জন্ম তারিখ: ১০ মে, ১৯৭৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: চাকরিজীবী শাহাদাতের স্থান : মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
জন্ম ও পরিচিতি শহীদ এ কে এম শহিদুল ইসলামের জন্ম ১৯৭৫ সালের ১০ মে। তার পিতা মৃত রিয়াজ উদ্দিন। মাতা মিসেস হাজেরা খাতুন। শহিদুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের মাদারীনগরে। শহিদুল ইসলাম স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তানকে নিয়ে থাকতেন যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা ১ নং গেট এলাকায়। তিনি একটি বেসরকারি ফার্নিচার কোম্পানি গধংঃবৎ জধপশং ধহফ ঋঁৎহরঃঁৎব ফ্যাক্টরিতে এগ (ভধপঃড়ৎু) পদে কর্মরত ছিলেন। তার মাসিক বেতন ছিল ৭৫,০০০ টাকা। এই অর্থে তার ২ সন্তানের পড়াশোনাসহ তার পরিবার সচ্ছলভাবেই জীবনযাপন করছিলেন। শহীদ শহিদুল ইসলামের পরিবারে তিনি ছাড়া উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আর কেউ নেই। তার মৃত্যুর পর উক্ত ফ্যাক্টরি থেকে তার ১ মাসের স্যালারি তার পরিবারকে দেয়। সেইসাথে প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকাও দেওয়া হয়। যা দিয়ে তার পরিবার ৩-৪ মাস চলতে পারবে। তারপর সহায়হীন এই পরিবার নিঃস্ব এবং অসহায় হয়ে যাবে। কেননা তার পরিবারের আয়ের আর কোনো উৎস নেই। বর্তমানে শহিদুল ইসলামের বড় ছেলে এ কে এম লতিফুল ইসলাম সরকারি তিতুমীর কলেজে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ছে। তার দ্বিতীয় ছেলে এ কে এম তাওহিদুল ইসলাম দশম শ্রেণির ছাত্র। শহিদুল ইসলামের মৃত্যুতে তার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। স্বামী হারানোর বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে তাদের পড়াশোনার খরচ, সংসারের খরচ কীভাবে নির্বাহ করবেন- শোক বেদনার সাথে সাথে সেটা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। যেভাবে শহীদ হন শহীদুল ৫ আগস্ট ২০২৪। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত বিজয়ের দিন। কোটি জনতার গণভবন অভিমুখে লংমার্চ রুখতে না পেরে স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়ে যায় ভারতে। এই খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাংলাদেশে। দেশের যে যেখানে ছিল, সে সেখান থেকেই রাজপথে নেমে আসে আনন্দ মিছিল নিয়ে। কী গ্রাম, কী শহর। কী পাড়া, কী মহল্লা। শহিদুল ইসলাম তখন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ভাড়া বাসায় বসে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে টেলিভিশনে খবর দেখছিলেন। সেনাপ্রধানের ভাষণ শুনলেন। এরপর শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে পালানোর খবরও তারা পেয়ে যান। বিজয়ের আনন্দে তারাও উল্লাস করে ওঠে রুমের ভেতর। তার বড় ছেলে লতিফুল ইসলাম মুহূর্তকাল বিলম্ব না করে রাজপথে নেমে আসেন আনন্দ মিছিলে শরিক হওয়ার জন্য। ছেলের এমন উৎসাহ দেখে কিছুক্ষণ পর শহিদুল ইসলাম নিজেও বের হয়ে যান রাস্তায়। তার উদ্দেশ্য ছিল বাইরে দাঁড়িয়ে বিজয় মিছিল দেখা। তিনি যখন বাসা থেকে বের হন, তখন বিকাল ৩ টা ৩০ মিনিট। এর ১০ মিনিট পর ৩ টা ৪০ মিনিটে তিনি যাত্রাবাড়ী বিবির বাগিচা ১ নম্বর গেটে আসেন। ঠিক তখনই পুলিশের ছোঁড়া দুটি বুলেট তার শরীরে লাগে। একটি পেটের ডান দিক দিয়ে ঢুকে বের হয়ে যায়, আরেকটি গুলি লাগে বাম পায়ের উরুতে। সেখানে লুটিয়ে পড়েন শহিদুল ইসলাম। সাধারণ জনতা তাকে ধরাধরি করে তখনই নিয়ে যায় যাত্রাবাড়ী আল করিম হাসপাতালে। ডাক্তার তৎক্ষণাৎ পায়ের বুলেটটি বের করেন। এ সময় তার বড় ছেলে লতিফুল ইসলাম ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলের সাথে গণভবনের দিকে যাচ্ছিলেন। অপরিচিত এক ব্যক্তির ফোনকলে তিনি জানতে পারেন তার বাবা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তৎক্ষণাৎ তিনি ছুটে আসেন যাত্রাবাড়ী আল করিম হাসপাতালে। গুলিবিদ্ধ বাবাকে দেখতে পান স্ট্রেচারে। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু বাইরে রাস্তাঘাট ছাত্র-জনতার দখলে থাকায় সংকটাপন্ন বাবাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই তার বাবা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পরিবারের শোকের ছায়া শহীদ এ কে এম শহিদুল ইসলামের এমন মৃত্যুতে তার পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। সন্তানেরা পরিবারের একমাত্র অবলম্বন প্রিয় বাবাকে হারানোর তীব্র যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে। স্বামী হারানোর বেদনায় শোকাহত স্ত্রী হয়ে পড়েন হতবিহ্বল। শহীদুল ইসলামের সন্তানেরা আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকলেও তিনি কখনো সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাননি। পুরো আন্দোলনে যে মানুষটা রাজপথে নামেননি, বিজয়ের দিন বিজয়োল্লাসটা এক ঝলক দেখতে গিয়ে সেই মানুষটা মুহূর্তেই লাশ হয়ে গেলেন। অদৃষ্টের কী নির্মম লিখন! তার শোকাহত ব্যথিত পরিবারের কাঁধে তার মৃত্যুতে গভীর বেদনার পাহাড় এসে চাপে। কোনো কিছুতেই যে বেদনার পাহাড় অপসারণ সম্ভব নয়। তার বড় সন্তান বলেন, "আমার বাবা ছিলেন আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। আমরা দুই ভাই এখনো পড়াশোনা করছি। পরিবারের সমস্ত খরচ আমার বাবা একাই দেখভাল করতেন। এখন আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।" তার শোকাহত স্ত্রী ও সন্তানেরা তার হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান। সেই সাথে তারা কামনা করেন, মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদের বাবাকে শহীদ হিসেবে কবুল করবেন। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। ২. বড় ছেলের জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি পূর্ণনাম : এ কে এম শহীদুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ১০.০৫.১৯৭৫ শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা; ৫ আগস্ট, ২০২৪; আনুমানিক বিকাল ৫টা আহত হওয়ার স্থান ও সময়কাল : বিবির বাগিচা ১ নং গেট, যাত্রাবাড়ী; ৫ আগস্ট, ২০২৪; বিকাল ৩টা ৪০ আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ ঘাতক : পুলিশ দাফনস্থল : মাদারীনগর, নান্দাইল, ময়মনসিংহ পেশা : চাকরিজীবী পিতা : মৃত রিয়াজ উদ্দিন মাতা : মিসেস হাজেরা খাতুন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মাদারীনগর, ইউনিয়ন: শেরপুর, থানা: নান্দাইল, জেলা: ময়মনসিংহ স্ত্রী-সন্তান : স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তান। পুত্র দুজন শিক্ষার্থী