Image of মো: হাফিজুল ইসলাম

নাম: মো: হাফিজুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১৪ অক্টোবর, ১৯৯৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: গার্মেন্টস কর্মী শাহাদাতের স্থান : মির্জাপুর, টাঙ্গাইল

শহীদের জীবনী

ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ছায়া সুনিবিড় শান্ত সবুজ এক গ্রাম নাওগাঁও। এই গ্রামে বাস করতেন মো: শহীদুল্লাহ ও সজিলা খাতুন নামে এক দম্পতি। সেই দম্পতির ঘর উজালা করে কোল জুড়ে সুন্দর একটি দিনে জন্ম হয় শহীদ হাফিজুল ইসলামের। তার জন্মের সেই দিনটি ছিল ১৯৯৯ সালের ১৪ অক্টোবর। সেদিনের সেই ছোট্ট শিশু হাফিজুল ইসলাম পিতামাতার হাত ধরে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠে এক সময় যৌবনে পদার্পণ করেন। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রবেশ করেন চাকরি জীবনে। পেশাগত জীবনে তিনি গার্মেন্টস কর্মী ছিলেন। কাজ করতেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে একটা গার্মেন্টসে। এই কাজের অর্থ দিয়েই চলতো তার পরিবার। তার স্ত্রীর নাম আকলিমা আক্তার আঁখি। বয়স মাত্র ২০ বছর। অকালে বিধবা হওয়া এই নারী এখনও শোকে পাথর হয়ে আছেন। এক কন্যা সন্তান আছে তার। নাম সুমাইয়া আক্তার লাবিবা। মাত্র ৪ বছর বয়স তার। এই বয়সেই সে এতিম হলো। বাবার কথা মনে হলে তার ছোট্ট বুকটা ভেঙে যায়। তীব্র বেদনায় চোখের কোণ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। শহীদ হাফিজুল ইসলামের উপার্জনেই পরিবার চলত। তার মৃত্যুর পর নিঃস্ব-অসহায় স্ত্রী এবং কন্যা তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। শহীদ হাফিজুলের কোনো জায়গা জমি নেই, তাই তার স্ত্রী এখন তার বাবার বাড়িতেই থাকেন। যেভাবে শহীদ হন হাফিজুল ইসলাম জুলাইয়ে সারাদেশ উত্তাল ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবি ছিল তাদের। কিন্তু সরকার গড়িমসি করে তাদের যৌক্তিক দাবি মানতে নারাজ। এমতাবস্থায় ছাত্ররা তীব্র আন্দোলনে যায়। এই তীব্র আন্দোলন দমাতে স্বৈরাচারী গণখুনি হাসিনা তার পেটোয়া পুলিশ বাহিনী ও সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ লেলিয়ে দেয় সাধারণ নিরীহ ছাত্রদের পিছনে। ১৬ জুলাই পুলিশ গুলি করে হত্যা করে আবু সাঈদসহ আরো পাঁচজনকে। এরপর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ক্রমান্বয়ে ৯ দফা দাবি থেকে দাবি গিয়ে দাঁড়ায় এক দফায়। এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ। ইতোমধ্যেই সারা দেশের আনাচে-কানাচে আন্দোলনের ডঙ্কা বেজে গিয়েছে। ছাত্রদের পাশাপাশি সারা দেশের আপামর সাধারণ জনতা যে যেভাবে পেরেছে আন্দোলনে এসে শরিক হয়েছে। একটাই উদ্দেশ্য, স্বৈরাচার খেদাও! গণখুনি খেদাও! অত্যাচারী জালিম হাসিনা খেদাও! ছাত্র জনতার এই গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত বিজয়ের একদিন আগে, ৪ আগস্ট ২০২৪। তিনি তার ডিউটি পালন শেষে বিকাল সাড়ে ৪টায় রাস্তায় বের হন এবং তখনই তার স্ত্রীর সাথে কথা বলেন। ওদিকে ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলন চলছিল রাজপথে তখন। তাদেরকে দমাতে ছাত্রলীগ এবং পুলিশ বাহিনী অবস্থান নিয়েছিল একপাশে। আকাশ বাতাস ধ্বনিত হয়ে মুহুর্মুহু স্লোগানে এগিয়ে চলছিল মিছিল। সেখানে ছিল শহীদ হাফিজুল ইসলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে পুলিশ বাহিনী আর ছাত্রলীগের ক্যাডাররা গুলি ছোঁড়ে ছাত্র-জনতার ওপর। অসংখ্য গুলি এসে ঝাঁঝরা করে দেয় হাফিজুল ইসলামের পুরো শরীর। ঘটনাস্থলেই নেতিয়ে পড়েন তিনি এবং মুহূর্তকাল পর ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। বিকাল সাড়ে চারটায় স্ত্রীর সাথে কথা বলার পর টানা ২ দিন তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ঘরে সবাই ছিলেন আতঙ্কিত। অজানা আশঙ্কায় ছিলেন শংকিত। কেননা তারা জানতেন না তার সাথে কি হয়েছে। হাসপাতালে হাসপাতালে খোঁজা হয় তাকে। অবশেষে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। দেখা যায়, তার শরীরে অসংখ্যগুলির ছিদ্র। কান, পেট, ডান হাত বুলেটের আঘাতে ছিন্নভিন্ন, রক্তাক্ত। পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিলেন যিনি, স্ত্রী সন্তানের একমাত্র সহায় ছিলেন যিনি, সেই হাফিজুল ইসলাম এই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য শতাব্দীর এক নিকৃষ্ট স্বৈরশাসককে তাড়াতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে শহীদ হয়েছেন। এই দেশ এই জাতি এসমস্ত তাজা প্রাণদের ভুলবে না কখনো ইনশাআল্লাহ। শহীদ সম্পর্কে আরো যা জানা যায় সৎ, ধার্মিক এবং নিষ্ঠাবান একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন শহীদ হাফিজুল ইসলাম। পরিবারের উপার্জনকারী একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন তিনি। বাবা-মা, স্ত্রী আকলিমা আক্তার এবং এক কন্যা সুমাইয়া আক্তার লাবিবার ভরণপোষণের একমাত্র ভারবাহক ছিলেন তিনি। নিজের সাধ্যমতো পরিবারের সব চাহিদা পূরণের চেষ্টা করেছেন শহীদ হাফিজুল ইসলাম। একজন গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে নিজের সবটুকু দিয়ে পরিবারকে আগলে রাখতে চেয়েছিলেন সবসময়। কিন্তু জীবন তার সহায় হলো না। গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার উপর ঘাতক পুলিশ এবং কুখ্যাত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলার মধ্যে পড়ে শহীদ হন হাফিজুল ইসলাম। তার শহীদ হওয়ার পর পরিবারের সামনে ঘনঘোর অন্ধকার নেমে আসে। শোকে মূহ্যমান হয়ে যায় সকলে।পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এলাকাবাসীর সাথে নমনীয় এবং নিজ পরিবার সম্পর্কে দায়িত্ববোধসম্পন্ন হাফিজুল ইসলামের এমন করুণ মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারেননি। পরিবারের অশ্রু যেন থামছেই না। পরিবারের এই দায়িত্বশীলকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে যায় তার স্ত্রী এবং কন্যা। তাদের দাবি, শহীদ হাফিজুল ইসলামের হত্যাকারীদেরকে সনাক্ত করে সঠিক বিচার করা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করা, যাতে আগামী জীবনে তাদের দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করতে অন্তত কিছুটা সহায়তা হয়। শহীদ হাফিজুল ইসলাম আর বেঁচে নেই, কিন্তু তার গল্প বেঁচে থাকবে চিরকাল। তার রক্তাক্ত দেহ, তার সংগ্রাম, তার ত্যাগ -এগুলো সবই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মশাল হয়ে জ্বলবে। এই মশাল ন্যায়বিচারের পক্ষে লড়াই করা নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন ২. স্ত্রী ও এতিম বাচ্চার ভরণপোষণ প্রয়োজন ৩. স্ত্রী সেলাই মেশিনের কাজ জানে। তাকে সেলাই মেশিন দেওয়া যেতে পারে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি পূর্ণনাম : হাফিজুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ১৪.১০.১৯৯৯ শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : মির্জাপুর, টাঙ্গাইল, ৪ আগস্ট’ ২০২৪, আনুমানিক বিকাল ৫টা আঘাতের ধরন : সারা শরীরে গুলিবিদ্ধ ঘাতক : পুলিশ ও ছাত্রলীগ দাফনস্থল : নাওগাঁও, ময়মনসিংহ পেশা : গার্মেন্টস কর্মী পিতা : মো: শহীদুল্লাহ মাতা : সুজিলা খাতুন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নাওগাঁও, থানা: ফুলবাড়িয়া, জেলা: ময়মনসিংহ স্ত্রী-সন্তান : আকলিমা আক্তার আঁখি (২৫), গৃহিণী, ১ কন্যা, সুমাইয়া আক্তার লাবিবা (৪)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: হাফিজুল ইসলাম
Image of মো: হাফিজুল ইসলাম
Image of মো: হাফিজুল ইসলাম
Image of মো: হাফিজুল ইসলাম
Image of মো: হাফিজুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

রাজু

মো: আনারুল ইসলাম

মো: জিন্নাতুল ইসলাম খোকন

শহীদ জাকির হোসেন

মো: বকুল মিয়া

মো: মাসুম শেখ

নাজমুল ইসলাম রাজু

ইসমাইল

রহমত মিয়া

শাহাদাত হোসেন

 মো: রাব্বী মিয়া

মো:  উবায়দুল হক

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo