জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৮৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: দিনমজুর, শাহাদাতের স্থান : আমুয়াকান্দা বাজারের ধানমহালে
“আমাগোর ঘর নেই। দুই শিশু সন্তান নিয়ে কিভাবে চলাফেরা করমু আল্লাহই জানেন। দুই শিশুর জন্য ধান বিক্রি করে আম নিয়ে বাড়িতে আসার আগেই আমার স্বামীর প্রাণ গেল গুলিতে। এখন কিভাবে সামনের দিনগুলো চলবো বুঝতাছিনা” - শহীদের স্ত্রী রহিমা শহীদ সাইফুল ময়মনসিংহের রহিমগঞ্জ ইউনিয়নের চকঢাকির কান্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি। পিতা মো: তৈয়ব আলী (৬৭) কৃষিকাজ করেন এবং মা রোকেয়া খাতুন (৬২) গৃহিণী। ধান ব্যবসায়ী শহীদ মোঃ সাইফুল ইসলাম তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম জোসনা। সাইফুল ২০ জুলাই দুপুর দুইটার সময় পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন। শহীদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিনমজুর মো: সাইফুল ইসলামের (৩৭) ঘরের চাল চুয়ে পানি পড়ে। জীর্ণ ঘরটি ভেঙে নতুন ঘর তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য ধান বিক্রি করতে যান বাজারে। ধান বিক্রি শেষে ছোট্ট মেয়েটির জন্য আম কিনে বাড়িতে ফেরার কথা ছিল তাঁর, কিন্তু তা আর হয়নি। সাইফুল ফিরলেন লাশ হয়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। নিহত সাইফুল ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চক ঢাকিরকান্দা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে। অল্প কিছু জমি বন্ধক রেখে চাষ করতেন সাইফুল। সেই সঙ্গে দিনমজুরি করেই সংসার চালাতেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। পরিবারের ভাষ্য, ২০ শে জুলাই দুপুরে ফুলপুর-ময়মনসিংহ সড়কের আমুয়াকান্দা এলাকায় সংঘর্ষের সময় একটি গুলি এসে সাইফুলের ডান চোখের ওপরে লেগে মাথা ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। পরে তিনি মারা যান। স্বামীকে হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে অথই সাগরে পড়েছেন স্ত্রী রহিমা আক্তার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ধান নিয়ে সেদিন তাঁর স্বামী বাজারে গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় ছোট মেয়ে বলেছিল আম নিয়ে আসতে। ধান বিক্রি করে আম নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু পুলিশের গুলিতে তাঁর স্বামী লাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন। স্বজনেরা বলছেন, সাইফুলের মৃত্যুর পর তাঁর দাদা আফতাব উদ্দিন (৮০) মারা গেছেন ২৩ জুলাই। নাতির মৃত্যু সইতে না পেরে তিনিও মারা যান। প্রথমে সন্তান ও পরে বাবার লাশ কাঁধে নিয়ে কবরস্থানে দাফন করেন কৃষক তৈয়ব আলী। তিনি বলেন, তাঁর বেঁচে থাকা না-থাকা এখন সমান কথা। তাঁর নিরাপরাধ ছেলেকে গুলি করে মারা হয়েছে। সরকারের কাছে এর বিচার চান। দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা ছিলেন সাইফুল। বড় মেয়ে মিম আক্তার (৬) প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে রামিম হাসানের বয়স ৪ বছর। অপর মেয়ের সাইমা আক্তারের বয়স ২ বছর ৪ মাস। আমাদের তথ্য সংগ্রাহক বলেন, ‘বাড়ির সামনে দেখা গেল শিশু রামিম হাসানকে। আইসক্রিম খাচ্ছিল সে। বাবা মারা যাওয়ার বিষয়টি এখনো সে বুঝে উঠতে পারেনি’। সাইফুলের সঙ্গে সেদিন ধান বিক্রি করতে যান তাঁর ছোট ভাই শহীদুল ইসলাম। সাইফুল গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় পাশেই ছিলেন তিনি। শহীদুল বলেন, বেলা একটার দিকে আমুয়াকান্দা বাজারের ধানমহালে ছিলেন। ব্যাপারীর সঙ্গে ধানের দরদামও হয়। এ সময় গন্ডগোল শুরু হয়। গাড়ি থেকে ধান নামানোর আগেই হঠাৎ একটা গুলি এসে সাইফুলের চোখর ওপর দিকে লেগে মাথা ছেদ করে বেরিয়ে যায়। দ্রুত তাঁকে ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাইফুল শহীদ হন। পরে তাঁর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। শহীদুল আরও বলেন, ‘সে সময় সেখানে শুধু পুলিশ ছিল। পুলিশে গুলি করছে। বিচার কার কাছে দেব আমরা? বিচারের কিছু আছে? পুলিশে গুলি করছে, মামলা কার কাছে দেব? শহীদের মৃত্যুর পর প্রতিবেশির প্রতিক্রিয়া মো: মোফাজ্জল হোসেন (প্রতিবেশী) বলেন, ‘দিনমজুরি করতেন। ভালো মানুষ ছিলেন। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী ছিলেন।‘ শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন শহীদ সাইফুল। একটি জরাজীর্ণ ঘর রয়েছে। দুই শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত পরিবার। স্বামীহারা রহিমা বলেন, ‘আমগ্যোর ঘর নেই, দুই শিশুসন্তান নিয়ে কিভাবে চলাফেরা করমু আল্লাই জানেন। দুই শিশুর জন্য ধান বিক্রি করে আম নিয়ে বাড়িতে আসার আগেই আমার স্বামীর প্রাণ গেল গুলিতে। এখন কিভাবে সামনের দিনগুলো চলবো বুঝতাছি না।’ শহীদের প্রোফাইল নাম : মো: সাইফুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ০১-০১-১৯৮৭ পিতা : তৈয়ব আলী মাতা : রোকেয়া খাতুন সন্তানাদি : মীম আক্তার (৬), রামিম হাসান (৪), সায়মা আক্তার (২) স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : চক ঢাকিরকান্দা, ফুলপুর, রহিমগঞ্জ, জেলা: ময়মনসিংহ আহত হওয়ার স্থান : আমুয়াকান্দা বাজারের ধানমহালে আহত হওয়ার সময় কাল : ২০ জুলাই, বেলা ২টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ২০ জুলাই, বেলা ২টা, আমুয়াকান্দা বাজারের ধানমহালে যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলি শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা ২. এতিম বাচ্চাদের পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করা এবং ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা