জন্ম তারিখ: ৯ মার্চ, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: শিক্ষক, তালিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসা শাহাদাতের স্থান : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-ঢামেক
শহীদ মো: নূরে আলম সিদ্দিকী মাদ্রাসার শিক্ষকতা করতেন। তিনি আররি নূরানী শিক্ষা শেষ করে নিজেই মাদ্রাসা চালু করেন। নাম তালিমুল মিল্লাত মহিলা মাদরাসা। পরিবারের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন। ভালোই চলছিল শহীদ মো: নূরে আলম সিদ্দিকীর ছোট্ট পরিবার। তাঁর স্ত্রী সাদিয়া ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। অনাগত সন্তান নিয়ে কত স্বপ্ন ও জল্পনা-কল্পনা ছিল তাদের! কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। দাম্পত্য জীবনের প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই ২০ জুলাই ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঘাতক পুলিশের গুলিতে শহীদ হন এই যুবক। ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক নূরে আলমের পরিবার।শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকীর বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আব্দুল হালিম। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে শহীদ নুরে আলম সিদ্দিকী পরিবারের তৃতীয় সন্তান। শহীদ নূরেআলম সিদ্দিকীর বাবা ব্যবসা করেন। তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকীর শাহাদাতের পর স্ত্রী বর্তমানে তার শ্বশুর বাড়িতে আছেন। ঘটনার বিবরণ ২০২৪-এর জুলাইয়ে সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাক পড়ার পর চারদিকে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছিল। সারা দেশের মতো ময়মনসিংহের গৌরীপুরেও আন্দোলনের জোয়ার ছড়িয়ে পড়ে। ২০ জুলাই কলতাপাড়া বাজারে শহীদ নুরে আলম স্ত্রীর জন্য ঔষধ কিনতে গিয়েছিলেন। বাজারে গিয়ে আন্দোলনকারীদের ছবি এবং ভিডিও সংগ্রহ করছিলেন। দুপুর ১২ টার দিকে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্দয় পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। ছাত্র-জনতার প্রতিবাদের মুখে পুলিশ গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। একটি গুলির আঘাতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। যে বুকে পরিবারের ভালোবাসা লালন করতেন- সে বুকেই গুলি করে পুলিশ। আধাঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকার পর তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু সময়ের ব্যবধানে মেডিকেলেই শাহাদাত বরণ করেন। শহীদের মামা ওয়াজকরুনী বলেন, ‘‘মাদরাসার ক্লাস শেষ করে বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কলতাপাড়া বাজারে গিয়েছিলেন। সেখানে হঠাৎ পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের ছোঁড়া গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা যান।’’ তিনি আরও জানান, ‘‘ঘটনার দিন এক আত্মীয়ের বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিল শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকীর বাবা-মা। সেখানে ছেলের গুলি লাগার খবরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তাঁর মা। সেই থেকে এখনো তিনি স্বাভাবিক তথা বলতে পারেন না। শুধু একটি কথাই বারবার বলেন, “তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।” শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকীর বাবা আব্দুল হালিম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের। সে কোনো রাজনীতি করে না, কেন তাকে গুলি করে মেরে ফেললো পুলিশ। আমার ছেলে অপরাধ করলে তাকে জেলে দিতে পারত পুলিশ, কেন তাকে গুলি করে মেরে ফেললো? এখন আমার সব শেষ। আমি কার কাছে বিচার দেব?’’ এ ঘটনায় শোকাহত শহীদের প্রতিবেশীরাও। তারা জানায়, শহীদ নূরে আলম অনেক ভালো ছেলে ছিল। সে পাচঁ ওায়াক্ত নামাজ পড়ত। প্রতিবেশীরা বলেন, ‘‘ঘটনাটি মর্মান্তিক। ছেলে হারানোর শোকে পরিবারের কান্না দেখলে আমাদের চোখের পানি এসে যায়। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করুন।’’ সেদিন আন্দোলনে কলতাপাড়া বাজার এলাকায় দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের সাথে সংর্ঘষে ১৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এদের মধ্যে ৪ জন মারা যায়। বাকিরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শহীদ সম্পর্কে তাঁর চাচাতো ভাই ফারুক আহমেদ বলেন, “তিনি সমাজের সকল মানুষের কাছে একজন প্রিয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল। সহজ-সরল নিরীহ প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যগুলো তাঁর মধ্যে ছিল। সমাজ এবং এলাকায় শিক্ষার প্রসার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই সে শিক্ষকতার মহান পেশায় যোগদান করেছিল।” নূরে আলমের চাচাতো ভাই আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘ঘটনার দিন সকালে সাদিয়া শারীরিক ভাবে অসুস্থতা বোধ করছিলেন। এ সময় নুরে আলম স্ত্রীর জন্য ওষুধ আনতে কলতাপাড়া বাজারে যান। শুনেছি সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করার সময়ই সে গুলিবিদ্ধ হয়। সেখান থেকে হাসপাতালের নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।’’ নূরে আলমের ভগ্নিপতি ইলিয়াস মাহমুদ বলেন, ‘‘রাকিবের মরদেহের বুকের বামপাশের গুলির ছিদ্র ছিল। ও ছিল আমার শ্বশুড়ের একমাত্র ছেলে। তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার শোকে কাতর। আমরা এই ঘটনায় মামলা করবো না। মামলা করলেই কি আর নুরে আলম ফিরে আসবে?’’ পরামর্শ ১. শহীদের স্ত্রীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ২. শহীদের অনাগত সন্তানের দায়িত্ব নেওয়া যেতে পারে। এক নজরে শহীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নাম : শহীদ মো: নূরে আলম সিদ্দিকী জন্ম তারিখ, জন্মস্থান : ০৯.০৩.২০০৬, দামগাঁও পেশা : শিক্ষক কর্মরত প্রতিষ্ঠান : তালিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসা আহত হবার স্থান : কলতাপাড়া বাজার, গৌরীপুর শহীদ হবার স্থান : ময়মনসিংহ মেডিকেল আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হবার তারিখ ও সময় : ২০ জুলাই, ২০২৪, দুপুর ১২ টা শহীদ হবার তারিখ ও সময় : ২০ জুলাই, ২০২৪, দুপুর ১ টা শহীদের কবরস্থান (জিপিএস লোকেশনসহ) : দামগাঁও, গৌরিপুর, ময়মনসিংহ-২৪.৭২৬৮২, ৯০.৫৪৯৫৭ বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দামগাঁও, ইউনিয়ন: রামগোপালপুর, থানা: গৌরীপুর, জেলা: ময়মনসিংহ পরিবারসংক্রান্ত তথ্য পিতার নাম, পেশা : মো: আব্দুল হালিম, ব্যবসা মাতা : নুরুন্নাহার বেগম মাতার পেশা : গৃহিণী স্ত্রীর নাম, পেশা : সাদিয়া আক্তার, গৃহিণী পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৩ জন