জন্ম তারিখ: ১৪ মে, ১৯৯৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : উত্তরা, ঢাকা।
শহীদ মো: মাসুম শেখ ১৯৯৪ সালে ময়মনসিংহের কোকাইল হয়খন্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা আব্দুর রাজ্জাক মৃত এবং ৭০ বছরের বৃদ্ধ মা রাহেলা খাতুন অসুস্থ। তিনি টঙ্গী গার্মেন্টসে কোয়ালিটি মাস্টার পদে যোগদান করেছিলেন। স্ত্রী নাদিয়া ও আড়াই বছরের সন্তান মফিজকে নিয়ে তার সংসার ভালোই চলছিল। পুলিশের গুলিতে শেখ মাসুম শেখ আক্রান্ত হন বিকাল ৫টার সময়। তার শরীরে তিনটি গুলি প্রবেশ করে। একটি গুলি পেটের একপাশ দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। আরেকটি গুলি বুকে ঢুকে বের হয়ে যায়। সর্বশেষ গুলিটি চোখের বাম পাশে ঢুকে বের হয়ে যায়। পথচারীরা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। পথিমধ্যেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদতের প্রেক্ষাপট খুনি হাসিনা সরকারের দুঃশাসনকে টিকিয়ে রাখতে পুলিশ অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিল। মূলত তারাই হাসিনার অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারকে টিকিয়ে রেখেছিল। অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এই দুর্বৃত্ত চক্র নিজেদের স্বার্থের কারণেই আওয়ামী দুঃশাসনকে দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছিল। অপরাধ জগতের এমন কোন অলিগলি ছিল না যাদের সাথে এদের সখ্যতা ছিল না। মাদক পাচার ও ক্রয়-বিক্রয়, সীমান্তে চোরা চালান, দাগি চিহ্নিত ও অবৈধ দখলদারদের সাথে ছিল তাদের দহররম মহরম সম্পর্ক, অবৈধ দখলদাররা ছিল তাদের প্রাণের বন্ধু, বিরোধী দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে লাখ লাখ গায়েবী মামলা প্রস্তুতকারী, গুম খুম হত্যা সন্ত্রাস চাঁদাবাজিতে শতভাগ জড়িত, বিরোধী দলকে সম্পূর্ণভাবে দমন, অবৈধ সরকারের রাতের ভোট নিশ্চিত করা, পথে-ঘাটে রাস্তায় চাঁদাবাজি, সাধারণ জনসাধারণকে জিম্মি ও হয়রানি করা, এরকম হাজারো অপরাধের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল পুলিশ প্রশাসন। এজন্য আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের প্রতি যত ঘৃণা ছিল তার চেয়েও সহস্র গুণ বেশি ঘৃণা ছিল এই পুলিশ প্রশাসনের প্রতি। পুলিশ একটি আতঙ্কের নামে পরিণত হয়েছিল। জনসাধারণের চোখে যেন তারা ঘৃণ্য নরকের ঘৃণিত কিট। জনগণ মনে করতো পুলিশকে রুখে দিতে পারলে সরকার এমনি এমনি পড়ে যাবে। তাই যত ক্ষোভ আর রাগ ছিল পুলিশের উপর। ৫ আগস্ট বিজয়ের পর পুলিশের ফাঁড়িগুলোর দিকে তাকালে তা অনুমান করা যায়। পুরো বাংলাদেশের সকল ফাঁড়ি একযোগে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। এ দ্বারা পুলিশ প্রশাসনের প্রতি মানুষের ঘৃণার পরিমাণ আঁচ করা যায়। ৫ আগস্ট শহীদ মো: মাসুম শেখ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ আন্দোলনের সংগ্রামী ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। আন্দোলনের তীব্রতায় প্রশাসন নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। খুনি হাসিনা দিল্লি পালিয়ে গিয়েছিল। বিজয়ী জনতার রাগ এবং ক্ষোভ গিয়ে পড়ে পুলিশ ফাঁড়িগুলোর ওপর। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতা উত্তরা থানা ঘেরাও করে ফেলে। এরপরই পুলিশ জনতার উপর নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করে। তিনটি গুলি সরাসরি শহীদ মো: মাসুম শেখকে আঘাত করে। শরীর এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায়। একটি গুলি পেটের একপাশে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। আরেকটা গুলি বুকে ঢুকে পড়ে। সর্বশেষ গুলি বাম চোখে ঢুকে বের বের হয়ে গিয়েছিল। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়েছিলেন তিনি। পথচারীরা তাকে নিয়ে দ্রুত ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান।কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদের ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে মা রাহেলা খাতুন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এত নির্মম এবং জঘন্য কায়দায় তাকে হত্যা করা হয়েছিল। শহীদের স্ত্রীও কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, " আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে আমি কোথায় যাব? তার তো কোনো দোষ ছিল না। কেন তাকে এভাবে হত্যা করা হলো? ঘটনা যাই হোক না কেন আমি দোষীদের শাস্তি চাই। " শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ মো: মাসুম শেখের বৃদ্ধ মা রাহেলা খাতুন, স্ত্রী নাদিয়া এবং ছেলে মফিজকে নিয়ে ছিল সংসার। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি । তার মৃত্যুতে বৃদ্ধ মা রাহেলা খাতুন, স্ত্রী নাদিয়া এবং ছেলে মফিজ অসহায় হয়ে পড়েছেন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : শহীদ মো: মাসুম শেখ জন্ম তারিখ : ১৪ মে, ১৯৯৪ পিতা : মৃত আব্দুর রাজ্জাক মাতা : রাহেলা খাতুন (৭০) স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কোকাইল হয়খন্ড , ইউনিয়ন : বউলা, থানা: ফুলপুর , জেলা: ময়মনসিংহ বর্তমান ঠিকানা : স্টেশন রোড, টঙ্গী, গাজীপুর আহত হওয়ার স্থান : উত্তরা , ঢাকা আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৫টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : উত্তরা, ঢাকা, বিকাল পাঁচটা যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলিতে শহীদের কবরস্থান : কোকাইল, বউলা, ফুলপুর, ময়মনসিংহ শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের বিধবা স্ত্রীকে কর্মসংস্থান পেতে সহায়তা করা ২. শহীদের শিশু সন্তানের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা ৩. শহীদের বৃদ্ধ মাতার জন্য গৃহের ব্যবস্থা ও মাসিক অনুদানের ব্যবস্থা