জন্ম তারিখ: ১০ জানুয়ারি, ২০০৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: মুদী, দোকান কর্মচারী শাহাদাতের স্থান : লালমনিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের
শহীদ মো: জুবাইদ ইসলাম ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার চামরুল্লাহ গ্রামে ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো: আব্দুল আজিজ কুসুম এবং মাতা মোসা: নাছিমা আক্তারের নয় পুত্র সন্তান এবং এক কন্যা সন্তানের মধ্যে শহীদ জুবাইদ ইসলাম অষ্টম। বড় পরিবার হওয়ায় বাংলাদেশের আর দশটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মতই শহীদ জুবাইদের পরিবারেও আর্থিক অনটন সবসময় লেগেই ছিল। পিতা-মাতার একান্ত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সকল সন্তানকে পড়ালেখা করানোর সুযোগ হয়নি আর্থিক সমস্যার কারণে। ফলে অল্প বয়সেই শহীদ জুবাইদকে পরিবারের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে মুদি দোকানে কর্মরত হতে হয়। শহীদের পারিবারিক অবস্থা ১০ ভাই বোনের বিশাল পরিবারের সন্তান শহীদের বড় ভাই আমিনুল ইসলাম পড়াশোনা করেছেন, করেন শিক্ষকতা। এদের বাকি আর কোন ভাই এই পড়ালেখা করার সুযোগ পাননি। কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ দোকানে কাজ করেন, কেউ বা শ্রমিক।ছোট দুই ভাই একজন দশম শ্রেণী এবং একজন নবম শ্রেণীর ছাত্র এবং ছোট বোন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। এই পরিবারের একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন শহীদ জুবাইদ ইসলাম। অল্প বয়সেই নিজেদের এই আদরের সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই পুলিশ ছাত্রদের উপর অন্যায়ভাবে হামলা করলে, এই হামলার প্রতিবাদে ছাত্র সমাজ ২০ জুলাই কারফিউ ভঙ্গ করে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। পুলিশ এবং সরকারি দলের নেতাকর্মীদের অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদে সেদিন সারাদেশ ছিল প্রতিবাদ মুখর। ছাত্র-জনতার এই প্রতিবাদী আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী এবং পুলিশ র্যাব বিজিবি। শহীদ জুবাইদ ইসলাম সেদিন দোকান থেকে কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে পুলিশের এই নির্বিচার গুলির শিকার হন। পুলিশের নিক্ষিপ্ত বুলেট বিদ্ধ হয় তার বুকে। লাশ নিয়ে বিড়ম্বনা সন্ধ্যার দিকেই পুলিশের গুলিতে নিহত হলেও পরিবার প্রথমে তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেনি। দোকান মালিক রাত নয়টার দিকে পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর খবর জানালে তারা ছুটে আসেন। লাশ পেতেও তাদের বিভিন্ন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। লাশ পেতে পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা দাবি করে। টাকার বিনিময়ে লাশ হাতে পেলেও আবারো বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে। কারফিউ অবস্থা চলমান থাকায় এবং আন্দোলনের কারণে সাধারণ পরিবহন বন্ধ থাকায় লাশ বাসায় নিয়ে যেতে অ্যাম্বুলেন্সকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য অনেক বড় পরিমাণ। একে তো পরিবারের একজন যুবক সন্তানকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তার ওপর এই বিড়ম্বনা তাদেরকে দিশেহারা করে তোলে। আরো কিছু কথা শহীদ জুবাইদ ইসলাম এর মৃত্যুতে তার পরিবারের একটি গভীর ক্ষত তৈরি হয়। ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। যদিও শহীদ জুবাইদ একজন অল্প বয়সী যুবক ছিলেন, তথাপি পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ববোধ ছিল প্রবল। তার বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই তার মৃত্যুর পর এক ধরনের শূন্যতায় ভুগতে থাকেন। পরিবারের আর্থিক ভারসাম্যহীনতা আরও প্রকট হয়ে ওঠে এবং মানসিকভাবে তারা গভীর দুঃখের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে থাকেন। শহীদের পরিবার চায় তার হত্যাকারীদের যেন বিচার করা হয়। প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা। ২. স্কুল পড়ুয়া শহীদের তিন ভাই বোনের শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা। এক নজরে শহীদের তথ্যাবলি নাম : শহীদ মো: জুবাইদ ইসলাম জন্ম : ১০-০১-২০০৯ পিতা : মো: আব্দুল আজিজ কুসুম মাতা : মোসা: নাছিমা আক্তার ভাই বোন : নয় ভাই এক বোন, ভাই বোনের মধ্যে অবস্থান অষ্টম শাহাদাতের স্থান : শনির আখড়া ঢাকা শাহাদাতের তারিখ : ২০/০৭/২০২৪ আঘাতের ধরণ : ঘাতক পুলিশের গুলিতে পেটে বুলেট বিদ্ধ যাদের আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন : পিশাচ পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি