Image of তোফাজ্জল হোসেন খান

নাম: তোফাজ্জল হোসেন খান

জন্ম তারিখ: ১৭ আগস্ট, ১৯৯৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: স্টিল বিল্ডিং মিস্ত্রী শাহাদাতের স্থান : মিরপুর, ঢাকা

শহীদের জীবনী

“এমনই দৃঢ়চেতা মানসিকতা ব্যক্ত করে মিছিলে যাওয়া ছেলেটি সত্যি সত্যি মরে গেলেন! সত্যি সত্যি আর মিছিল থেকে ফিরে আসেননি! তিনি গুলি খেয়ে শহীদ হওয়ার আগের দিন অনেকগুলো রাবার বুলেটে আহত হয়েছিলেন। তবুও থেমে যাননি, দমে যাননি। পরদিন বুক চিতিয়ে আবারও গিয়েছিলেন স্বৈরাচার তাড়ানোর আন্দোলনে” “মরে গেলেও মিছিল থেকে ফিরব না।” শহীদ পরিচিতি শহীদ তোফাজ্জল হোসেনের জন্ম ১৭ আগস্ট ১৯৯৫। তার পিতা মৃত নিকবর আলী, মাতা মমতাজ বেগম। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকযান গ্রামে। পেশাগত জীবনে তিনি স্টিল বিল্ডিংয়ের মিস্ত্রী ছিলেন। কাজ করতেন ঢাকার মিরপুরে। শহীদ তোফাজ্জল হোসেন ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তার ছোট ভাই প্রতিবন্ধী। ব্যক্তি জীবনে তোফাজ্জল হোসেন বিবাহিত ছিলেন। তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন হামিদা নামের এক নারীর সাথে। তাদের ঘর আলোকিত করে ১০ মাস আগে আসে এক শিশুকন্যা। নাম তাশফিয়া। যে বাবা কী জিনিস তা বোঝার আগেই নিষ্ঠুর এক বাস্তবতায় এতিম হয়ে গেল। আর শোকাহত স্ত্রী হামিদা অকালে বিধবা হলেন। জীবন প্রদীপ যেভাবে নিভলো শহীদ তোফাজ্জলের তোফাজ্জল হোসেনকে পরিবারের একজন নক্ষত্র বলে সম্বোধন করলে ভুল হবে না। প্রতিবন্ধী ভাই, মা আর স্ত্রী-সন্তানের একমাত্র আশার প্রদীপ ছিলেন তিনি। পরিবারের যাবতীয় ভার বহনের জন্য নিজের সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করতেন তিনি। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই এই প্রদীপ নিভে যাবে, কে জানতো! ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে তোফাজ্জল হোসেন একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন। তিনি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সবসময়। তিনি বলতেন, 'মরে গেলেও মিছিল থেকে ফিরবো না।' ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচার পতনের আনন্দে সারাদেশের মতো ঢাকার মিরপুরেও চলছিল আনন্দ মিছিল। খণ্ড খন্ড মিছিল নিয়ে ছাত্র জনতা কাঁপাচ্ছিলেন ঢাকার রাজপথ। তাদের মুখে ছিল বিভিন্ন স্লোগান। এই মিছিল চলাকালীন বিকেল ৪টায় তিনি পুলিশের গুলিতে মর্মান্তিকভাবে আহত হন। ৩টি বুলেট তার মাথায়, গালে এবং ঘাড়ে লাগে। শুধু তাই নয়, ২টি রাবার বুলেটও তার শরীরে বিদ্ধ হয়। স্বজনেরা জানান, গত ৫ আগস্ট বিকেল ৪ টার সময় মিরপুর-২ স্টেডিয়াম এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তোফাজ্জল হোসেন। সেদিন সন্ধ্যা থেকে তোফাজ্জলের মুঠোফোন বন্ধ পাচ্ছিলেন স্বজনেরা। এরপর সহকর্মী ও স্বজনেরা তোফাজ্জল হোসেনকে অনেক খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। তারা মিরপুর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে তোফাজ্জলের ছবি দেখালে হাসপাতালের লোকজন তাকে চিনতে পারেন। স্থানীয় হাসপাতালের সূত্র মতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়ে তোফাজ্জলের লাশ পাওয়া যায়। স্বজনেরা জানতে পারেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর স্থানীয় লোকজন তোফাজ্জলকে মিরপুরের সেই হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়না তদন্তের জন্য পাঠান। ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাতনামা হিসেবে তোফাজ্জল হোসেনের লাশ ৫ আগস্ট রাতে ময়না তদন্তের জন্য গ্রহণ করেন। মরদেহের বুকে লাগানো টোকেন থেকে তারা নিহত হওয়ার সময়টি জানতে পারেন। পরদিন ৬ আগস্ট বিকেলে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়াই তার লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। শহীদ তোফাজ্জল সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য শহীদ তোফাজ্জল হোসেন জামায়াতে ইসলামীর একজন একনিষ্ঠ সমর্থক, মিষ্টভাষী, এলাকার প্রিয় পাত্র এবং সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তার এমন বিদায় পরিবার এবং আত্মীয় কারো জন্যই মেনে নেওয়া সহজ ছিল না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার এই ব্যক্তি আওয়ামী স্বৈরাচারের দাবানলে চাপা না পড়ে সব সময় অগ্রসর ছিলেন সামনের সারিতে। তার 'মরে গেলেও মিছিল থেকে ফিরবো না' এই কথা আমাদের সেটাই জানান দেয়। ‘২৪ এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের লড়াইয়ে সবসময় তিনি এগিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের সামনে সব শেষ হয়ে যায়। ৫ আগস্ট বিকাল ৪ টায় মিরপুরে আন্দোলনরত অবস্থায় তার জীবন প্রদীপ নিভে যায়। তার একমাত্র সন্তান ১০ মাস বয়সী তাসফিয়া বাবার খুব আদরের মেয়ে ছিল। সে বাবা কি জিনিস বোঝার আগেই তাকে ছেড়ে গেছেন বাবা তোফাজ্জল। তোফাজ্জলের স্ত্রী হামিদা খাতুন বলেন, "৪ আগস্ট রাতেও রাবার বুলেট খেয়ে আসার পর কথা হয়েছিল। তখন বলেছিল, 'আমি যদি মরে যাই তাহলে আমার সন্তানকে দেখে রাখবে না?' ৫ আগস্ট বেলা ৩ টার দিকে সর্বশেষ আমার সাথে কথা হয়। বলেছিল স্টেডিয়ামের মধ্যে আছে। আমি তাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলি। চলে যাবে বলেছিলও। রাতে কথা বলবে বলে কথা দিয়েছিল। কিন্তু সেই কথা আর রাখতে পারেনি।"স্ত্রী হামিদা খাতুন আরও বলেন, 'স্বামী আমাদের অথৈ সাগরে ফেলে চলে গেছে। মেয়ে তার বাবার জন্য কান্নাকাটি করে। ব্যানারে থাকা ছবি দেখে বাবাকে ধরতে চেষ্টা করে। বাবাকে ডাকে। সে (তোফাজ্জল) সবসময় আমার কথা শুনলেও সেদিন আমার কথা না শুনে আন্দোলনে যায়।' তোফাজ্জলের বড় ভাই মোফাজ্জল হোসেন খান ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় কাজ করতেন। তিনি বলেন, 'আন্দোলনের শুরু থেকেই অংশ নিচ্ছিল তোফাজ্জল। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার আগের দিন শরীরের বিভিন্ন অংশে ৭টি রাবার বুলেট লেগেছিল। পরদিন আবার মিছিল করতে গেলে পেছন দিক থেকে গুলি লাগে। মাথার পেছনে দুটি গুলি লেগে একটি বেরিয়ে গেলেও অন্যটি আটকে ছিল।' তিনি আরো বলেন, 'গুলি লাগার পরপরই আমার ভাই মারা গিয়েছে বলে শুনেছি। ৬ আগস্ট ঢাকা মেডিকেলের মেঝেতে শোয়ানো অবস্থায় তার লাশ পাই। তোফাজ্জলের সঙ্গে মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও টাকা কিছুই পাওয়া যায়নি।' তোফাজ্জল হোসেন খান গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় বড় ভাই মোফাজ্জল হোসেন খান বাদী হয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৭ আগস্ট একটি মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরো ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মোফাজ্জল হোসেন বলেন, 'ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য মামলা করেছি।' সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে শোকে মূহ্যমান পরিবারের আক্রোশ এবং দাবি এই যে, শহীদ তোফাজ্জলের হত্যাকারীদের যেন বিচার করা হয় এবং তাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়। একই সাথে তারা আর্থিকভাবে দুরবস্থায় থাকার দরুণ সরকারিভাবে সহযোগিতাও খুব প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন ২. স্ত্রী ও এতিম বাচ্চার ভরণপোষণ প্রয়োজন এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : তোফাজ্জল হোসেন খান জন্ম তারিখ : ১৭.০৮.১৯৯৫ শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : মিরপুর, ঢাকা; ৫ই আগস্ট, ২০২৪; বিকাল ৫টা আঘাতের ধরন : মাথায় গুলিবিদ্ধ ঘাতক : পুলিশ দাফনস্থল : ভালুকযান, ময়মনসিংহ পেশা : স্টিল বিল্ডিং মিস্ত্রী পিতা : মৃত নিকবর আলী মাতা : মমতাজ বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ভালুকযান, থানা: ফুলবাড়িয়া, জেলা: ময়মনসিংহ স্ত্রী-সন্তান : স্ত্রী হামিদা খাতুন (২৫), গৃহিণী. ১ কন্যা, তাসফিয়া (১০ মাস)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of তোফাজ্জল হোসেন খান
Image of তোফাজ্জল হোসেন খান
Image of তোফাজ্জল হোসেন খান
Image of তোফাজ্জল হোসেন খান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: লিটন

মো:  হুমায়ুন কবির

মো: মোবারক হোসেন

মো: জাহিদুল হাসান

মো: শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন

মো: তরিকুল ইসলাম রুবেল

মো: রুবেল

মো:  শাকিবুল হাসান সাজু

মো: আলি হুসেন

সাফওয়ান আখতার সদ্য

সাইফুল ইসলাম (সেকুল)

মো: সবুজ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo