জন্ম তারিখ: ৭ অক্টোবর, ১৯৯৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা : রাজমিস্ত্রি শাহাদাতের স্থান : মাওনা, গাজীপুর
শহীদ মো: মাছুম বিল্লাহ ১৯৯৬ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার দুর্গাপুরের নালুয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো: সাইফুল ইসলাম এবং মা মুর্শিদা খাতুন। ছোটবেলায় শিক্ষার উদ্দেশ্যে মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও দারিদ্রতার কারণে বেশি দূর পড়া হয়নি মাছুমের। জীবিকার তাগিদে তিনি গাজীপুর মাওনাতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। শহীদ মাছুম বিল্লাহ ৫ আগস্ট সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলন চলাকালীন গাজীপুরের মাওনা এলাকায় ঘাতক পুলিশের ছোঁড়া গুলি বিদ্ধ হন তিনি। পরে সেখানকার লোকজন ভালুকা হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে ওই দিন রাতে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার নালুয়াপাড়া গ্রামে চলে আসেন। পরদিন ৬ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শহীদ মাছুম বিল্লাহ নিজে খুব বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। তবে দেশের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখতেন। সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে তিনি তাতে অংশগ্রহণ করেন। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মাছুম ,জমিজমা কিছুই নেই তিনি প্রিয়তমা স্ত্রী ও পরিবার সবার উপরে স্থান দিয়েছিলেন প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে। তাইতো সব পিছুটান পিছে ফেলে সারাদিনের ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহটাকে টেনে নিয়ে যেতেন আন্দোলনের ময়দানে। গাজীপুরের মাওনাতে কাজ শেষে অংশ নিতেন আন্দোলনের কর্মসূচিতে। ৫ আগস্ট। দিনটি ছিল সোমবার। সারাদিন মাছুম ছিলেন আন্দোলনের মাঠে। বিকাল তিনটার দিকে অবস্থানরত জনতার ওপর ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাতক পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করলে পুলিশের ছোঁড়া দুটি গুলিতে মারাত্মক জখম হন মাছুম। একটি বুলেট সরাসরি তার বুকে লাগে এবং অপরটি তার পায়ে আঘাত হানে। ঘটনাস্থল থেকে ছাত্র-জনতা উদ্ধার করে পরবর্তীতে তাকে ভালুকা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় সেখানকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদের স্বজনদের প্রতিক্রিয়া শহীদের এমন মৃত্যুতে পরিবার ও স্বজনসহ পুরো এলাকায় শোকের মাতম চলছে। স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন শহীদ মাছুমের স্ত্রী। আহাজারি করছেন শহীদের বোনেরা। মৃত্যুর পর প্রতিরাতে কবরস্থানে ঘুরপাক করেন শহীদের বাবা। শহীদের প্রতিবেশী আমিনুল ইসলাম বলেন, "মাছুম বিল্লাহ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হওয়ার কারণে তিনি বেশিরভাগ সময় গাজীপুরে থাকতেন। সেখানে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মাঝে মাঝে তিনি বাড়িতে আসতেন। যতদিন এলাকায় থাকতেন সবার সাথে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করতেন এবং পরিবারের খেয়াল রাখতেন।" শহীদ মাছুমের মা মুর্শিদা আক্তার বলেন, "আমার ছেলেরে মাইরাইলসে। আমি কেমনে বাচবাম। আমার মাথার উপর তো বটগাছ সইরা গেছে। এখন আর আমাদের দেখার মত কেউ রইল নাই। আর ভালো মন্দ খাইতে পারতাম নাই। আপনারা আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার করেন এবং আমার বাপজানের জন্য দোয়া করবেন। " শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ মাছুম বিল্লাহ মাওনা তে কাজ করলেও তার পুরো পরিবার গ্রামের বাড়িতে বসবাস করে। পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে শহীদ মাছুম ছিলেন দ্বিতীয়। বোন সুরাইয়া খাতুন, হালিমা খাতুন, সুমাইয়া আক্তার, সাইদা আক্তার বিবাহিত এবং সানজিদা আক্তার অবিবাহিত। বৃদ্ধ বাবা পূর্বে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করলেও এখন আর করতে পারছেন না। শহীদের পরিবারে কোনো সন্তান না থাকায় বর্তমানে তার স্ত্রী বাবার বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: মাছুম বিল্লাহ পিতা : মো: সাইফুল ইসলাম (৫৯) মাতা : মুর্শিদা খাতুন (৫০) জন্ম তারিখ : ৭ অক্টোবর, ১৯৯৬ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: নালুয়াপাড়া, ইউনিয়ন: ২ নং দুর্গাপুর, থানা: দুর্গাপুর, জেলা: নেত্রকোনা আহত হওয়ার স্থান : মাওনা, গাজীপুর আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৩.০০টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ঘটনাস্থলেই আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের ঘাতক পুলিশ শহীদের কবরস্থান : নালুয়াপাড়া, ২ নং দুর্গাপুর, নেত্রকোনা শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন অনুদান দেওয়া যেতে পারে ২. শহীদের পিতামাতাকে মাসিক আর্থিক সহায়তা করা দরকার।