Image of মো: আলি হুসেন

নাম: মো: আলি হুসেন

জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : রাজলক্ষ্মী, উত্তরা, ঢাকা

শহীদের জীবনী

শহীদ আলী হুসেনের জন্ম ১৯৮০ সালের ২ জানুয়ারি। তার জন্মস্থান নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর গ্রামে। তার পিতা মৃত আসন আলী এবং মাতা বেদেনা বিবি। তার মা বর্তমানে একজন বয়োবৃদ্ধা মহিলা, তার বয়স ৬৫ পেরিয়েছে। শহীদ আলী হুসেন ছিলেন ভ্রাম্যমান দোকানি। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন পান সিগারেট। তার স্ত্রী খাইরুন্নেছা অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। স্বামী-স্ত্রীর যৌথ আয়ে পরিশোধ হতো ঋণ, চলতো বড় পরিবারের ভরণপোষণ। আলী হুসেনের পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে তিন কন্যা সন্তান; সাদিয়া (১৩), মারুফা (৬), মাহিবা (৩), বৃদ্ধা মা বেদেনা এবং অসুস্থ ছোট ভাই আবু বক্কর। তার বড় মেয়ে সাদিয়া একটি মহিলা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। শহীদ আলী হুসেন স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার উত্তরা ১৪ নং সেক্টরে। তার কন্যাদেরকে রাখতেন গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধা মায়ের কাছে। ঢাকার কষ্টের জীবনে যে ইনকামটুকু করতেন তারা, তা পাঠাতেন গ্রামে তার পরিবারে। এভাবেই চলছিল হত দরিদ্র আলী হুসেনের সংসার। এই নিরপরাধ নিরীহ মানুষটির মৃত্যুতে তার পরিবারের অবস্থা এখন দুর্বিষহ। যেভাবে শহীদ হন আলী হুসেন দারিদ্রের যাঁতাকলে পিষ্ট শহীদ আলী হুসেন সরাসরি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে এদেশে চলতে থাকা স্বৈরাচারি শোষক খুনি হাসিনার আওয়ামী সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মনে পুষে রেখেছিলেন সুপ্ত ক্ষোভ। হতদরিদ্র যে মানুষটির দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় করার জন্য পেরিয়ে যেত সারাটা দিন, যে মানুষটির মাথায় ছিল ঋণ পরিশোধের বোঝা, যে মানুষটির কাঁধে ছিল তিন-তিনটি কন্যা সন্তানকে লালনপালন করার ভার, অসুস্থ মা-ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ, সে মানুষটির অন্য কিছু নিয়ে ভাববার সময় কই? অথচ সেই মানুষটি যখন পেটের ভাত জোগাড় করতে নাভিশ্বাস তখন আন্দোলন চলাকালীন নরখাদক হাসিনার ঘাতক পুলিশের গুলিতে নিহত হতে হয়েছে নির্মমভাবে। দিনটি ছিল ১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার। সারাদেশের ন্যায় পুরো ঢাকা শহর ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল। অভাবের তাড়নায়, সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দিতে, বৃদ্ধ মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে এই উত্তাল আন্দোলনের মধ্যেও তাকে নামতে হয়েছিল রাস্তায়। পান-সিগারেট বিক্রির জন্য তখন তিনি অবস্থান করছিলেন উত্তরার রাজলক্ষ্মীতে। দুপুর আড়াইটা নাগাদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা সেখানে অবস্থান করছিল। ঠিক সেই সময় আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে স্বৈরাচার সরকারের আজ্ঞাবহ পিশাচ পুলিশ সদস্যরা গুলি নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এসময় আকস্মিক একটা বুলেট গিয়ে আঘাত হানে আলী হুসেনের পেটের বাম পাশে। সেই সাথে তার সারা শরীরে লাগে অসংখ্য ছররা গুলি। সাথে সাথে তিনি লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। ঘটনাস্থল থেকে ছাত্র-জনতা আলী হুসেনকে ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হয় কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। হাসপাতেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পর্যবেক্ষণের পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিভে যায় নিরীহ নিরপরাধ খেটে খাওয়া এক হত দরিদ্রের জীবন, যার দিকে চেয়ে ছিল এক অসহায় পরিবার। শহীদ সম্পর্কে সামগ্রিক বর্ণনা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ছোট ছোট শিশু কন্যাকে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ মায়ের কাছে রেখে বছরখানেক আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন আলী হুসেন। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলে স্ত্রী খাইরুন্নেছাকেও। ঢাকার উত্তরার মুন্সি মার্কেটে একটি ভাড়া বাসায় থেকে রাস্তার পাশে বসে পান-সিগারেট বিক্রি করতেন আলী হুসেন। কখনো কখনো রাস্তায় হেঁটে হেঁটে হাকারী করে চালাতেন তার ভ্রাম্যমান দোকান। স্ত্রী খায়রুন্নেছা কাজ করতেন মানুষের বাসাবাড়িতে। এভাবেই কষ্ট করে উপার্জিত টাকা প্রতি মাসে গ্রামে পাঠিয়ে ঋণ পরিশোধ করতেন এবং পরিবারের ভরণপোষণ চালিয়ে যেতেন। এই মেহনতী মানুষটির এভাবে নিহত হওয়ার খবরে নির্বাক তার তিন শিশুকন্যাসহ পরিবারের সবাই। হতবাক এলাকাবাসীও। আলী হুসেনের তিন মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারও। বাবা হারিয়ে মেয়েদের আহাজারি থামছেই না। এখন কে দেখবে তাদের। গ্রামের বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করে কোনোরকম সংসার চালিয়ে আসছিলেন আলী হুসেন। এতে অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে ভাগ্য ফেরাতে ঢাকায় চলে যান তিনি। উত্তরার আজমপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় বসেই অধিকাংশ সময় তিনি তার দোকানটি পরিচালনা করতেন। স্ত্রী খায়রুন্নেসা জানান, ১৮ জুলাই সকাল আটটার দিকে পান্তা ভাত খেয়ে দোকান নিয়ে বের হন তার স্বামী। তিনিও কাজে চলে যান। দুপুরে বাসায় খেতে গিয়ে দেখেন স্বামী আসেননি। অথচ প্রতিদিনই তিনি দুপুরে খেতে আসেন। একপর্যায়ে স্বামীর খোঁজে বাসা থেকে বেরিয়ে যান খাইরুন্নেছা। যেখানে স্বামী নিয়মিত দোকান নিয়ে বসতেন,সেখানে গিয়ে জানতে পারেন দোকানটি পাশের একজনের কাছে রেখে আলী হুসেন সামনে গিয়েছিলেন। কিন্তু ২-৩ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তিনি ফিরে আসেননি। পরে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে আলী হুসেনের মরদেহ পড়ে থাকার খবর পান। রাত প্রায় বারোটার দিকে হাসপাতাল থেকে অসহায় স্ত্রী তার স্বামীর লাশ নিয়ে কেন্দুয়ার গ্রামের বাড়িতে যান। পরদিন শুক্রবার সকাল আটটার দিকে দাফন করা হয় তাকে। তার স্বামী একজন সহজ-সরল মানুষ ছিলেন জানিয়ে খায়রুন্নেসা বলেন, "আমার সব শেষ হয়ে গেল! আমার ছোট ছোট তিনটি। অসহায় মেয়ে সন্তান নিয়ে আমি এখন কীভাবে চলবো, বুঝতে পারছি না। কে দেখবে আমাদের?" কাঁদতে কাঁদতে বড় মেয়ে সাদিয়া আক্তার বলে, "বাবাই ছিল আমাদের সব। বাবাকে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার চাই। আল্লাহ যেন খুনিদের সঠিক বিচার করেন।" স্থানীয় মোজাফরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকির আলম ভূঁইয়া বলেন,"আলী হুসেনের মৃত্যুর ঘটনাটি আমাদের চরমভাবে ব্যথিত করেছে। তিনি ছিলেন খুবই গরিব, একজন খেটে খাওয়া মানুষ। তার মৃত্যুতে পরিবারটি খুব অসহায় হয়ে পড়েছে। আমি তাদের নগদ ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছি। তবে পরিবারটিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সরকারি সহায়তা প্রদানের বিকল্প নেই।" মো: আলী হুসেন আজ তার পরিবারের জন্য একটি করুণ পরিণতি রেখে গেছেন, যারা শুধু তার হত্যার বিচারই চায় না, সেই সাথে সুন্দর ভবিষ্যতের আশাও করেন, যা আজ তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার পরিবার ও গ্রামবাসী শহীদ আলী হুসেনসহ নিরপরাধ সাধারণ মানুষ হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানায়। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: আলি হুসেন জন্ম তারিখ : ০২-০১-১৯৮০ শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : রাজলক্ষ্মী, উত্তরা, ঢাকা; ১৮ জুলাই ২০২৪, দুপুর: ২টা ৩০ মিনিট আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ আক্রমণকারী : স্বৈরাচারি সরকারের ঘাতক পুলিশ দাফনস্থল : নিজগ্রাম পেশা : ভ্রাম্যমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পিতা : মৃত আসন আলী মাতা : বেদেনা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম ও ইউনিয়ন: মোজাফরপুর, থানা: কেন্দুয়া, জেলা: নেত্রকোনা স্ত্রী-সন্তান : স্ত্রী খাইরুন্নেছা (গৃহিণী), ৩ কন্যা: সাদিয়া, মারুফা ও মাহিবা শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন ২. স্ত্রীর জন্য কর্মসংস্থানের প্রয়োজন ৩. শহীদের সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করা অতীব জরুরি

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আলি হুসেন
Image of মো: আলি হুসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মোহাম্মদ কবির হোসাইন

মো: কামাল হোসেন

মো: আশরাফুল ইসলাম

সাইফুল ইসলাম (সেকুল)

মো: আমিরুল ইসলাম

নাজমুল ইসলাম রাজু

মো: কাওসার মিয়া

তোফাজ্জল হোসেন খান

মোঃ শহিদ হোসেন

মো: ইমরান হোসাইন

মোঃ জামাল মিয়া

সাব্বির ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo