জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: রাজমিস্ত্রী শাহাদাতের স্থান : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ
শহীদ কবির ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলার দত্তের বাজার ইউনিয়নের পাগলা থানার স্বল্প পুনিয়া গ্রামের একটি হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আব্দুর রহমান এবং জমিলা খাতুন দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে শহীদ কবির হোসাইন পঞ্চম। পরিবারের অন্যতম উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শহীদ কবির রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। শহীদের পারিবারিক অবস্থা শহীদ কবির হোসেন ছিলেন একজন পরিশ্রমী ও সৎ তরুণ, যিনি তার পরিবারের অন্যতম আয়ের উৎস। সাত ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম শহীদ কবির হোসাইন তার বৃদ্ধ পিতা-মাতা এবং পরিবারের দেখভাল করতেন। তার পিতা ৮৪ বছরের কর্মক্ষমতাহীন একজন বৃদ্ধ এবং মা বৃদ্ধা গৃহিণী। বড় ভাই অটোরিকশা চালিয়ে কোনোমতে সংসারের খরচ মেটানোর চেষ্টা করেন। কবির তার পরিবারের ঋণের বোঝা হালকা করতে এবং সংসারের অভাব-অনটন দূর করতে, দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। যদিও তাদের আয় ছিল অতি সামান্য, তবুও শহীদ কবিরের অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিবারটি কোনোরকমে টিকে ছিল। শহীদ কবির সম্পর্কে আরো কিছু কথা জীবনের কঠোর সংগ্রামের মাঝেও শহীদ কবির ছিলেন একজন উদার এবং সৎ মানুষ। বাবা-মায়ের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা এবং ভাইবোনদের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার লক্ষণীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। নিজে কষ্ট করেও তিনি পরিবারের সকলের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করতেন। তার উদারতা এবং ন্যায়ের প্রতি অঙ্গীকার ছিল দৃঢ়। কবির ছিলেন এক সাহসী যুবক, যিনি নিজের অবস্থান থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শহীদ কবিরের জীবনের ইতি ঘটে এক ভয়ংকর ঘটনার মধ্য দিয়ে। ৫ আগস্ট ২০২৪, শহীদ কবির শ্রীপুর ওয়ানদার মোড়ে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। সাধারণ মানুষের পক্ষ হয়ে সেই আন্দোলনে তিনি যোগ দেন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে। মিছিল চলার সময় হঠাৎ করে ছাত্রলীগের কিছু সদস্য বিজিবির কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে গুলি চালায়। তখন বিজিবি উত্তেজিত হয়ে গুলি চালাতে শুরু করে জনতার উপর। এই সহিংসতার মাঝেই একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় শহীদ কবির হোসাইনের মাথায়। গুলির আঘাতে গুরুতর আহত শহীদ কবিরকে তার সহযোদ্ধারা তৎক্ষণাৎ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তার অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে, তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে শহীদ কবির দুনিয়ার জীবনের সফর শেষ করে মহান প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করেন। কবিরের অকাল মৃত্যু শুধু তার পরিবারকে নয়, পুরো গ্রামকে গভীর শোকাহত করে তোলে। নিজ গ্রামেই তাকে দাফন করা হয়। আরো কিছু কথা শহীদ কবিরের এই অমূল্য আত্মত্যাগের পর, তার পরিবার এবং গ্রামবাসীরা তার হত্যার বিচার দাবি করেছেন। তারা বিশ্বাস করেন, কবিরের মৃত্যু কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এলাকাবাসী মনে করেন, কবির ছিলেন গ্রামের এক অসাধারণ সন্তান, যিনি সবসময় অন্যের সাহায্য করতেন এবং সবার প্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুতে গ্রামের মানুষ গভীর দুঃখ এবং শোক প্রকাশ করে। অনেকেই বলেছেন, লোক হিসেবে কবির ছিলেন একজন ভাল লোক এবং সবসময় গ্রামবাসীদের সাথে মিলেমিশে চলতেন এবং তাদের যেকোনো প্রয়োজনে সহযোগিতা করতেন। কবিরের বাবা-মা এবং পরিবারের জন্য এই শোক অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তার ভাই, যিনি অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের ভরণপোষণ করছেন, এখন পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়ে অত্যন্ত কষ্টে দিন পার করছেন। কবিরের বাবাও বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। কবিরের পরিবার ও গ্রামবাসীরা আজ একতাবদ্ধ হয়ে তার হত্যার সঠিক বিচার ও ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছে। তারা চান কবির হোসেনের এই বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা হোক এবং সরকার যেন এই পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের দূরবস্থা লাঘব করে। গ্রামবাসী চান, কবিরের মতো একজন ন্যায়প্রেমী যুবকের মৃত্যু যেন শুধু ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে না যায় তার মৃত্যুর যথাযথ বিচার এবং তাকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হোক। শহীদ কবির হোসেনের জীবন ও সংগ্রাম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ন্যায়বিচার ও মানবতার জন্য লড়াই করা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব। প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা। ২. শহীদের বৃদ্ধ পিতা-মাতার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা । ৩. শহীদের ইমিডিয়েট ছোট ভাইকে একটি উপার্জনের উৎস তৈরি করে দেওয়া। এক নজরে শহীদ মোহাম্মদ কবির হোসাইন নাম : কবির জন্মতারিখ : ০১/০২/১৯৯৭ পিতা : আব্দুর রহমান, বয়স : ৮৪ মাতা : জমিলা খাতুন ভাই বোন : চার ভাই তিন বোন, ভাই বোনের মধ্যে অবস্থান পঞ্চম আহত হওয়ার স্থান : শ্রীপুর ওয়ানদোর মোড়, মাওনা, গাজীপুর আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট দুপুর ২.৩০টা শাহাদাতের স্থান : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাহাদাতের তারিখ : ৮ আগস্ট, ২০২৪, সময়: ৫টা ৩০ মিনিট আঘাতের ধরণ : সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ঘাতক পুলিশ ও র্যাব এর গুলিতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত