জন্ম তারিখ: ২৩ জুন, ২০০৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: ছাত্র, কাঁঠাল হাই স্কুল এন্ড কলেজ, ত্রিশাল,ময়মনসিংহ শাহাদাতের স্থান : মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়, গাজীপুর
শহীদ পরিচিতি শহীদ আসীর ইনতিশারুল হকের জন্ম ২০০৩ সালের ২৩ জুন। তার জন্মস্থান উজান বৈলর। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের ছায়া-সুনিবিড় মনোরম একটি গ্রাম উজান বৈলর। এই গ্রামের আহম এনামুল হক ও নাজমুন নাহার দম্পতির কোল জুড়ে আগমন ঘটে পরিবারের প্রথম সন্তান শহীদ ইনতিশারুল হকের। শহীদ ইনতিশারুল হক পেশায় ছিলেন ছাত্র। তিনি পড়াশোনা করতেন ত্রিশালের কাঁঠাল হাই স্কুল এন্ড কলেজে। তার পিতা এনামুল হক (৫২) পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আর্থিকভাবে তারা যথেষ্ট সচ্ছল। তার বাবার মাছ-মুরগির খাবারের ব্যবসা আছে। যেখান থেকে তাদের প্রতি মাসে আয় হয় ৫০,০০০-৬০,০০০ হাজার টাকা। তবে আন্দোলন চলাকালীন তিনি তার ব্যবসায় বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত না থাকলেও কিছু দুর্বৃত্ত তার দোকানে হামলা চালায়। তার মাতা নাজমুন নাহার (৪৫) পেশায় গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছিলেন বড়। তার আর দুই ভাইয়ের মধ্যে বাসিরুল হক মাহি (১৯) ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষের ছাত্র। আর ছোট ভাই মুবিন (১০) হিফজ সম্পন্ন করছে। শহীদ হন যেভাবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময়কার একজন প্রতিবাদী আন্দোলনকারী ছিলেন শহীদ আসীর ইনতেশার। লং মার্চ টু ঢাকা কার্যক্রমের অংশগ্রহণকারীও ছিলেন তিনি। ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন লং মার্চ টু ঢাকার ডাক দিলে শহীদ ইনতিশার তার তিন বন্ধুসহ ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। খন্ড খন্ড কিছু মিছিলেও যোগ দেন সেদিন। তাদের লংমার্চকে ব্যর্থ করে দিতে বিকাল ৪টার দিকে মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে পৌঁছালে তাদের লক্ষ্য করে বিজিবি সদস্যরা গুলিবর্ষণ করে। দুটি বুলেট বিদ্ধ হয় তার শরীরে। একটি বুলেট তার পেটের ডান দিক দিয়ে ঢুকে অপরপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। আরেকটি বুলেট তার ডান হাতের বাহুতে লাগে। সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গাড়ির অভাবে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই রক্ত সাগরে ভেসে গিয়ে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন প্রতিবাদী এই তরুণ। শহীদ সম্পর্কে জানা যায় আরো যা কিছু বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সমবয়সীদের সাথে সহযোগিতাপরায়ণ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মনোভাব -এই বিশেষ গুণগুলো যার সাথে যায়, তার নাম শহীদ আসীর ইনতিশারুল হক। সবার প্রিয় এই তরুণ তার পরিবারের মধ্যমণি ছিলেন। ত্রিশালের কাঁঠাল হাই স্কুল এন্ড কলেজের মেধাবী ছাত্রদের মধ্যে একজন হয়েও শেষ পর্যন্ত মা-বাবার ভবিষ্যতের দায়িত্ব বহনকারী হতে পারলেন না তিনি। সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন অধরা এক জগতে। বাশিরুল হক মাহি এবং মুবিনের আদর্শ বড় ভাই ইনতিশারের এমন চলে যাওয়া তার এলাকা, পরিবার, সহপাঠী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক শোকের আবহ তৈরি করে। আফসোসের জন্ম দেয় এই যে, যে বিজয়ের জন্য তার এত লড়াই, সে বিজয়ের পরবর্তী ভোর তার আর দেখা হলো না। সেই ভোরে শুধু কান্নার আহাজারি আর রোনাজারি উঠেছিল তার ঘরে। আকাশ ভারী হয়ে বর্ষিত হয়েছিল বৃষ্টি। পরিবারের ভবিষ্যতের সহযোগী বড় ছেলেকে হারানোর কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে তার বাবা-মায়ের আকুতি— তার হত্যাকারীদের যেন সঠিক বিচার করা হয় এবং তাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়। তারা আরো কামনা করেন, মহান আল্লাহ তা’আলা যেন শহীদ আসীর ইনতিশারুল হককে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করেন। শহীদ-স্বজনদের অনুভব-অনুভূতি শহীদ সম্পর্কে তার চাচা মো. নাজমুল হক বলেন, ইনতিশার ছোটবেলায় এক পারা কুরআন হেফজ করেছিল। তার সমবয়সীদের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল এবং সে ভ্রমণপ্রিয় ছিল। সবার সাথে ভালো ব্যবহার, মানুষকে সহযোগিতা করা এবং প্রতিবাদী মানসিকতা -এগুলো তার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ছিল। শহীদের ছোটবেলার বন্ধু ও আন্দোলনের সহযোগী মোঃ মেহেদী হাসান ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে জানান, ৫ আগস্ট সকাল ১১ টায় তারা একটা সিএনজি নিয়ে ত্রিশাল থেকে মাওনা পর্যন্ত যায় এবং সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেয়। এ সময় বিজিবি, ছাত্রদের প্রতিহত করার জন্য নির্বিচারে গুলি ছোঁড়ে। এতে অনেক ছাত্র গুলি বিদ্ধ হওয়াতে ছাত্ররা আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। বিকাল ৩ টায় শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে তারা আরো সমাবেশ মিছিল করতে থাকে। তখনও বিজিবি ক্রমাগত গুলি চালাতে থাকে। ঘটনাস্থলেই ইনতিশার গুলিবিদ্ধ হয়। গাড়ি না থাকার কারণে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে একটি মাইক্রোবাস পাওয়া গেলেও আর লাভ হয়নি। মাইক্রোবাসে করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারের নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া। এক নজরে শহীদের তথ্যাবলিপূর্ণ নাম : আসীর ইনতিশারুল হক জন্ম তারিখ : ২৩.০৬.২০০৩ শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়, গাজীপুর, ৫ আগস্ট’ ২০২৪, বিকাল ৪টা আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ ঘাতক : বিজিবি সমাধিস্থল : উজান বৈলর, ত্রিশাল পেশা : শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : কাঁঠাল হাই স্কুল এন্ড কলেজ, ত্রিশাল পিতা : আ হ ম এনামুল হক মাতা : নাজমুন নাহার স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: উজান বৈলর, ইউনিয়ন: বৈলর, থানা: ত্রিশাল, জেলা: ময়মনসিংহ ভাইবোন : ২ ভাই। বাশিরুল হক মাহি (শিক্ষার্থী), মুবিন (হিফজ বিভাগ)