জন্ম তারিখ: ৫ এপ্রিল, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান : মাওনা, গাজীপুর, ঢাকা।
শহীদ মো: কাওসার মিয়া ২০০২ সালের ৫ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের নড়াইল ইউনিয়নের কাওয়ালীজান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো: সাইদুল ইসলাম ফরাজি (৬০) এবং মা মোসা: বিলকিছ বেগম। সাইদুল-বিলকিছ দম্পতির ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। বোন বিবাহিত হওয়ায় অসুস্থ ও বৃদ্ধ পিতা এবং মাকে নিয়ে তার সংসার। তিনি ছিলেন প্রাইভেট কারের ড্রাইভার। তার উপার্জনের টাকায় পুরো সংসারের ভরণপোষণ চলত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনি শুরু থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে গিয়ে শহীদ হন। তার শরীরের চারটি গুলি বিদ্ধ হয়ছিল। একটি বুকের মাঝে, একটি বুকের বাম পাশে ঢুকে বের হয়ে যায়, পেটের দিকে একটি এবং ডান হাতে একটি। শাহাদতের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে একবার এবং ১৯৭১ সালে আর একবার স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। তারপর হতে এই পর্যন্ত কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের সুফল খুব কমই ভোগ করেছে। বরং একনায়তন্ত্র, পরিবারতন্ত্র আর ঘৃণিত স্বৈরতন্ত্রের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে বারবার। আর শেষের সত্য ছিল নিকৃষ্টতম স্বৈরশাসকের কব্জায়। ভোট, বাক আর ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে বিদেশি প্রভুর পালিত স্বদেশী শাসকগোষ্ঠীই দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চেয়েছিল পুরো বাংলাদেশকে। আবহমানকাল থেকে বাংলার জনগণ রাজকার্যের দিকে বেশি মনোযোগী না হলেও কখনও গোলামীর শৃঙ্খল গলায় পড়েনি। বরং অনিয়ম আর অনাচারের বিরুদ্ধে বুক চেতিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে বারবার। ভুখা নাঙ্গা এই স্বাধীনচেতা মানুষের কাছে বারবার পরাজিত হয়েছে অমিত শক্তিধর বহু মানব আর দানব। বিদেশি দানবের কাছে মাথা বিক্রি করে দেওয়া শাসকগোষ্ঠী আবারও বাংলার জনগণকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে চেয়েছিল। রুখে দাঁড়িয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। তাদের কর্মসূচিতে তাই জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। দেশের আপামর সাধারণ জনগণের মতো শহীদ আবু কাওসারও অংশগ্রহণ করেছিলেন। জনগণের আন্দোলনের তোপে ব্রাহ্মবাদী শক্তির দোসর খুনি হাসিনা দিল্লি গিয়ে পড়ে। পুরো বাংলাদেশ আরেকবার স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করে। কিন্তু সেই দিনও থেমেছিল না পতিত সরকারের দোসর হিসেবে পরিচিত পেটোয়া বাহিনীর ভয়ানক নির্দয় আক্রমণ। জনতার বিজয় মিছিলে তারা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। শহীদ কাওসার মিয়া মোড়ের বিজয় মিছিলে অংশ নিয়েছিল। এই মিছিলে ঘাতক বাহিনী গুলি চালালে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই ইন্তেকাল করেন। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদ মো: কাওসারের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না বৃদ্ধ পিতা ও মাতা। মেনে নিতে পারছিলেন না এলাকার আপামর জনসাধারণও। তার মৃত্যুতে এলাকাবাসী মো: আবু বকর সিদ্দিক বলেন, " কাওসার পুরো এলাকায় হাসিমুখে থাকত। সবার স্নেহের মানুষ ছিল সে। বিজয়ের মৃত্যুর সাথে সাথে থমকে যায় তার পরিবারের জীবন। যে হাতে পরিবারের সঞ্চার ছিল সেই হাত চিরতরে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বাড়ি নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ, বাবার চিকিৎসা অনিশ্চিত আর পরিবার যেন ভেসে চলেছে এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে। আল্লাহ তার পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দিন এবং তাকে শহীদী মর্যাদা দান করুন।"শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য বৃদ্ধ অসুস্থ বাবার পরিবারের শহীদ আবু কাওসার ছিলেন আঁধার ঘরের মানিক। তার রোজগারেই বেঁচে ছিলেন তিনটি মানুষ। স্বল্প আয়ের হলেও সাজাতে চেয়েছিলেন নিজের জীবন। তাই তো শুরু করেছিলেন ঘর নির্মাণ। কিন্তু সবই ভেস্তে দিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে ঘাতকের বুলেট। একমাত্র মেয়ে বিবাহিত, এখন পরের ঘরে। এই বৃদ্ধ বাবা মাকে কে দেখবে? শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পিতা-মাতাকে এককালীন সহায়তা করা প্রয়োজন। ২. শহীদের অর্থ সমাপ্ত গৃহটির নির্মাণ শেষ করা দরকার। শহীদ মো: কাওসারের কিছুই ছিল না। গৃহ, বউ ছেলে মেয়ে কিংবা সাজানো সংসার। বাসায় ছিল অসুস্থ ও বৃদ্ধ বাবা-মা। তবুও কোন কিছু তাকে পিছে ধরে রাখতে পারেনি। বিজয় ফরাজি শুধু একজন শহীদ নয়, তিনি এক সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবি। এক অদম্য ইচ্ছা শক্তির প্রতীক। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: কাওসার মিয়া জন্মতারিখ : ৫ এপ্রিল ২০০২ পিতা : মো: সাইদুল ইসলাম ফরাজি (৬০) মাতা : মোসা: বিলকিছ বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কাওয়ালীজান, ইউনিয়ন: নড়াইল, থানা: হালুয়াঘাট, জেলা: ময়মনসিংহ বর্তমান ঠিকানা : একই আহত হওয়ার স্থান : মাওনা, গাজীপুর, ঢাকা আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল: ৩:৩০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট, বিকাল ৩:৩০ মিনিট যাদের আঘাতে শহীদ : বিজিবির গুলিতে শহীদের কবরস্থান : কাওয়ালীজান, নড়াইল, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ