জন্ম তারিখ: ৯ মার্চ, ১৯৯৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৮ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: সবজির ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, ঢাকা।
“শত কিছু করেও ছেলেকে ফিরে পাওয়া যাবে না, দেশের জন্য ছেলে জীবন দিয়েছে। আমরা তার মর্যাদা চাই” - শহীদের মা আনোয়ারা বেগম ময়মনসিংহ জেলার দক্ষিণ গোমগাঁও বড়বড়ি গ্রামে সেপ্টেম্বর মাসে ১৯৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শহীদ মো: আনারুল ইসলাম। পিতা মো: রফিকুল ইসলাম (৫০) ফলের ব্যবসা করেন এবং মা আনোয়ারা বেগম (৪০) গৃহিণী। পিতা-মাতার সাথে স্ত্রী নিয়ে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় থাকতেন। ফুটপাতে সবজির ব্যবসা করছেন। মাঝে মাঝে বাবার সাথে ফলের ব্যবসাও করতেন। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ৪ আগস্ট তিনি গুলি বিদ্ধ হয়েছিলেন। একটি বুলেট তার মাথার ডান পাশে লেগে মগজ ক্ষতবিক্ষত করে দেয় এবং আরেকটি বুলেট তার কপাল ছিদ্র করে দেয়। তারপর তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে চার দিন অচেতন থাকার পর ৮ আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন। এই ঘটনা জানতে পারেন শহীদের পরিবার আরও তিনদিন পর অর্থাৎ ১১ আগস্ট। শাহাদতের প্রেক্ষাপট শহীদ মো: আনারুল ইসলাম অটোচালক হলেও দেশ ও জাতি সম্পর্কে ছিলেন সচেতন। দেশের করুণ অবস্থার কথা তার অজানা ছিল না। তাইতো স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে। যেসব অঞ্চল আন্দোলনের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক ছিল তার অন্যতম ছিল রাজধানী ঢাকা। প্রশাসনের পেটোয়া বাহিনী, বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় সশস্ত্র ক্যাডারদের সমন্বয়ে গঠিত ছাত্রলীগ, টেন্ডারবাজ-চাঁদাবাজ যুবলীগ আর তাদের কর্তা আওয়ামীলীগ, পুরো রাজধানী শহরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছিল। মোড়ে মোড়ে বসিয়েছিল মোবাইল চেকপোস্ট। একাত্তরের পাকিস্তানি হায়েনা গোষ্ঠীর মতই জনে জনে চেক করতো তারা। এরপরও মুক্তিকামী জনতা তাদের রক্ত চক্ষু মাড়িয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিত। মুক্তিকামী মানুষ যেন মুক্তির জন্য উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল। ঐরকমই একজন মুক্তিকামী মানুষ হয়ে উঠেছিলেন শহীদ মো: আনারুল ইসলাম। তিনি উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সাথে রাজপথে অবস্থান নিয়েছিলেন ৪ আগস্ট। ছাত্রদের ওপর চালানো পুলিশের গুলি বুক পেতে ধারণ করেছিলেন শহীদ মো: আনারুল ইসলাম। একটি বুলেট তার মগজ ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল আর আরেকটি বুলেট তার কপাল ছিদ্র করে দিয়েছিল। ৪ আগস্ট হতে ১১ আগস্ট, এই দীর্ঘ সময়েও শহীদের পরিবার জানতেন না শহীদের অবস্থা সম্পর্কে। ১১ আগস্ট রাত ১ টার দিকে ফুলপুরের পুলিশ তার বাবাকে ফোন দিয়ে তার মৃত্যুর ঘটনা জানান। ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে নাকি লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। শহীদের পিতা বলেন, "আনারুল ইসলামের মাথায় দুটি গুলির ক্ষত ছিল।" পরেরদিন রাত সাড়ে ৯ টায় তাকে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদ মো: আনারুল ইসলামের মা আনোয়ারা বেগম সরকারের কাছে শহীদ সন্তানের মর্যাদা দাবি করেন। শহীদের বাবা বলেন, “ছোট্ট তিন মেয়ে এক ছেলের সংসার। ছেলের মৃত্যুতে আমার সাহায্যের হাত শেষ হয়ে গেল। আমার বৃদ্ধ বয়সে ভবিষ্যৎ চলা অসম্ভব হয়ে পড়ল। দেড় বছর আগে এক মেয়েকে বিয়ে করিয়েছিলাম সেও আজ বিধবা হয়ে গেছে। অবৈধ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে শত শত ছাত্র-জনতার মৃত্যু হয়েছে। খুনি সরকারের পতন হওয়ায় ছেলের মৃত্যুতে কোন কষ্ট নেই।” শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদরা চার ভাই বোন। শহীদ আনারুল ইসলাম (৩০) সবার বড়। বোনদের মধ্যে নুরুন্নাহার (২০) এবং আলফিনা আক্তার (১৯) বিবাহিত। সবার ছোট বোন আকলিমা(১৫)। শহীদের পিতা ফুটপাতে সবজি এবং কখনো কখনো ফল বিক্রি করে থাকেন। শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. নিঃসন্তান বিধবা স্ত্রীকে কর্মসংস্থান পেতে সহায়তা করা যেতে পারে। ২. শহীদের পিতার জন্য স্থায়ী দোকানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে । একটি গণআন্দোলনে কিংবা একটি বিপ্লবে নিম্ন পেশার মানুষজন কেন এত ব্যাপক হারে ছুটে এসেছিল? কেনই বা তারা জীবন দিয়েছিল? শহীদ মোঃ আনারুল ইসলামদের জীবনাবসান অনাগত ভবিষ্যতে শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণের পাশাপাশি গবেষণারও কারণ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: আনারুল ইসলাম পিত : মো: রফিকুল ইসলাম (৫০) মাতা : আনোয়ার বেগম জন্মতারিখ : ৯ মার্চ ১৯৯৪ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: দক্ষিণ গোমগাঁও, বড়বাড়ি, ইউনিয়ন: ৮নং রূপসী, থানা: ফুলপুর, জেলা: ময়মনসিংহ আহত হওয়ার স্থান : আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা, ঢাকা আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪ টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৮ আগস্ট, ২০২৪, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, ঢাকা যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলিতে শহীদের কবরস্থান : দক্ষিণ গুনগাঁও বড়বাড়ি, ৮ নং রূপসী, ফুলপুর, ময়মনসিংহ