Image of সাব্বির ইসলাম

নাম: সাব্বির ইসলাম

জন্ম তারিখ: ২ অক্টোবর, ১৯৮০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান : আশুলিয়া থানার সামনে, বাইপাইল, সাভার

শহীদের জীবনী

শহীদ সাব্বির ইসলাম ১৯৮০ সালের ২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান বানিয়াজান। বানিয়াজান গ্রামটির নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার অন্তর্গত। তার পিতার নাম মৃত শুক্কুর আলী এবং মাতার নাম মৃত আয়শা। চার সন্তানের জনক শহীদ সাব্বির ইসলাম স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন ঢাকার সাভারের বাইপাইল এলাকায়। তার স্ত্রী ফরিদা আক্তার (৪০) একজন গৃহিণী। তিনি পেশায় ছিলেন শ্রমিক। কাজ করতেন সাভারের একটি সরিষা তেলের কারখানায়। এই কারখানায় দিনরাত শ্রমের বিনিময়ে যে অর্থ উপার্জন করতেন তিনি, তা দিয়েই চলতো তার ছয় সদস্যের পরিবার। সাব্বির ইসলামের চার সন্তানের মধ্যে তিন মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে মো: মমিন মিয়া (১৪) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও বড় মেয়ে লিজা আক্তার (২১) বিবাহিতা। মেজো মেয়ে সাদিয়া আক্তার (১১) এবং ছোট মেয়ে নাদিয়া আক্তার (৯)। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন শহীদ সাব্বির ইসলাম। তার উপরে নির্ভরশীল ছিল পুরো পরিবার। গ্রামের বাড়িতে তাদের নিজস্ব কোনো জমিজমা নেই। তিনি জীবিত থাকাকালীন পুরো পরিবার নিয়েই ঢাকাতে থাকতেন। মৃত্যুর পর পরিবার গ্রামে গিয়ে তার বড় শ্যালকের বাড়িতে উঠেছেন। যেভাবে সাড়া দিলেন আল্লাহর ডাকে জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তার কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সাথে সাব্বির ইসলামও কর্মহীন হয়ে পড়েন। বন্ধ হয়ে যায় তার উপার্জন। বেকার হয়ে অবস্থান করছিলেন বাসায়। এর মধ্যে পরিবারের খাবার চাহিদায় হাতে জমানো টাকাও শেষ হয়ে যায় তার। পরিবারের খাবার চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল তাকে। শুরু হয় ধার-দেনা। বাকিতে বিভিন্ন দোকান থেকে কিনতে থাকেন বাজার সদাই। এক পর্যায়ে দোকানিরাও আর বাকি দিতে চাইছিলেন না। ফলে এ অবস্থায় তিনি মানসিকভাবে বেশ চাপে ছিলেন। অন্যদিকে সারাদেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে স্বৈরাচারের পেটুয়া বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা দেখে শাসক দলের উপর ক্ষোভ বাড়ছিল তার। ধীরে ধীরে সেই ক্ষোভ সহ্যের বাইরে চলে গেলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেন সাব্বির ইসলাম। দিনটি ছিল ৫ আগস্ট, ২০২৪, সোমবার। স্বৈরাচার পতনের দিন এবং ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত বিজয়ের দিন। এদিন সকাল ১০ টার দিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন তিনি। বিক্ষোভ করছিলেন আশুলিয়া থানার সামনে। হঠাৎ তাদের বিক্ষোভ আন্দোলনে ঘাতক পুলিশের গুলিবর্ষণ। গুলিবিদ্ধ হন সাব্বির। গুলিটি তার ডান কানের পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। রাতে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বানিয়াজান গ্রামে নিয়ে যান স্বজনেরা। পরদিন সকালে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। আরো যা জানা যায় শহীদ সাব্বির ইসলামের জীবন কেবল তার পরিবারের জন্যই নয়, সমগ্র জাতির জন্য একটি বেদনাময় অধ্যায়। নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার খিলা-বাউন্দি (বানিয়াজান) গ্রামের বাসিন্দা সাব্বির ইসলাম ছিলেন এক সংগ্রামী, পরিশ্রমী এবং পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যু একটি নিষ্ঠুর বাস্তবতা হয়ে উঠে এসেছে, যা তার পরিবারের জীবনকে চিরতরে বদলে দিয়েছে। সাব্বিরের মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, বরং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের জন্য একটি নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। সাব্বির ইসলাম ছিলেন চার সন্তানের জনক এবং অত্যন্ত পরিশ্রমী মানুষ। ঢাকার সাভারে একটি সরিষার তেলের কারখানায় কাজ করে তিনি। তার স্ত্রী ফরিদা বেগম ও চার সন্তানসহ পরিবারের ছয় সদস্যের ভরণপোষণ করতেন তিনি। তার জীবনের প্রতিটি দিন ছিল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত। শহীদ সাব্বির ইসলামের আচানক মৃত্যুতে তার পরিবারের স্বপ্নগুলো মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তার শোকাহত স্ত্রী ফরিদা বেগম পাগলপ্রায় হয়ে পড়েছেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, "আমার সব শেষ হয়ে গেল! এখন আমার প্রতিবন্ধী ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবো?" ফরিদার মতো একজন গৃহিণী, যার স্বামী ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তার জীবনে এখন অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই। ফরিদা আরো বলেন, "সাব্বির আন্দোলনে যোগ দেওয়ার সময় বলেছিল, 'বাজার সদাই নিয়ে আসব, না হয় জীবন দেবো! কিছু একটা ফয়সালা করেই ফিরব।' তিনি কথা রাখলেন কিন্তু ফিরলেন না।" তার এই বক্তব্য তার স্বামীর সংগ্রামী চেতনা এবং বীরত্বকে প্রতিফলিত করে। সাব্বিরের মৃত্যুতে সমাজের মানুষেরাও শোকাহত হয়েছেন। স্থানীয় মানুষ এবং তার বন্ধু-বান্ধবরা মনে করেন, সাব্বির একজন ভালো মনের মানুষ। তার শ্যালক মোহাম্মদ চঞ্চল মিয়া বলেন, "সাব্বির ছিলেন অত্যন্ত অমায়িক এবং পরিশ্রমী। তিনি সবসময় হাসিমুখে কথা বলতেন। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে পছন্দ করতেন ইঘচ-কে।" সাব্বিরের মৃত্যুর পর তার পরিবার চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। বর্তমানে তার পরিবার শ্যালকের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। কারণ তাদের নিজস্ব কোনো জমিজমা বা ঘরবাড়ি নেই। সাব্বিরের শ্যালক চঞ্চল মিয়া বলেন, "আমরা খুবই গরিব মানুষ। আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবন চালাই কিন্তু বোনের এই বিপদে যতটুকু পারছি, সাহায্য করছি। সাব্বিরের পরিবার ও এলাকাবাসী তার আত্মত্যাগকে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তার স্ত্রী ফরিদা বলেন, "আমি আমার স্বামীকে আর কখনো ফিরে পাবো না। কিন্তু আমি গর্বিত যে, তিনি শহীদ হয়েছেন। তিনি দেশের জনগণের মুক্তির জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। আমি তার মৃত্যুর ন্যায্য বিচার এবং দোষীদের শাস্তি চাই।" সাব্বিরের মৃত্যুতে তার পরিবারের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ফলে তার অনুপস্থিতিতে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তার ছোট ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত। সাব্বির ইসলামের মতো মানুষেরা আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, একটি আন্দোলনের পেছনে থাকে অনেক ব্যক্তিগত ত্যাগ। তার জীবন সংগ্রাম ও মৃত্যু আমাদেরকে জাতির মুক্তির পথের দিকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা জোগায়। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : সাব্বির ইসলাম জন্ম তারিখ : ২ অক্টোবর, ১৯৮০ পেশা : শ্রমিক পিতা : মৃত শুক্কুর আলী মাতা : মৃত আয়শা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বানিয়াজান, ইউনিয়ন: বানিয়াজান, থানা: আটপাড়া, জেলা: নেত্রকোনা স্ত্রী-সন্তান : স্ত্রী ফরিদা আক্তার, বয়স: ৪০, গৃহিণী পরিবারের সদস্য : ৩ মেয়ে, ১ ছেলে, বড় মেয়ে লিজা আক্তার, বয়স ২১, বিবাহিতা, মেজো মেয়ে সাদিয়া আক্তার, বয়স ১১, শিক্ষার্থী, ছোট মেয়ে নাদিয়া আক্তার, বয়স ৯, শিক্ষার্থী, একমাত্র ছেলে মোমিন মিয়া, বয়স ১৪, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : আশুলিয়া থানার সামনে, বাইপাইল, সাভার, ঢাকা; ৫ আগস্ট ২০২৪; সকাল ১০টা আঘাতের ধরণ : মাথায় গুলিবিদ্ধ আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী সরকারের ঘাতক পুলিশ কবরস্থান : নিজগ্রাম, নেত্রকোনা শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন ২. এতিম বাচ্চাদের লালন পালনের ভার নেওয়া প্রয়োজন

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of সাব্বির ইসলাম
Image of সাব্বির ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

রবিউল ইসলাম

আসীর ইনতিশারুল হক

শিফাত উল্লাহ

মো: সোহাগ মিয়া

মো:  হুমায়ুন কবির

 মোঃ রফিকুল ইসলাম

মো. শাহিন মাহমুদ শেখ

মো: রাহুল

মোখলেসুর রহমান

রহমত মিয়া

মো: লিটন

মো: আহাদুন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo