জন্ম তারিখ: ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার , ঢাকা ।
শহীদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ সালে নেত্রকোনার কমলাকান্দা ইউনিয়নের বটতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা মৃত আব্দুল অহেদ এবং মা জোহরা বেগম একজন গৃহিণী। শহীদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ছিলেন একজন গার্মেন্টস কর্মী। শ্রমিক কল্যাণের একজন কর্মী হিসেবে সকল আন্দোলন সংগ্রামেই তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতেন। ৫ আগস্ট ২০২৪ সোমবার, বিজয় মিছিলে ঘাতক পুলিশ গুলি চালালে অতর্কিত গুলির মুখে পড়েন তিনি। তার শরীরে দুটি বুলেট আঘাত হানে। একটি তার বাম হাতকে আঘাত করে এবং আরেকটি তার পেটে গিয়ে কিডনিতে আঘাত করে পিছন দিক থেকে বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট দেশের বিত্তশালীদের পাহাড়সম করে তোলার একটি মাধ্যম হচ্ছে গার্মেন্টস কারখানা। পৃথিবীর যত বৈষম্য সবটাই যেন এখানে প্রতিষ্ঠিত। সস্তা শ্রমের এমন বেপরোয়া ও নীতিহীন ব্যবহার পৃথিবীর আর কোথাও পরিলক্ষিত হয় না। গার্মেন্টস শ্রমিক মানেই যেন আধুনিক দাসত্বের ক্ষতচিহ্ন। পেটের তাগিদে জীবন বাঁচাতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। মালিকের ভাগ্যের পরিবর্তন এত দ্রুত এখানে ছাড়া আর কোথাও হয় না। একটা থেকে দুইটা গার্মেন্টস হয় দুইটা থেকে কুড়িটা, মালিক আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয় কিন্তু শ্রমিকের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। আজন্ম বৈষম্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা এই মানুষগুলো তীব্র দহন সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত। তাইতো বৈষম্য প্রতিরোধের কথা আসলেই রক্তে তাদের আগুন লেগে যায়। সব পিছুটান ফেলে সামনে এগিয়ে আসে। স্বল্প বেতনের চাকুরে শহীদ আব্দুল্লাহ আল মামুনও ছিলেন একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। সেই সাথে তিনি শ্রমিক কল্যাণের একজন সক্রিয় কর্মী। তাই শুরু থেকেই তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। আপাতত আন্দোলন সংগ্রাম শেষ, খুনি হাসিনা তার দোসরদের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার তোপের মুখে ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছে দিল্লিতে। দেশের মানুষ মিছিলে মিছিলে স্লোগানে স্লোগানে উল্লাস প্রকাশ করছিল। শহীদ আব্দুল্লাহ আল মামুন উল্লাসিত-উচ্ছ্বসিত জনতার সাথে আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ মিছিল সহ্য হয়নি হাসিনার অনুগত পিশাচ পুলিশ এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের। তারা অতর্কিত হামলা চালায় এই বিজয় মিছিলে। একটি বুলেট মামুনের বাম হাতে এবং আরেকটি বুলেট তার কিডনি ভেদ করে বেরিয়ে যায়। স্ত্রী আর সন্তানদের এতিম করে চিরনিদ্রায় তখন শহীদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। শহীদের স্বজনদের প্রতিক্রিয়া মা স্ত্রী আর তিন সন্তানের সবকিছু ছিলেন তিনি। সবার আবদার পূরণের একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। সবার মুখে হাসি ফোটাতে তিনিও নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন। সাধ্য অনুযায়ী তাদেরকে খুশী রাখার চেষ্টা করেছেন সবসময়। তার মৃত্যুতে পরিবারের হাসি বিলীন হয়ে গেছে। তারা যেন সবাই ভাগ্যবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তায় তাদের মুখ বিষাদময়। পরিবার ও সন্তানদের দাবি তার বাবার হত্যাকারীদের যেন খুঁজে বের করে সুষ্ঠু বিচার করা হয়। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বিধবা মা, গৃহিণী স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। গার্মেন্টস শ্রমিক শহীদ আল মামুন স্বল্প বেতনের অর্থ দিয়েই কোনক্রমে দিনানিপাত করতেন। শহীদের মৃত্যুর পর তিন সন্তান, স্ত্রী এবং মা গ্রামের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। বসবাস করছেন নাজুক অবস্থায় উপনীত হওয়া একটি গৃহে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : আব্দুল্লাহ আল মামুন পিতা : আব্দুল অহেদ ( মৃত ) মাতা : জোহরা বেগম জন্ম তারিখ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: বটতলা, ইউনিয়ন : কমলাকান্দা, থানা: কমলাকান্দা, জেলা: নেত্রকোনা আহত হওয়ার স্থান : যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার , ঢাকা । আহত ও শহীদ হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৪:৩০, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী সরকারের ঘাতক পুলিশ শহীদের কবরস্থান : বটতলা, কমলাকান্দা, নেত্রকোনা শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন অনুদান দেওয়া যেতে পারে ২. শহীদের বাসস্থান নির্মাণ করে দেওয়া যেতে পারে ৩. শহীদের সন্তানদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে ৪. স্থায়ীভাবে নিয়মিত মাসিক অনুদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে