জন্ম তারিখ: ২৫ জুন, ১৯৯৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৭ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: ইমাম, স্কাইলাইন গ্রুপ ফ্যাক্টরি শাহাদাতের স্থান : লালমনিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের
শহীদ মো: সাদিকুর রহমান ১৯৯৮ সালের ২৫ জুন ময়মনসিংহের ধোপাউড়া থানার কালিকাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা আব্দুল লতিফ (৭০) এখন বয়সের ভারে দুর্বল এবং মা ফাতেমা খাতুন মৃত। দুই মেয়ে রুহামা (৫) ও তাসনুবার (৩) বাবা মাওলানা সাদিকুর রহমান স্কাইলাইন গ্রুপ ফ্যাক্টরির ইমাম ও স্টাফ হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ছয়টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে পুলিশ গুলি করলে একটি বুলেট তার পেটের নাভীর পাশ দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তার বন্ধুরা তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখানে চিকিৎসারত থাকা অবস্থায় ৭ আগস্ট দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে শাহাদাত বরণ করেন।শাহাদতের প্রেক্ষাপট খুনি হাসিনার পলায়নে বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারে ভাসতে থাকে এদেশের আপামর জনসাধারণ। আনন্দের হিল্লোল ছুঁয়ে যায় এই নিপীড়িত জনপদের প্রত্যেক মানুষের হৃদয়। যেন সহস্র বছরের জঞ্জালমুক্ত হয়েছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এই স্মরণীয় দিনের সাক্ষী হতে চাচ্ছিলেন দেশের প্রতিটি মানুষ। খুশিতে রাস্তায় নেমে আসেন উল্লাসিত জনতা। অন্যান্য মানুষের মতো মাওলানা সাদিকুর রহমানও রাস্তায় নেমে আসেন। ধর্মপ্রাণ মাওলানা পূর্ব হতেই সমাজের অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সব সময় সক্রিয় ছিলেন। অংশগ্রহণ করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনেও। ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ সাভারের বাইপাইল এলাকায় যে বিজয় মিছিল বের হয়েছিল, তাতে তিনি বন্ধুদের সাথে অংশগ্রহণ করেন। এই বিজয় মিছিলে পুলিশ বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায়। পুলিশের এই হামলা ছিল বেপরোয়া এবং সহিংস। গুলির তাণ্ডবে পুরো এলাকা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে ছোঁড়া গুলির একটি বুলেট মাওলানা মো: সাদিকুর রহমানের পেটে নাভির পাশ দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তার বন্ধুরা দ্রুত তাকে আশেপাশের মানুষদের সহযোগিতায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। মাওলানা সাদিকুর রহমানকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানান ৫ আগস্ট থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ৭ আগস্ট পর্যন্ত তিনি এনাম মেডিকেল হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন। চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও তার অবস্থা উন্নতি করতে পারেননি। সাদিকুরের আঘাত এতটাই মারাত্মক ছিল যে, শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবশেষে দুই দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর ৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখের দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদ সাদিকুর রহমান ছিলেন অত্যন্ত সৎ নির্ভীক এবং ধর্মপরায়ণ মানুষ। এ মানুষটি তার দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতার জন্য সকলের নিকট পরিচিত ছিলেন। বেতন কম হলেও নিজের বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী এবং দুই মেয়ের ওপর কোনদিনও অবহেলা করেননি। কঠিন পরিশ্রম,আত্মত্যাগ এবং সীমিত আয়-সামর্থের মধ্যে তিনি পরিবারকে যথাসম্ভব ভালোভাবে পরিচালনা করছিলেন। পরিবারের জন্য ছিল তার অপরিসীম ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধ। শহীদের বৃদ্ধ বাবা ও স্ত্রী এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত ও বিচার চান। তার মৃত্যুতে পুরো এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ মো: সাদিকুর রহমান স্কাইলাইন গ্রুপ ফ্যাক্টরির ইমাম এবং স্টাফ ছিলেন। তার ছোট ছোট দুই মেয়ে রয়েছে। বাবা কর্মে অক্ষম। সামান্য বেতনে চাকরি করে বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী এবং সন্তানদের ভরণপোষণের খরচ চালাতেন। তার মৃত্যুর পর পরিবারটি মারাত্মক অর্থনৈতিক অসুবিধায় পড়েছেন। বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী এবং ছোট দুটো মেয়ের নির্ভরযোগ্য কোন আয় উৎস নেই। পরিবারটি এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে বাস করছে। শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন সহায়তা করা প্রয়োজন ২. শহীদের দুই মেয়েকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা ৩. শহীদের পরিবারের জন্য বাসস্থান নির্মাণ এবং বৃদ্ধ বাবার জন্য মাসিক সহায়তা ভাতা প্রদান এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: সাদিকুর রহমান জন্ম তারিখ : ২৫ জুন ১৯৯৮ পিতার নাম : আব্দুল লতিফ (৭০) মাতার নাম : ফাতেমা খাতুন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কালীকাবাড়ি, ইউনিয়ন: ১ নং দক্ষিণ চারুয়াপাড়া, থানা: ধোপাউড়া, জেলা: ময়মনসিংহ। বর্তমান ঠিকানা : কালিকাবাড়ি, ১নং দক্ষিণ চারুয়াপাড়া, ধোপাউড়া, ময়মনসিংহ আহত হওয়ার স্থান : বাইপাইল, সাভার, ঢাকা আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪ শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৭ আগস্ট, দুপুর ১২:৩০, এনাম মেডিকেল হাসপাতাল, ঢাকা যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলি শহীদের কবরস্থান : কালিকাবাড়ি, মাইজপাড়া, ধোপাউড়া, ময়মনসিংহ