জন্ম তারিখ: ২২ আগস্ট, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে
“সকলেই বিজয়ের পতাকা নিয়ে ঘরে ফিরলেও আমার বুকের মানিক ফিরেছে লাশ হয়ে” ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার তেঘুরী গ্রামে ২২ আগস্ট ২০০৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শহীদ সামিদ হোসেন। পিতা মো: ফরহাদ আলী (৩৫) সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন এবং মা শিল্পী আক্তার একজন গৃহিণী। মা-বাবা আর ছোট ভাই আকিম হোসেনকে সাথে নিয়ে তারা টঙ্গীর গাজীপুরের চেরাগ আলীতে বাস করতেন। সামিদ পড়াশোনা করতেন কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় বর্ষে (চতুর্থ সেমিস্টার)। তিনি নিয়মিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন। ৫ আগস্ট সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ডাকে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। শহীদ সামিদ হোসেন, বাবা ফরহাদ আলীর সঙ্গে সকাল থেকে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে উত্তরার আজমপুর বিএনএস সেন্টারের সামনে স্বৈরাচারী সরকারের ঘাতক পুলিশ ও ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকাল পাঁচটার দিকে হঠাৎ পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে গুরুতরভাবে আহত হন শহীদ সামিদ। পরে তাকে উদ্ধার করে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলি খেয়ে পড়ে থাকা শহীদ সামিদকে বন্ধু শাকিল সহায়তা করতে গেলে তাকেও নির্মমভাবে গুলি করা হয়। শাকিল ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান কিন্তু সামিদকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তাকে দ্রুত কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তিনি ইন্তেকাল করেন। মায়ের সাথে তার শেষ কথা ছিল, "বলেছিলাম না মা আজ সরকারের পতন হবে। " শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদ সামিদের মৃত্যুতে তার পরিবারে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং আন্দোলনের সহকর্মীদের কাছে এই শোক ছিল অসহনীয়। গভীর শোকাহত শহীদের পিতা বলেন, "আমি সরকারের কাছে আমার ছেলের শহীদ হিসাবে স্বীকৃতি দাবি করছি। " শহীদের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, " সকলেই বিজয়ের পতাকা নিয়ে ঘরে ফিরলেও আমার বুকের মানিক ফিরেছে লাশ হয়ে।" একটি সন্ত্রাসমুক্ত সুন্দর শিক্ষাঙ্গনের স্বপ্ন দেখতেন শহীদ সামিদ। তিনি ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য। আন্দোলনে তার সক্রিয়তা,সাহসিকতা আর দৃঢ়তা দেশের ছাত্র সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করবে। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য সিকিউরিটি গার্ড বাবার সন্তান শহীদ সামিদ। সে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। তিনি ছিল বাবার আঁধার ঘরের মানিক। স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতে বাবা রাত দিন পরিশ্রম করতেন। সামিদের মৃত্যুতে তার সেই স্বপ্ন মাটিতে মিশে গেছে। শহীদের ছোট ভাই (১৪) নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।শাহাদতের প্রেক্ষাপট শহীদ সামিদ হোসেন ছিলেন একজন প্রতিবাদী ছাত্র। ছাত্র মাত্রই তিনি জানতেন পাশবিক শক্তি হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ নামক বিশ্ব সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যকলাপ সম্পর্কে। অপরাধ জগতের এমন কোন কাজ ছিল না যাদের সাথে এই ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা ছিল না। ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎসব, গণধর্ষণ, স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে কেড়ে নিয়ে ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, হত্যা, সন্ত্রাস, গুম, খুন, টেন্ডারবাজি, ব্যালট বক্স ছিনতাই, অন্যের পুকুরের মাছ, অন্যের গাছের ফসলাদি লুণ্ঠন, সিট দখল, গণরুম কালচার, প্রতিটি হল কে টর্চার সেলে পরিণত, সারারাত্রি পিটিয়ে পিটিয়ে ছাত্রদের খুন করা, সালাম না দেওয়ার অপরাধে হল ছাড়া করা, সিট বাণিজ্য, ক্যান্টিনে বাকি খাওয়া, ফ্রি খাওয়া, শিক্ষক ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নির্যাতন এমনকি হত্যা করা, প্রতিটি হলরুমকে অস্ত্রাগার বানানো, মদ-গাঁজা আর নারীর সমন্বয়ে বালাখানা তৈরি, অবৈধভাবে বছরের পর বছর হলে অবস্থান, পাশের আবদার, শিক্ষককে পানিতে চুবানো, আর নিজেদের মধ্যেই সংঘাত সংঘর্ষ তো ছিলই। সাধারণ মানুষের ধারণা প্রতিটি ছাত্রলীগের কর্মী এক একটি জারজ সন্তান। কোন মায়ের গর্ভে এদের জন্ম হতে পারে না। এই বিভীষিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সবাই উদ্ধার পেতে চাইছিলো। আশার আলো হয়ে আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন। আবহমান বাংলার সন্তান নিম্ন আয়ের মানুষ সিকিউরিটি গার্ড মো: ফরহাদ আলী সুসন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। এই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি যেমন সোচ্চার ছিলেন তেমনি সেই আদলে করে গড়ে তুলেছিলেন স্বীয় পুত্রকে। তারা ছিলেন সীমিত আয়ের মানুষ। স্বপ্ন ছিল খুবই সীমিত। ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে পরিবারের হাল ধরবে, এতটুকুই কিন্তু খুনি সরকারের পেটোয়া বাহিনী তাকে বাঁচতে দেয়নি। ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে যোগদান করার অপরাধে তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে খুনি হাসিনার লেলিয়ে দেয়া ঘাতক পুলিশ। এক নজরে শহীদ সামিদ হোসেন নাম : সামিদ হোসেন পিতা : মো: ফরহাদ আলী (৩৫) মাতা : শিল্পী আক্তার জন্ম তারিখ : ২২ আগস্ট, ২০০৬ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: তেঘুরী, ইউনিয়ন : মানকোন, থানা: মুক্তাগাছা, জেলা: ময়মনসিংহ বর্তমান ঠিকানা : চেরাগ আলী, টংগী, গাজীপুর আহত হওয়ার স্থান : উত্তরা, আজমপুর বিএনএস সেন্টারের সামনে আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের ঘাতক পুলিশ শহীদের কবরস্থান : চক ঢাকিরকান্দা, রহিমগঞ্জ, ময়মনসিংহ শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পিতা-মাতাকে এককালীন সহায়তা করা ২. শহীদের ভাইয়ের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা