জন্ম তারিখ: ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৮৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: দর্জি শাহাদাতের স্থান : উত্তরা, ঢাকা
শহীদ নাজমুল ইসলাম রাজু জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলার মুন্সিবাড়ি গ্রাম। সুজলা সুফলা এই গ্রামটি ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালি থানার সিটি ইউনিয়নে অবস্থিত। এই গ্রামের মো: নিলু এবং মোসা: সাজেদা বেগমের ঘর আলোকিত করে আগমন ঘটে নাজমুল ইসলাম রাজুর। শহীদ নাজমুল ইসলাম রাজু পেশায় ছিলেন দর্জি। ঢাকার উত্তরায় একটি টেইলার্সে তিনি দর্জির কাজ করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতেন। শহীদ নাজমুল ইসলামের পরিবারে বাবা-মা, স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। শহীদ রাজুরা দুই ভাই। বড় ভাইয়ের সংসার আলাদা। শহীদ নাজমুল ইসলাম রাজুর পিতার কোনো জমিজমা নেই। তাই নিজ দেশে পরবাসীর মতো নিজ গ্রামে তাকে ভাড়া বাসায় থাকতে হতো। তার মৃত্যুর পর তার বাবা-মা, স্ত্রী এবং কন্যা তার বড় ভাইয়ের বাড়িতে উঠতে বাধ্য হয়েছেন। যেখানে তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে এই ৭ জনের পরিবারটি খুবই অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। নাজমুল ইসলাম রাজু শহীদ হন যেভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত বিজয়ের দিন ৫ আগস্ট ২০২৪। এই দিন দুপুর ২ টায় শহীদ নাজমুল ইসলাম রাজু তার স্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বলেন। তিনি স্ত্রীকে কিছু টাকার জন্য কল দিয়েছিলেন, যাতে উত্তরা থেকে বাড়িতে পৌঁছাতে পারেন। এর কিছুক্ষণ পর ঢাকাসহ সারা দেশে শেখ হাসিনার বিজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় রাস্তায় মহল্লায় মহল্লায় জনসাধারণ বেরিয়ে আসে এবং বিজয় উল্লাস করতে থাকে। সেদিন উত্তরাতেও মানুষের ঢল নামে। বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে শহীদ নাজমুল ইসলাম রাজু বিজয় মিছিলে অংশ নিতে এবং সার্বিক পরিস্থিতি দেখার জন্য রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। হাসিনা পালানোয় খন্ড খন্ড আনন্দ মিছিলে মানুষ স্বৈরাচার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে সেই মিছিলে পুলিশ অতর্কিত আক্রমণ চালায়। গুলি ছোঁড়ে এলোপাথাড়ি। একটা গুলি এসে লাগে শহীদ নাজমুল ইসলামের শরীরে। নিমিষেই রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন শহীদ রাজু। প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তার। কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান রাজু যখন ইন্তেকাল করেন, তখন আনুমানিক ৫টা (৪:৫৭) বাজে। এদিকে রাজুর পরিবার তার কোনো খোঁজ পাচ্ছে না। সংশয় জেগে ওঠে তার স্ত্রীর মনে। হাহাকার করে ওঠে তার বুকটা। কোনোভাবে রাজুর খোঁজ না পাওয়ায় ছুটে আসেন উত্তরাতে। খুঁজতে থাকেন এ হাসপাতাল, সে হাসপাতাল। ততক্ষণে তার মনে উঠে গেছে বেদনার ঝড়। যে ঝড় ভেঙ্গেচুরে চুরমার করে দিচ্ছে তার অন্তর। স্বামী হারানোর বেদনা ততক্ষণে তিনি টের পাচ্ছেন। অবশেষে শহীদ নাজমুল ইসলাম রাজুর মৃতদেহ পাওয়া যায় কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের মর্গে। শহীদ নাজমুল ইসলাম রাজু সম্পর্কে আরো যা জানা যায় শহীদ নাজমুল ইসলাম রাজু থাকতেন ময়মনসিংহ শহরের মুন্সিবাড়ি এলাকায়। তাদের কোনো জায়গা-জমি অর্থ সম্পদ না থাকায় নিজ দেশে পরবাসীর মতো নিজ গ্রামেই ভাড়া বাসায় থাকতে হতো। ঢাকার উত্তরায় একটি টেইলার্সে দর্জির কাজ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কায়ক্লেশে দিন পার হতো তার। কিন্তু কে জানত, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেদিন মানুষ হাসছে বিজয়ের হাসি, সেদিনই তার জীবনের ইতি ঘটবে! স্বৈরাচার পতনে নতুন স্বাধীনতায় বিজয়ের উল্লাস দেখতে বেরিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। পরিবারকে ব্যথিত করে, একমাত্র মেয়েকে এতিম করে চলে যান না ফেরার দেশে। তার মৃত্যুতে পরিবার এবং এলাকাবাসী গভীরভাবে শোকাহত। একই সাথে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চায়। তার পরিবারকে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতা করা হয়, সেটিও চায় তারা। শহীদ স্বজনের অনুভব-অনুভূতি শহীদ নাজমুল ইসলাম রাজু সম্পর্কে তার এক এলাকাবাসী জসিম মিয়া বলেন, তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। এক নজরে শহীদ নাজমুল ইসলাম রাজু পূর্ণনাম : মো: নাজমুল ইসলাম রাজু জন্ম তারিখ : ২৫.১২.১৯৮৪ শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : উত্তরা, ঢাকা ৫ই আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫টা আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ ঘাতক : পুলিশ সমাধিস্থল : কালিবাড়ি গোরস্থান, ময়মনসিংহ পেশা : দর্জি প্রতিষ্ঠান : উত্তরার একটি টেইলার্স, ঢাকা পিতা : মো: নিলু মাতা : মোসা: সাজেদা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মুন্সি বাড়ি, ইউনিয়ন: সিটি, থানা: কোতোয়ালি, জেলা: ময়মনসিংহ স্ত্রী-সন্তান : স্ত্রী ও ১ কন্যা সন্তান ভাইবোন : বড় ভাই ১ জন, তিনি শ্রমজীবী শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. একখণ্ড জমি ও একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন ২. এতিম বাচ্চার ভরণ পোষণ গ্রহণ করা প্রয়োজন ৩. এককালীন আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন ৪. স্ত্রীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন