত সেই হাসিখুশি ছেলেটি আর নেই! আজ সে শহীদের তালিকায়! শহীদ স্বজনের অনুভব-অনুভূতি জীবনের শেষ মুহূর্তে মায়ের নাম উচ্চারণ করে মাহিন পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে গেল। তার এই শহীদ হওয়ার মধ্য দিয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে একটি নতুন ইতিহাস যুক্ত হলো। ইতিহাসের রক্তাক্ত পাতায় লেখা হয়ে গেল একটি তাজা প্রাণের অন্তিম বিদায়। তার বাবা-মায়ের আকাঙ্ক্ষা, আল্লাহ যেন শহীদ আব্দুল্লাহ আল মাহিনের খুনিদের উপযুক্ত বিচার করেন এবং আব্দুল্লাহ আল মাহিনকে যেন আল্লাহ জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করেন। মাহিনের চাচী বলেন, "সকালে নাস্তা করেছিল মাহিন। নিজে নিজেই ডিম ভেজে খেয়ে আন্দোলনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায় সে। বাবা-মা আন্দোলনে যেতে দিতে রাজি ছিল না বলে সে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যেত। প্রতিবেশী বা বন্ধুবান্ধব সবার সাথেই তার ভালো সম্পর্ক ছিল।" তার সহপাঠী, বন্ধু এবং এলাকার মানুষজনের মুখে একটাই কথা"মৃত্যুর বিচার চাই! এভাবে আর কত প্রাণ যাবে আর কত মায়ের বুক খালি হবে?" প্রতিটি হৃদয়ে আজ এই প্রশ্ন! সকলেই আজ শোকাচ্ছন্ন! এক নজরে শহীদ মাহিন পূর্ণ নাম : আব্দুল্লাহ আল মাহিন জন্ম তারিখ : ১১.০৭.২০০৮ শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : হাসপাতালের আইসিইউ, উত্তরা, ৪ঠা আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৫টা আহত হওয়ার স্থান ও সময়কাল : আজামপুর মোড়, উত্তরা, ঢাকা, ৪ঠা আগস্ট, ২০২৪, দুপুর ১২টা আঘাতের ধরন : বাম চোখে গুলি ঘাতক : পুলিশ ও ছাত্রলীগ (ডিবি রাসেল) সমাধিস্থল : ভাটিকাশর গোরস্থান, ময়মনসিংহ পেশা : শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা পিতা : জামিল হোসেন সোহেল মাতা : সামিরা জাহান মুনি স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পুরোহিত পাড়া, ইউনিয়ন: চরপাড়া থানা: কোতোয়ালি, জেলা: ময়মনসিংহ শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. শহীদের পিতার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of আব্দুল্লাহ আল মাহিন
Image of আব্দুল্লাহ আল মাহিন
Image of আব্দুল্লাহ আল মাহিন
Image of আব্দুল্লাহ আল মাহিন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: জুবায়ের আহমেদ

আ: আজিজ

নাজমুল ইসলাম রাজু

শহীদ জাকির হোসেন

মো: সামিদ হোসেন

মো: মাছুম বিল্লাহ

কুদ্দুস মিয়া

মো: লিটন

মো:  হুমায়ুন কবির

মো: আনারুল ইসলাম

ইসমাইল

মো: কাওসার মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo