জন্ম তারিখ: ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: হোটেল শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান : ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতাল।
ময়মনসিংহ জেলার পূর্ব গোবরকরা গ্রামে শহীদ রাজু ১৯৯৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলছন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন হোটেল শ্রমিক। পিতা মিজান উদ্দিন (৬৫) আর মা রাহেলা খাতুন (৫৫) গ্রামের বাসায় থাকতেন আর শহীদ রাজু স্বস্ত্রীক থাকতেন টঙ্গীর বোর্ড বাজারে। নিজের সংসার চালিয়েও কিছু টাকা পাঠাতেন মা-বাবার কাছে। একজনের আয়ে চলে যেত দুটি সংসার। সেই মানুষটিও ২০ জুলাই দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের আত্মোৎসর্গে পুরো জাতি অনুপ্রাণিত। উত্তাল আন্দোলনে টালমাটাল বাংলাদেশ। স্বৈরশাসনে নিষ্পেষিত জনগণের সামনে আলোর ফোয়ারা দেখা দেয়। সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে নেমে আসে। হোটেল শ্রমিক শহীদ মো: রাজু মিয়াও যোগদান করেন এ আন্দোলনে। ২০ জুলাই সহযোদ্ধাদের সাথে তিনিও রাজপথে ছিলেন। দুপুর সাড়ে বারোটায় খুনি হাসিনার পেটোয়া বাহিনী পরপর পাঁচটি গুলি করে তাকে হত্যা করে। বুকের ডান ও বাম পাশে, মাথায় এবং বাম হাতে দুটি গুলি করা হয়। জনগণ তার রক্তাক্ত দেহটি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। লাশ নিয়ে হয়রানি শহীদ রাজুকে হত্যা করেও তৃপ্ত হয়েছিল না ঘাতক বাহিনী। আরো চারটি লাশের সাথে তার লাশ নিয়ে চলে যায় সেনাবাহিনী। লাশের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে পরিবারের সদস্যরা। সেনাবাহিনী জানায় লাশ টঙ্গী পশ্চিম থানায় রয়েছে। টঙ্গী থানায় গেলে পুলিশ প্রশাসন অস্বীকার করে। তারপর থেকে ভোগান্তি বাড়তেই থাকে। কোনক্রমেই লাশের সন্ধান পাওয়া যায় না। পত্রিকায় শিরোনাম হয় " নিহত রাজু মিয়ার লাশ ফেরত চায় পরিবার "। তবুও টনক নড়ে না প্রশাসনের। এখনো পাওয়া যায়নি শহীদ রাজু মিয়ার লাশ। এত নির্মমভাবে হত্যা করে লাশটিও গায়েব করে ফেলে খুনি হাসিনার দোসররা। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার খুনি হাসিনা শহীদ রাজুকে হত্যা করে তার লাশ গুম করে ফেলে। শত চেষ্টার পরেও বাবা-মা তার ছেলের লাশ হাতে পায়নি। এতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন পিতা মিজান উদ্দিন এবং মা রাহেলা খাতুন। তারা তাদের সন্তানের মৃত্যুমুখ পর্যন্ত দেখতে পাননি। শেষ বিদায় জানাতে পারেনি সন্তানকে। স্ত্রী রেহেনা খাতুনের অবস্থা আরো শোচনীয়। শহীদের ছবি দেখে তিনি বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। বাবা মা ও স্ত্রীর দাবি তারা যেন অন্তত রাজুর লাশ বা কবরের সন্ধান পান। হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করারও দাবী তাদের। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদরা তিন ভাইবোন। তিনি ছিলেন সবার বড়। ছোট বোন নুরজাহান (২৫) ও খাদিজা খাতুন (২৩) বিবাহিত। শহীদের পিতা পূর্বে কৃষি কাজ করলেও এখন তিনি আর কাজ করতে পারেন না। তাই বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছেলের আয়ের উপরই নির্ভরশীল ছিলেন। শহীদের স্ত্রী রেহেনা খাতুন (২৪) একজন গৃহিণী। শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পিতা-মাতাকে এককালীন সহায়তা করা প্রয়োজন। ২. শহীদের পিতার জন্য মুদি দোকানের ন্যায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেওয়া দরকার। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : রাজু পিতা : মিজান উদ্দিন (৬৫) মাতা : রাহেলা খাতুন (৫৫) জন্মতারিখ : ২৭ ডিসেম্বর ১৯৯৭ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পূর্ব গোবরকরা, ইউনিয়ন: ৪ নং সদর-হালুয়াঘাট, থানা: হালুয়াঘাট, জেলা: ময়মনসিংহ আহত হওয়ার স্থান : বোর্ড বাজার, টঙ্গী, ঢাকা আহত ও শহীদ হওয়ার সময় কাল : ২০ জুলাই, ২০২৪, দুপুর ১২:৩০ মিনিট যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলিতে