জন্ম তারিখ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান : আজমপুর, উত্তরা
শহীদ মো: নাজিম উদ্দিন ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৫ সালে নেত্রকোনার ভাটগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা রোস্তম আলী (৫৫) বর্তমানে অসুস্থ এবং মা শিমুলা আক্তার টঙ্গীর চেরাগআলীতে সার্ফ এক্সেল কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করেন। এখানেই তারা টিনের ছোট্ট একটি ঘরে ভাড়ায় বসবাস করতেন। বাবা অসুস্থ তাই মা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। নাজিম উদ্দিন ছিলেন বারহাট্টা কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী একজন ছাত্র। ছাত্র হিসেবে শহীদ নাজিম উদ্দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ৫ আগস্ট দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হবার পর তিনি উত্তরার আজমপুরে বিজয়মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ঘাতক পুলিশ এই মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়লে তার গায়ে বেশ কিছু বুলেট লাগে। একটি গুলি তার বাম চোখ দিয়ে ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি ঘটনাস্থলেই ইন্তেকাল করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড ও আর সেই শিক্ষাকে ধারণ করে ছাত্ররা। নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করতে পারলে ভবিষ্যতের দেশ হয় অনেক উন্নত, সমৃদ্ধ, মানবিক এবং কল্যাণকর। জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য এখানে স্যান্ডেল বিক্রি হয় এসি রুমে আর বই বিক্রি হয় ফুটপাতে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা তো আরও করুণ। অতি নিম্নমানের খাবার, থাকার জায়গা নেই, গণরুমে গাদাগাদি করে থাকা, কখনো বারান্দায় পলিথিন টাংগিয়ে অবস্থান করা, রেগিং এর শিকার, রাজনীতির নামে সন্ত্রাসীদের কর্তৃত্ব, বিরোধী মত দমনে টর্চার সেল, ফ্রি খাওয়া, সিট বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বাণিজ্য, একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। তার ওপর ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোটাপ্রথা। এইসব বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এজন্য ছাত্রদের বাঁচা মারার লড়াই। সব স্তরের ছাত্র জনতা এই আন্দোলনে স্বপ্রণোদিত হয়েই অংশগ্রহণ করেছিল। সদা চঞ্চল উচ্ছ্বসিত মেধাবী সন্তান শহীদ নাজিম উদ্দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন। ৫ আগস্ট, সোমবার। স্বৈরাচার খুনি হাসিনার পতনের দিন। সেই সাথে এদেশের নিপীড়িত মানুষের মুক্তির দিনও এটি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেছে এই সাংবাদে চারিদিকে খুশির হিল্লোল বয়ে যায়। এই আনন্দে অবগাহন করতে শহীদ নাজিম উদ্দিনও বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সন্ত্রাস ও নৃশংসতায় সিদ্ধহস্ত পুলিশবাহিনী সেই বিজয় মিছিলে বেপরয়া গুলিবর্ষণ শুরু করে নিরীহ-নিরস্ত্র মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার উপর। ঘাতক পুলিশের সেই বেপরোয়া গুলিবর্ষণে একের পর এক গুলিবিদ্ধ হয়ে মানুষ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। শহীদ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের গায়ে কয়েকটি গুলি এসে বিদ্ধ হয়। একটি গুলি তার চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং মগজের রগ ছিঁড়ে যাওয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। স্বজনদের প্রতিক্রিয়া পরিবারের দাবি শহীদের হত্যাকারীদের যেন বিচার করা হয় এবং তাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হয়। শহীদ নাজিমুদ্দিন ছিলেন পরিবারের ছোট ছেলে। অভাব অভিযোগের সংসারেও তার আনন্দের কমতি ছিল না। অসুস্থ বাবা আর শ্রমজীবী মা তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। দুর্ভাগ্য আমাদের, দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হলো কিন্তু তার পরিবারের খুশি ম্লান হয়ে গেল। পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদের বাবা অসুস্থ। এক বোন ও এক ভাই এই চারজন নিয়ে তাদের সংসার। বাবা উপার্জনে অক্ষম হওয়ায় মা সার্ফ এক্সেল কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। তার আয়ে মূলত পরিবারটির দিন চলে যেত। টিনের ছোট খুপড়ি ঘরে সবাই মিলে কোন রকমে বেঁচে ছিলেন। শহীদ মো: নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর পর সবাই গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। এক নজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মো: নাজিম উদ্দিন পিতা : রোস্তম আলী (৫৫) মাতা : শিমুল আক্তার (৪২) জন্ম তারিখ : ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৫ স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম: ভাটগাঁও, ইউনিয়ন: চিরাম, থানা: বারহাট্টা, জেলা: নেত্রকোনা বর্তমান ঠিকানা : চেরাগ আলী, টঙ্গী, গাজীপুর আহত হওয়ার স্থান : আজমপুর, উত্তরা, ঢাকা আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৫টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৫টা, আজমপুর, উত্তরা আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী সরকারের ঘাতক পুলিশ শহীদের কবরস্থান : ভাটগাঁও, চিরাম, বারহাট্টা, নেত্রকোনা শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন অনুদান দেয়া যেতে পারে ২. বাসস্থান নির্মাণ করে দেওয়া যেতে পারে ৩. শহীদের বোনের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে ৪. অসুস্থ পিতার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার