জন্ম তারিখ: ৫ ডিসেম্বর, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২২ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : আগারগাঁও নিউরো মেডিকেল হাসপাতাল, ঢাকা
শহীদ পরিচিতি ময়মনসিংহ জেলার সুজলা সুফলা একটি উপজেলা ফুলবাড়িয়া। এই ফুলবাড়িয়া উপজেলার অন্তর্গত বালুঘাট ইউনিয়নের অত্যন্ত মনোরম একটি গ্রাম সন্তোষপুর। এই গ্রামেই ২০০২ সালের ৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শহীদ রবিউল ইসলাম রকিব। তার পিতা মৃত আব্দুর রাজ্জাক একজন রিকশা চালক ছিলেন। তার মাতা জ্যোৎস্না আক্তার একজন গৃহিণী। এই দম্পতির কোল জুড়ে এসেছিলেন পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান রবিউল ইসলাম। শহীদ রবিউল ইসলামের বড় ভাই বেকার; থাকেন বাড়িতে। আর তার মা জোৎস্না আক্তার একজন অসুস্থ ব্যক্তি। পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে শহীদ রবিউল ইসলাম অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়ালেখা করতে পারেননি। সংসারের হাল ধরতে ঢাকার উত্তরায় ১৪ নং সেক্টরে সরকার মার্কেটে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ নেন তিনি। শহীদ রবিউল ইসলাম রাকিবের পারিবারিক অবস্থা তেমন ভালো না। পিতৃহীন পরিবারে অসুস্থ মা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করেন। তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার পিছনে তার উপার্জিত অর্থের অধিকাংশই ব্যয় হয়। অন্যদিকে তার বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বেকার হওয়ায় তারও তেমন কোনো ইনকাম নেই। ফলে এই পরিবারটি প্রকৃতার্থে একটি দরিদ্র পরিবার ছিল। বর্তমানে রবিউল ইসলাম রকিবের ইন্তেকালে পরিবারটি অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছে। শহীদ হওয়ার ঘটনা সারাদেশ উত্তাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে। ইতিমধ্যেই প্রতিদিন পুলিশের গুলিতে অনেকেই নিহত হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তবুও থেমে নেই আন্দোলন। প্রতিদিন যেন কয়েক গুণ হয়ে ফুঁসে উঠছিল ছাত্র-জনতা। তেমনই সংগ্রাম মুখর একটা দিনে গুলিবিদ্ধ হন শহীদ রবিউল ইসলাম রকিব। শহীদ রবিউল ইসলাম রাকিবের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে তার পরিবার তেমন কিছুই জানতেন না। ঢাকা শহরের উত্তরা ১৪ নং সেক্টরে সরকার মার্কেটের ছয় তলায় সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করতেন তিনি। সরকার মার্কেটের প্রায় অনেক কর্মচারীর মতোই শহীদ রবিউল ইসলাম রকিব ‘২৪-এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। কী রাত কী দিন, কী সকাল কী সন্ধ্যা, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের দিনগুলোতে উত্তাল ছিল পুরোটা সময়। তেমনই একটি দিন ১৯ জুলাই, ২০২৪। সময়টা রাত আনুমানিক ৮ টা। উত্তরার আজমপুর মোড় তখনো আন্দোলনে উত্তাল ছিল। সেই উত্তাল আন্দোলনে গুলিবর্ষণ করে ঘাতক পুলিশ। একটি গুলি এসে লাগে রবিউল ইসলামের মাথায়। সাথে সাথে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এভাবে সারা রাত রাস্তায় পড়েছিল শহীদ রবিউলের নিথর দেহ। শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হয় প্রচুর। পরেরদিন সকালে একজন হৃদয়বান ব্যক্তি তাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করান। শরীরের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে পরবর্তীতে সেখান থেকে শহীদ রবিউল ইসলাম রাকিবকে আগারগাঁও নিউরো মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মার্কেটের মালিকের মাধ্যমে তার পরিবার তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। শহীদ রবিউলের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম তৎক্ষণাৎ বাড়ি থেকে রওনা হয়ে হাসপাতালে পৌঁছান এবং ডাক্তারের সাথে কথা বলেন। ডাক্তার তার ভাইকে জানান যে, রবিউলের মাথার ১৫% ড্যামেজ হয়ে গেছে। এভাবে চিকিৎসারত থেকে ২২ জুলাই রাত ১১টা ৭ মিনিটে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে উড়াল দেয় শহীদ রবিউলের প্রাণপাখি। আল্লাহর জিম্মায় চলে যান তিনি। শহীদ রবিউলের মা তার প্রতি এতই স্নেহময়ী ছিলেন যে, ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে অসুস্থ মা প্রায় এক সপ্তাহ জ্ঞানহীনের মতো পড়ে ছিলেন। শহীদ সম্পর্কের আরো যা জানা যায় ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার অন্তর্গত সন্তোষপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া রবিউল ইসলাম রকিব পরিবারের একজন যোগ্য ও বিনয়ী সন্তান ছিলেন। তার পিতার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে পড়ালেখা বাদ দিয়ে নিয়েছিলেন সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি। থাকতেন উত্তরা ১৪ নং সেক্টরে। পরিবারের উপার্জনক্ষম এই চেরাগ নিভে যাওয়ার বিষাদ পরিবার সইতে পারছেন না। অধিকার সচেতন শহীদ রবিউল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে একজন অগ্রগামীর ভূমিকা পালন করেন। তিনি হয়ত পেশায় ছাত্র ছিলেন না, কিন্তু পরিবারের হাল ধরতে তার ছাত্রত্ব বিসর্জন দিতে হয়েছিল। শহীদ রবিউল ইসলাম যখন গুলিবিদ্ধ হন, তখন তার পরিবার কিছুই জানতেন না। সারারাত রাজপথে তার নিথর দেহ পড়েছিল। সে বিষয়েও পরিবার কিছুই জানতেন না। এক মানবিক ব্যক্তি পরের দিন তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন। মার্কেটের মালিকের ফোন পেয়ে তার পরিবার এই ঘটনা জানার পর শোকাহত হয়ে পড়ে। হাহাকার করে ওঠে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের বুকের ভেতর। পাগলের মতো হয়ে যান তারা।তার বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বলেন, আমার ছোট ভাই আমার খুব আদরের ছিল। আম্মা আর ছোট দুই বোনের মধ্যমণি ছিল। আমার আম্মা সবসময় অসুস্থ থাকে, তাই রবিউল আর আমাকে ছাড়া আম্মা কিছুই বুঝত না। আমার ভাইয়ের মৃত্যুতে আমাদের এতিম ভাইবোনের জন্য পৃথিবীটা আরো বেশি কঠিন হয়ে গেল। এমতাবস্থায় শহীদ রবিউলের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীর দাবি, হত্যাকারীদের যেন কঠিন বিচার হয় এবং আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। কোনো ভাই যেন ভাইকে না হারায়। কোনো বোন যেন ভাইকে না হারায়। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. মায়ের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা ২. বড় ভাইয়ের জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করা এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি পূর্ণনাম : রবিউল ইসলাম রকিব জন্ম তারিখ : ০৫.১২.২০০২ শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : আগারগাঁও নিউরো মেডিকেল হাসপাতাল, ঢাকা, ২২ জুলাই, ২০২৪; রাত ১১.০৭ মিনিট আহত হওয়ার স্থান ও সময়কাল : আজমপুর, উত্তরা; ১৯ জুলাই, ২০২৪; রাত আনুমানিক ৮ টা আঘাতের ধরন : মাথায় গুলিবিদ্ধ ঘাতক : পুলিশ দাফনস্থল : সন্তোষপুর, ময়মনসিংহ পেশা : সিকিউরিটি গার্ড পিতা : মৃত আ: রাজ্জাক তারা মাতা : জ্যোৎস্না আক্তার স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: সন্তোষপুর, ইউনিয়ন বালুঘাট, থানা: ফুলবাড়িয়া, জেলা: ময়মনসিংহ স্ত্রী-সন্তান : অবিবাহিত ভাইবোন : শহীদ ছাড়াও ১ ভাই ও ২ বোনশহীদ রবিউল ইসলামেরা ৪ ভাইবোন। বড় ভাইয়ের নাম জহিরুল ইসলাম (২৪)। বোন দুজন ছোট। প্রথম জন ইলা মনি (১৭), দ্বিতীয়জন লিয়া মনি (১৪)। দুবোনই বিবাহিত; থাকেন শ্বশুরবাড়িতে।