জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১১ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: ড্রাইভার শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
শহীদ মো: উবায়দুল হক ১৯৯৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা মো: নেজাম ইসলাম এবং মা মোসা: মরিয়ম বেগম (৫৫)। পিতৃহীন এই অসচ্ছল পরিবারটির ভরণপোষনণের দায়িত্ব ছিল ওবায়দুল হকের উপর। অনলাইন শপিং প্লাটফর্ম দারাজের পণ্য ডেলিভারির ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন শহীদ উবায়দুল হক। এই উপার্জন দিয়েই বিধবা মা সহ দুই মাসের গর্ভবতী স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতেন। ৪ আগস্ট পল্টনের নাইটিঙ্গেল মোড়ে পদ্মা গার্মেন্টসের পেছন থেকে মিছিল বের হয়। তিনি আর তার দুই বন্ধুসহ তিনজন মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলে এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে। তারা ওবায়দুল হককে হাতুড়ি ও স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। পরবর্তীতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। আঘাতে তার ডান হাত ও ডান পা একাধিক খন্ডে খন্ডিত হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক তাকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। ৫ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েন। অতঃপর মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন তিনি। শাহাদতের প্রেক্ষাপট রিকশাচালক, আচার ব্যবসায়ী, ট্রাক ড্রাইভার, বাস ড্রাইভার, ভবঘুরে মানুষ, শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারী, কর্মকর্তা, মুটে-মজুর, মালি, পিয়ন, ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী, কসাই কোন শ্রেণীর মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছিলেন না জুলাই বিপ্লবে তা আমাদের জানা নাই। ঘরে পাঁচ ছয়টা ক্ষুধার্ত মুখ কিংবা অতি আদরের একমাত্র সন্তান, কারো বিয়ে হয়েছিল সদ্য, কারো বা বিয়ে ঠিক হয়েছিল, কারো সন্তানের বয়স দুই মাস কারো সন্তানের বয়স ২০ বছর, আর কারো সন্তান পেটে অবস্থান করছিল, কেউবা ছিলেন ধনীর আদরের একমাত্র দুলাল, আর কারো জীবন ছিল আজন্ম সংগ্রামের, বিধবা মা, সুন্দরী স্ত্রী, অভাবী বোন সবাই শরিক হয়েছিল মহামুক্তির এই মিছিলে। অনেকেরই তৈরি হয়ে গিয়েছিল পাসপোর্ট, প্রিয় মা প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে সুখের নাগাল পেতে পাড়ি জমাতেন বিদেশে কত আশা কত স্বপ্ন সবকিছু তুচ্ছ হয়ে গেছিল মুক্তির প্রত্যাশায়। মুক্তি চাই মুক্তি চাই স্বৈরাচার এই হাসিনা সরকারের হাত থেকে। মুক্ত করতে চাই প্রিয় মাতৃভূমিকে। মুক্তির এই মহামন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে হাজারো দেশপ্রেমিক জনতা মৃত্যুকে তুচ্ছ করে বেরিয়ে এসেছিল রাজপথে। এমনি একজন শহীদ উবায়দুল হক। ঘরে বিধবা মা আর দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, কিছুই তাকে পিছুটানতে পারেনি। যোগ দিয়েছিলেন ৪ আগস্ট পল্টনের নাইটিংগেল মোড়ে বাংলাদেশের মুক্তির মিছিলে। প্রস্তুত ছিল দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেওয়ার সেই শকুনেরা, মানুষের অধিকার হরণকারী সেই হায়েনেরা, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নামের মানুষ নামধারী জানোয়ারেরা। ওরা হামলা করে মিছিলে। ওরা ধরে ফেলে দারাজের ডেলিভারি ম্যান শহীদ ওবায়দুল হককে। হাতুড়ী ও স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে তাকে আহত করা হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হয় দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। ডান হাত ও ডান পা খন্ডিত হয়ে যায় একাধিক খন্ডে। মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। প্রায় ১ সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে যান তিনি। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ উবায়দুল হকের বাবা জীবিত নেই। ৫৫ বছর বয়স্ক মা গৃহিণী। দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীও গৃহিণী। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের স্ত্রীর জন্য নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা। ২. শহীদের বিধবা মায়ের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা । ৩. শহীদের বিধবা মা ও স্ত্রীর জন্য বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : শহীদ মো: উবায়দুল হক জন্ম তারিখ : ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ পিতার নাম : মো: নেজাম ইসলাম মাতার নাম : মোসা: মরিয়ম বেগম (৫৫) স্ত্রীর নাম: : মোসা: জাহানারা খাতুন (২০) স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দত্তগ্রাম, ইউনিয়ন: মাইজবাগ, থানা: ঈশ্বরগঞ্জ, জেলা: ময়মনসিংহ বর্তমান ঠিকানা : দত্তগ্রাম, মাইজবাগ, ঈশ্বরগঞ্জ,ময়মনসিংহ আহত হওয়ার স্থান : পল্টন নাইটেঙ্গেল মোড, ঢাকা আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট, ২০২৪, রাত ১২টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ১১ আগস্ট, ২০২৪, সময়: রাত বারোটা এক মিনিট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাদের আঘাতে শহীদ : যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ