জন্ম তারিখ: ৩০ জানুয়ারি, ২০০০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ
উমর ফারুক ২০০০ সালের ৩০ জানুয়ারি নেত্রকোনার দুর্গাপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা আব্দুল খালেক (৫২) দুবাই প্রবাসী এবং মা কুলছুমা আক্তার (৪১) গৃহিণী। শহীদ ফারুক কবি নজরুল সরকারি কলেজে ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করতেন। পরোপকারী এই মানুষটি দুর্গাপুর ব্লাড ডোনার সোসাইটি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান ছিলেন। ১৯ জুলাই বাইতুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে সহপাঠীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পুরান ঢাকার লক্ষীবাজার এলাকায় তার বুকে দুটি নাভিতে একটি মোট তিনটি গুলি করা হয়। আহত উমর ফারুককে উদ্ধার করে সহপাঠীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে তিনি মৃত্যুবরন করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ২০২৪ জুলাইয়ের মাঝামাঝি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক ক্রান্তিকাল মুহূর্ত অতিক্রম করছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার আন্দোলন দমন করতে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করেছে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের শিকারে পরিণত হয়েছে। রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে ব্যাপক হতাহত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তখনই এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হাত পা বেঁধে ফেলা হলেও সামনে দাড়ায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তানেরা, যা ছিল কল্পনার ও বাইরে। আন্দোলন সংগ্রাম নেতৃত্বের ভার যেন তারা স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নেয়। আন্দোলন নতুন করে গতি ফিরে পায়। সরকারের রক্তচক্ষুকে অপেক্ষা করে ময়দানে সরব বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে তারা বাস্তবায়ন করে যায় বিভিন্ন কর্মসূচি। ১৯ জুলাই ২০২৪ জুমার দিন। এই দিন বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বের হওয়ার কথা ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার মিছিল। শহীদ উমর ফারুক তার সহপাঠীদের সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগদান করেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদ হতে মিছিল বের হয়ে রাজধানীর লক্ষী বাজার এলাকায় গিয়ে উপস্থিত হয়। সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী শিক্ষার্থীদের উপর গুলি বর্ষন করলে উমর ফারুক গুলিবিদ্ধ হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে তার দেহে তিনটি গুলি লাগে। প্রথম গুলিটি লাগে নাভিতে। গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান তিনি। পরে পুলিশ ধরে তার বুকে আরো দুইটি গুলি করে। রাস্তায় ফেলে রাখে শহীদ ওমর ফারুককে। সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু রাস্তাতেই তিনি ইন্তেকাল করেন। ৫ দিন পর বিদেশ থেকে দেশে ফেরার কথা ছিল বাবা আব্দুল খালেকের। কিন্তু ছেলের গায়ে ছররা গুলি লেগেছে শুনেই তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন। লাশ নিয়ে ভোগান্তি শহীদের পিতার দেশে ফেরার কথা ছিল ২৪ জুলাই। বাবাকে সাথে নিয়েই তিনি ফিরতে চেয়েছিলেন বাসায়। কিন্তু তার আগেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় শহীদ ওমর ফারুকের। বন্ধুদের মাধ্যমে এই খবর জানতে পেরে পরিবারের লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান লাশ আনতে। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ খুঁজতে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না স্বজনদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে, পুলিশের অনুমতি লাগবে। শাহবাগ থানায় গেলে পুলিশ জানাই উমর ফারুক নামে কেউ এখানে নেই অন্য কোথাও খুঁজতে। সূত্রাপুর থানায় গেলে বলে, সেখানেও এই নামের কোন লাশ নেই। হাসপাতালে খোঁজার জন্য বলে। হাসপাতালে ফিরে আসলে বলে খোঁজার অনুমতি নাই। রাত দিন দৌড়াদৌড়ি করেও কোন কূলকিনারা পায় না তার পরিবার। এরপর দুর্গাপুরের তৎকালীন এমপি মোস্তাক আহমেদ রুহিকে বিষয়টি জানালে সে থানায় কথা বলে দেয়। পরে পুলিশ অনুমতি দেয় হাসপাতালে গিয়ে লাশ খোঁজার জন্য। হাসপাতালে গিয়ে স্বজনরা দেখে,একটি সাধারণ ঘরে অর্ধশতের বেশি লাশ পড়ে আছে। সেখানেই মেলে শহীদ উমর ফারুকের লাশ। পোস্টমর্টেমসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করে মৃত্যুর দুই দিন পর লাশ নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেয় তারা। গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শহীদের স্বজনদের প্রতিক্রিয়া শহীদ ওমর ফারুকের ছোট ভাই আব্দুল্লাহ অনিক বলে, "আমার ভাইয়া খুবই পরোপকারী মানুষ ছিলেন। তার জানাজায় হাজার হাজার মানুষ এসেছে। মানুষের বিপদ শুনলে সবার আগে সহায়তার জন্য ছুটে যেতেন। যে ক্ষতি হয়েছে তা কিছুতেই পূরণ হবার নাই।" তিনি আরো বলেন, "নিহতের আগের দিনও ভাইয়াকে বলেছি বাসায় চলে আসার জন্য। বাসায় আম্মা কান্নাকাটি করছে। ভাই আমাকে বলেছিল চিন্তা না করার জন্য। আর আম্মার প্রতি খেয়াল রাখতে বলেছিল। আব্বাকে নিয়ে একসাথেই বাড়ি ফিরবে বলেছিল কিন্তু আমার ভাই লাশ হয়ে ফিরল।" শহীদের পিতা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, "আমার ছেলে রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাত। এখন সে দুনিয়াতে নাই। পরোপকারী ছেলেটার জীবন প্রদীপ নিভে গেল। আমি সবার কাছে দোয়া চাই আমার ছেলের জন্য।" শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদের বাবা দুবাই প্রবাসী। আম্মা গৃহিণী। ছোট ভাই আব্দুল্লাহ অনিক ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর্থিক অবস্থা সন্তোষজনক। শহীদ প্রোফাইল নাম : উমর ফারুক পিতা : আব্দুল খালেক মাতা : কুলছুমা আক্তার জন্ম তারিখ : ৩০ জানুয়ারি ২০০০ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: দুর্গাপুর দক্ষিণপাড়া, ওয়ার্ড: ০৫, থানা: দুর্গাপুর, জেলা: নেত্রকোনা আহত হওয়ার স্থান : লক্ষীবাজার, পুরান ঢাকা আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৩:৪৫ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিকেল ৪:৩০ মিনিট যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশ শহীদের কবরস্থান : দুর্গাপুর দক্ষিণপাড়া, নেত্রকোনা শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের ভাইকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়া যেতে পারে ২. এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে