জন্ম তারিখ: ৬ মে, ১৯৯৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: মুয়াজ্জিন, ব্যবসা শাহাদাতের স্থান : বিএনএস সেন্টার উত্তরা, ঢাকা
শহীদ আমিরুল ইসলাম ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল ইউনিয়নের ছলিমপুর গ্রামে ১৯৯৭ সালের ৬ মে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃত জাফর আলী। মাতা মৃত হাজরা খাতুন। পেশায় শহীদ আমিরুল ইসলাম মোয়াজ্জিন ও ফল বিক্রেতা ছিলেন। উত্তরা আজামপুর কাঁচাবাজার রেলগেট মসজিদে তিনি মোয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন এবং এ বাজারেই দিনের বাকি অংশে তিনি ফল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শহীদ আমিরুল ইসলামের পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী এবং ৩ সন্তান। ২ মেয়ে এবং ১ ছেলে। বড় মেয়ে ৪ বছর বয়সী তুয়া, মেজ মেয়ে আড়াই বছর বয়সী তুষা এবং একমাত্র ছেলে সন্তান ১ বছর বয়সি মুহাম্মদ মুয়াজ। তার স্ত্রী প্রতিবন্ধী হওয়ায় শিশু সন্তানদের লালনপালন করতে তার বেগ পেতে হতো। এখন তার মৃত্যুতে তার স্ত্রী শিশু সন্তানদের নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এর ওপর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নিহত হওয়ায় তার অসহায় স্ত্রী এবং শিশু সন্তানদের দুর্দশার সীমা নেই। উল্লেখ্য শহীদ আমিরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী। যেভাবে শহীদ হন আমিরুল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে তখন উত্তাল গোটা দেশ। রংপুরের আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে শহীদ হচ্ছিল অনেকেই। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল সারা দেশে ছাত্রদের আন্দোলন সংগ্রাম। তেমনই এক সংগ্রামমুখর দিন ১৮ জুলাই ২০২৪। এই দিন শহীদ আমিরুল ইসলাম বেলা তিনটার দিকে তার পরিবারের সাথে আর্থিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন। এরপর উত্তরার বিএনএস সেন্টারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে রাজপথে হাঁটছিলেন। একদিকে নিরীহ ছাত্রদের মুহুর্মুহু স্লোগানে উত্তাল, আরেকদিকে অবস্থান স্বৈরাচার খুনি হাসিনার পোষা পুলিশ বাহিনী। সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটের দিকে হঠাৎ ছাত্রদের মিছিলে এই পুলিশ বাহিনী গুলি ছোঁড়ে। হিংস্র পুলিশের ছোঁড়া দুটো বুলেট শহীদ আমিরুল ইসলামকে মারাত্মকভাবে জখম করে। একটি বুলেট তার চোখ দিয়ে ঢুকে মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়, আরেকটি বুলেট তার মুখ ভেদ করে মাথার ভেতরে গেঁথে যায়। এমতাবস্থায় তিনি তার বাড়িতে পরপর তিনটি নাম্বারে কল করেন, কিন্তু কল রিসিভ হয়নি। অতঃপর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরিবার যখন তার কল দেখে, তখন অনেক বার কল করা হয় তার নাম্বারে। কিন্তু তার কোনো খোঁজ মেলে না। তারপর থেকে তার পরিবার তাকে হন্যে হয়ে খোঁজে সারা ঢাকা শহর। কিন্তু ৩ দিন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অবশেষে ২১ জুলাই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের মর্গে তার লাশের সন্ধান মেলে। লাশ নেওয়ার জন্য মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার চেষ্টা করলেও তার পরিবারকে চরম হয়রানির শিকার হতে হয়। শহীদ আমিরুল ইসলাম সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য শহীদ আমিরুল ইসলাম জামায়াতে ইসলামের একজন সক্রিয় কর্মী হওয়ায় তার জীবন ছিল ইসলামের আদর্শে আলোকিত। পাশাপাশি তিনি মসজিদের মোয়াজ্জিন হওয়ায় প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়া মিস হতো না। তিনি নিজের জীবনকে ইসলামের আদর্শে গড়ে তোলার পাশাপাশি নিজের সন্তানদেরকেও ইসলামী আদর্শে, ইসলামী নিয়ম-কানুনে বেড়ে তুলছিলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামের বিভিন্ন মিটিং প্রোগ্রামে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। জামায়াতে ইসলামীকে আদর্শ ইসলামিক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে চেষ্টা করতেন। তিনি যুগের বৈরী হওয়ায় গা ভাসানোদের দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে ইসলামের সঠিক পথে আনার চেষ্টা করতেন। চেষ্টা করতেন আল্লাহর গাফেল বান্দাদেরকে আল্লাহ তায়ালার মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য বোঝাতে। তিনি মানুষদেরকে আহ্বান করতেন নবী মোহাম্মদ (সা)-এর প্রদর্শিত আল্লাহর পথে অটল থাকতে। শহীদ আমিরুল ইসলাম সম্পর্কে তার জেঠা মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, শহীদ আমিরুল ইসলাম গ্রামের ভালো মানুষের মধ্যে একজন ছিলেন। সবসময় গ্রামবাসীর পছন্দের মানুষ ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করতেন। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন। শহীদ আমিরুল ইসলাম ঢাকা শহরের উত্তরায় অবস্থিত আজমপুর কাঁচাবাজার রেলগেট মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যা পেতেন, তা দিয়ে তার স্ত্রী ও ৩ সন্তানের ভরণপোষণ যোগাতে খুবই বেগ পেতে হতো। তাই সময় পেলে বাড়তি আয়ের জন্য তিনি ফলের ব্যবসা করতেন। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কষ্ট করে তিনি তার সংসার আল্লাহ তা’লার দয়ায় চালিয়ে নিচ্ছিলেন। আজমপুর কাঁচাবাজার রেলগেট মসজিদের মুসল্লীগণের সাথে তার অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল আমিরুলের। তিনি ছিলেন একজন ভালো চরিত্রের মানুষ। গ্রামবাসীর পছন্দের এই মানুষটি প্রতিবন্ধী স্ত্রী এবং তিন সন্তান নিয়ে কোনোমতে দিনাতিপাত করছিলেন। কিন্তু ২৪-এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির পরিবার হঠাৎ করেই অন্ধকারে তলিয়ে গেল।পুরো গ্রামের মানুষ শহীদ আমিরুল ইসলামের মৃত্যুতে শোকাহত। একজন ভালো মনের অধিকারী মানুষের জীবনে এমন দুর্ভোগ আসা কেউই মেনে নিতে পারেননি। শহীদ আমিরুল ইসলামের পরিবার এবং গ্রামবাসী তার মৃত্যুর সঠিক বিচার চায়। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া প্রয়োজন ২. এতিম বাচ্চাদের ভরণপোষণ গ্রহণ করা প্রয়োজন ৩. নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি পূর্ণনাম : আমিরুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ০৬.০৫.১৯৯৭ শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : বিএনএস সেন্টার উত্তরা, ঢাকা, ১৮ জুলাই, ২০২৪’ সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিট আঘাতের ধরন : মাথায় গুলিবিদ্ধ ঘাতক : পুলিশ দাফনস্থল : ধুরধরিয়া পশ্চিমপাড়া, ময়মনসিংহ পেশা : মুয়াজ্জিন ও ফল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান : উত্তরা আজমপুর কাঁচা বাজার রেলগেট মসজিদ পিতা : মৃত জাফর আলী মাতা : মৃত হাজেরা খাতুন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ছলিমপুর, থানা: ত্রিশাল, জেলা: ময়মনসিংহ স্ত্রী-সন্তান : স্ত্রী (প্রতিবন্ধী) ও ৩ পুত্রকন্যা। পুত্র মুয়াজ(১), বড়কন্যা তুয়া (৪), ছোটো কন্যা তুষা (২.৫)