জন্ম তারিখ: ৭ মে, ১৯৮২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান : ধানমন্ডি ৩২
চার পুত্র সন্তানের জনক শহীদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম কুদ্দুস সিকদার ও মাতা আমেনা খাতুন। পরবর্তিতে পেশাগত কাজে রাজধানীতে পাড়ি জমান। সেখানেই হাজারীবাগে স্ত্রী আমেনা বেগম ও চার ছেলেকে নিয়ে একটি ভাড়া ঘরে বসবাস করতেন। তিনি ড্রাইভিং করে উপার্জন করতেন। তিনিই ছিলেন পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার বড় ছেলে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে। জীবন যুদ্ধের বাস্তবতায় তাকে এখনই ধরতে হয়েছে বিশাল পরিবারের হাল। ছেলেটা কাজ শুরু করেছে শ্রমিক হিসেবে। শহীদ সাইফুলের মেজ ছেলে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে এবং ছোট দুই ছেলের এখনও স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। শহীদ সাইফুল খুবই অমায়িক ব্যাক্তি ছিলেন। মানুষকে খুব আপন করে নিতে পারতেন সহজেই। দায়িত্বপালনে তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান। ধর্ম পালনেও ছিলেন বেশ আন্তরিক। কখনো অন্যায় ও মিথ্যাকে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না। “চার সন্তানকে ইয়াতিম করে বিদায় নিলেন জনক” শহীদ সম্পর্কে সামগ্রিক বর্ণনা ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর “মার্চ টু ঢাকা” কর্মূসূচির দিন শেখ হাসিনার পতন ঘটে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বরাবরই নিদের্শনা ছিল যাতে যেকোনো মূল্যে আন্দোলনকারীদের দমন করা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য শেখ হাসিনা নিজেই বিপ্লবী জনতার ভয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পরও তার অনুগত পুলিশ বাহিনী অনেক জায়গায় ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষন অব্যাহত রাখে। ৫ তারিখ দুপুর ১২ টার ঘটনা। শহীদ মো: সাইফুল ইসলাম বাসা থেকে তার বড় ছেলেকে নিয়ে রাজপথে বের হন। সন্ধ্যা ৭টায় তাঁর ছেলে বাসায় ফিরলেও তিনি সে রাতে বাসায় ফিরেননি। বাবার কাছে কোনো ফোন না থাকায় ছেলে বা অন্য কেউ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। পরের দিন ধানমণ্ডি ৩২ এ রাস্তার পাশেই তাঁর লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। স্ত্রী ও চার ছেলের দায়িত্ব পালন করবে কে শহীদ মো: সাইফুল ইসলাম প্রাইভেট কার ড্রাইভার ছিলেন। তার স্বল্প আয় দিয়েই কোনো রকমে তাদের সংসার চলত। তিনি ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় এক রুমের ভাড়া বাসায় পরিবারসহ থাকতেন। বর্তমানে তার ৪ সন্তান নিয়ে স্ত্রী আমেনা খাতুন খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। ছোট জমজ দুই সন্তান ফায়জান ইসলাম ও ফায়াজ ইসলামের বয়স মাত্র দুই বছর। কোন উপার্জন না থাকায় সন্তানদের মুখে তিনবেলা খাবার যোগান দিতে পারে না আমেনা খাতুন। প্রথম সন্তান তানভীর আলম (১৮) রায়হান স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। বাধ্য হয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেছে। শহীদ মো: সাইফুল ইসলামের স্ত্রী ৪ সন্তান নিয়ে ১ রুমের যে ভাড়া বাসায় থাকেন সেখানে বসবাস করা তাদের জন্য খুব কষ্টসাধ্য। পাশাপাশি, বর্তমানে কোনো উপার্জন না থাকায় বাসা ভাড়ার ব্যয় বহন করাও তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়দের বক্তব্য শহীদ মো: সাইফুল ইসলাম খুব অমায়িক মানুষ ছিলেন। খুব সহজেই অপরিচিত মানুষকে আপন করে নিতেন। সবসময় ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। পারিবারিক দায়িত্ব পালনের ব্যপারে ছিলেন যত্নশীল। প্রতবেশীরা তাকে খুব পছন্দ করত। ইসলামের বিধান পালনের ব্যাপারেও তিনি ছিলেন আন্তরিক। -মো: হানিফ (বাড়িওয়ালা) ব্যক্তিগত প্রোফাইল শহীদের নাম : মো: সাইফুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ৭ মে, ১৯৮২ জন্মস্থান : বরিশাল পেশা : কার ড্রাইভার মাসিক আয় : আনুমানিক ২৫০০০/- ঠিকানা : বাসা: ৭০/০১, এলাকা: জিগাতলা, থানা: হাজারীবাগ, জেলা: ঢাকা স্ত্রীর বয়স, পেশা ও বয়স : তানিয়া, গৃহিণী, ৩১ পিতার নাম : মরহুম কুদ্দুস সিকদার মায়ের নাম : আমেনা খাতুন, গৃহিণী, ৬৫ পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৫ জন শহীদ পরিবারের বিবরণ : শহীদ সাইফুল ৪ পুত্র সন্তানের জনক ১. তানভীর আলম, বয়স: ১৮, পেশা: ছাত্র, শ্রেণি: একাদশ ২. তামিম ইসলাম, বয়স: ১৩, পেশা: ছাত্র, শ্রেণি: ৪র্থ ৩. ফায়জান ইসলাম, বয়স: ২ বছর ৪. ফায়াজ ইসলাম, বয়স: ২ বছর ঘটনার স্থান : ধানমন্ডি ৩২ আঘাতকারী : পুলিশ আক্রমণের সময় : আনুমানিক সন্ধ্যা ৬ টা মৃত্যুর সময় : আনুমানিক রাত ১০ টা লাশ পাওয়া যায় : ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় কবরস্থান : আজিমপুর কবরস্থান