জন্ম তারিখ: ৪ মার্চ, ১৯৯৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২২ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: পান ব্যবসায়ী শাহাদাতের স্থান : জয়দেবপুর সদর হাসপাতাল, গাজীপুর
পুলিশের নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের শিকার হন শহীদ হুমায়ুন কবির। পুলিশের ভয়ে নিজের দোকানে শাটার টেনে আশ্রয় নেওয়া হুমায়ুন কবিরকে নিষ্ঠুর পুলিশ শাটার তুলে অনবরত গুলি করে বুক ঝাঁঝরা করে নির্দয়ভাবে হত্যা করে। জানি না এর চেয়ে নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড এই আন্দোলনে আর ছিল কিনা! শহীদ হুমায়ুন কবির জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯৭ সালের ৪ মার্চ। তার পিতার নাম হাবিবুর রহমান, মাতা ফরিদা খাতুন। বাবা মায়ের ৪ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন অনেক আদরের। শহীদ হুমায়ুন কবিরের জন্মস্থান সাভার পূর্বপাড়া গ্রাম। এই গ্রামটির অবস্থান ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানায়। শস্য-শ্যামল সবুজে ঘেরা এই গ্রামেই ৩ ভাইয়ের সাথে হেসে খেলে তার বেড়ে ওঠা। শহীদ হুমায়ুন কবির ছিলেন পেশায় পান ব্যবসায়ী। বড় ৩ ভাইয়ের সাথে গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকায় একসাথে পানের ব্যবসা করতেন। স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায়। শহীদ হুমায়ুন কবিরের স্ত্রীর নাম আয়েশা খাতুন। তার স্ত্রী বর্তমানে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এছাড়া তার ৪ বছর বয়সী জান্নাতুন্নেছা নামে এক কন্যা সন্তান আছে। শহীদ হুমায়ুন কবির আরও এক সন্তানের মুখ দেখার আশায় ছিলেন। কিন্তু অনাগত সেই সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার হায়েনারা তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিলো। অন্যদিকে মায়ের গর্ভেই এতিম হয়ে গেল অনাগত সন্তান। শহীদ হুমায়ুন কবিরের মৃত্যুর পর তার অসহায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও এতিম কন্যা গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকায় তার ৩ ভাইয়ের পরিবারে গিয়ে উঠেছেন। তার পিতামাতা থাকেন গ্রামের বাড়িতে। তাদের আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। যেভাবে নিভলো জীবন প্রদীপ ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের উপর পুলিশের হামলার অসংখ্য শিকারের মধ্যে হুমায়ুন কবিরও একজন ছিলেন। গত ২০ জুলাই বিকেলে হুমায়ুন নিজের কর্মস্থলে পান বিক্রি করছিলেন নিজের দোকানেই। এ সময় সারা রাজপথ জুড়ে চলছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন। ছাত্ররা দলে দলে মিছিল নিয়ে রাজপথ প্রদক্ষিণ করছিলেন। তার দোকানের সামনে দিয়েও চলছিল মিছিল। এ সময় আন্দোলনকারীদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে পুলিশ। তখন ভয়ে হুমায়ুন কবির এবং তার কর্মচারী হাসেম দোকানের শাটার বন্ধ করে ভিতরে আশ্রয় নেয়। সময় তখন বিকাল ৫ টা ৩০ মিনিট। পুলিশ সদস্যরা তার দোকানের সামনে আসে এবং শাটার তুলে দু'জনকেই গুলি করে। কর্মচারী হাশেমের পায়ে গুলি লাগলে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু হুমায়ুনের তলপেটে গুলি লাগায় সে দুর্বল হয়ে পড়ে। পুলিশ তখন আরো গুলি করতে থাকে। আর সেই গুলিতে হুমায়ূনের তলপেট ঝাঁঝরা হয়ে যায়। তার নিস্তেজ দেহ নেতিয়ে পড়ে দোকানের মেঝেতে। তার শরীরের সবটুকু রক্ত ঝরিয়ে সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী সেখান থেকে চলে যায়। স্থানীয়রা তড়িঘড়ি করে তাকে জয়দেবপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি শহীদ হুমায়ুন কবিরকে। সন্ধ্যা ৭টায় সেখানেই তার প্রাণবায়ু ত্যাগ হয়। শহীদ সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য শহীদ হুমায়ুন কবির ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার সাভার পূর্বপাড়া গ্রামের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে একজন ভালো মানুষ ছিলেন। বাবা মায়ের ৪ ছেলের মধ্যে অনেক আদরের একজন সন্তান ছিলেন শহীদ হুমায়ুন কবির। সংসার আর পিতামাতার প্রতি বরাবরই দায়িত্ববান ছিলেন তিনি। তার দাদার ভাষ্যমতে, তিনি এলাকাবাসী এবং পরিবারের কাছে সরল এবং কর্মঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরিবারের হাল ধরার জন্য বাকি ভাইদের সাথে তিনিও ব্যবসার কাজে নিয়োজিত হন। চেষ্টা করতেন স্ত্রী সন্তান এবং বাবা-মাকে যথেষ্ট আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার। কিন্তু হঠাৎ এই জীবনের উপর মর্মান্তিক আঘাত হানে হায়ানারূপী পুলিশ বাহিনী। থামিয়ে দেয় একটা পরিবারের স্বপ্ন এবং সাধনাকে। তার শহীদ হওয়ার পর তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ৪ বছরের এতিম শিশু সন্তানকে নিয়ে চরম নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অল্প বয়সে বিধবা হয়ে তিনি স্বামীহারার যন্ত্রণা সইতে পারছেন না। এতিম শিশু জান্নাতুন্নেছা বাবাকে হারিয়ে হয়ে পড়েছে অসহায়। বারবার বাবার মুখটাই খুঁজে ফেরে। কিন্তু তার বাবা আর ফিরে আসে না। শহীদ হুমায়ুন কবিরের বাবা-মা এবং ভাইয়েরা অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। তাদের তার বিধবা স্ত্রী এবং এতিম কন্যার দায়িত্ব নেওয়ার মানসিকতা আছে। তাই তো স্ত্রী আয়েশা খাতুন কন্যাকে নিয়ে আশার আলো দেখছেন। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. বিধবা অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও এতিম কন্যার ভরণপোষণের ব্যবস্থা প্রয়োজন ২. নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি পূর্ণনাম : হুমায়ুন কবির জন্ম তারিখ : ০৪.০৩.১৯৯৭ শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : জয়দেবপুর সদর হাসপাতাল, গাজীপুর, ২২ জুলাই, ২০২৪, সন্ধ্যা ৭টা আহত হওয়ার স্থান ও সময়কাল : সাইনবোর্ড এলাকায় নিজ দোকান, গাজীপুর, ২২শে জুলাই, ২০২৪, বিকাল ৫টা ৩০ আঘাতের ধরন : গুলিতে তলপেটে ঝাঁঝরা ঘাতক : পুলিশ দাফনস্থল : সাভার পূর্বপাড়া, ময়মনসিংহ পেশা : পান ব্যবসায়ী পিতা : হাবিবুর রহমান মাতা : ফরিদা খাতুন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: সাভার পূর্বপাড়া, ইউনিয়ন+থানা: নান্দাইল, জেলা: ময়মনসিংহ স্ত্রী-সন্তান : অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আয়েশা খাতুন, ১ কন্যা জান্নাতুন্নেছা ভাই-বোন : শহীদ ছাড়াও ৩ ভাইশহীদের জন্ম-পরিচয় ও বেড়ে ওঠা