Image of শিফাত উল্লাহ

নাম: শিফাত উল্লাহ

জন্ম তারিখ: ১২ নভেম্বর, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : গাজীপুর, শ্রীপুর, ২ নং সি এন্ড বি বাজার

শহীদের জীবনী

কিশোরগঞ্জ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জেলা। এখানেরই এক উপজেলা জাঙ্গালিয়ার গ্রাম উত্তর চরকাওনায় জন্মগ্রহণ করে শিফাত উল্লাহ। শিফাত উল্লাহ আলেম পরিবারের সন্তান, তার বাবা যেমন আলেম ছিলেন তেমনি তার দাদাও। বাবা হাফেজ মাওঃ নুরুজ্জামান একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন, তেমনি মা মোছা: কামরুন্নাহার একটি মাদরাসার শিক্ষিকা। ও এই শিক্ষক দম্পতির কোলকে আলোকিত করে শিফাত উল্লাহ খুশির ঝরনা বইয়ে দিয়েছিল ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসের ১২ তারিখে। চার ভাইবোনের ভেতর দ্বিতীয় ছিল সে। পরিবারেই পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় তার। সবশেষ শ্রীপুর মাওনায় জামেয়া ইসলামিয়া এমদাদ উলুম মাদ্রাসায় সরহে বেকায়া জামাতে পড়াশোনা করত সে। সদা নম্র-ভদ্র একটি ছেলে ছিল শিফাত উল্লাহ। স্বপ্ন ছিল বাবার মতই একজন আলেম হয়ে দ্বীনের খেদমত করার। যেভাবে শহীন হন মো: শিফাত উল্লাহ ছেলে একজন বড় আলেম হবেন, এমনই স্বপ্ন ছিল শিফাত উল্লাহর আলেম বাবার। এজন্য ছেলেকে তিনি ঢাকায় পাঠান পড়াশোনা করানোর জন্য। গাজীপুরের শ্রীপুর মাওনায় ভর্তি হয় শিফাত উল্লাহ। সেখানের এক মাদরাসা জামেয়া ইসলামিয়া এমদাদ উলুম-এ সরহে বেকায়া জামাতে পড়ত সে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়ের দিন, ৫ আগস্ট, সোমবার। যেদিন সারাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের কুখ্যাত ও স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যায়, সেদিনও এই ডাইনি পান করে যায় অনেক শহীদের রক্ত। ঘটনার দিন, বিজিবির দুইটি গাড়ি যাচ্ছিল ময়মনসিংহের দিকে। এ সময় আন্দোলনকারীরা পল্লীবিদ্যুতের মোড়ে তাদের গাড়িকে আটকে দেন। বিজিবি সদস্যদের দিকে লোকজন ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মুহুর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এসময় আন্দোলনকারীরা কিছু বিজিবি সদস্যকে আটকে রাখেন এবং তাদের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেন। পরে দফায় দফায় সেখানে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর দুপুর দেড়টার দিকে সড়কজুড়ে আহত ও নিহতদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন শিফাতসহ অন্তত ৫ জন শহীদ হন। স্বজনদের বক্তব্য স্বপ্ন ছিল বড় আলেম বানানোর, যে খেদমত করবে আল্লাহর দ্বীনের। তেমনই সন্তানকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে গেল বাবা। কলিজার টুকরা সন্তানকে হারিয়ে কাতর মা। বাবা মাওলানা নুরুজ্জামান বলেন, “৫ আগস্ট সে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। বিজিবির গুলিতে আমার বাবা শহীদ হন। আমি জানতাম না। সন্ধ্যার পর মাদরাসার শিক্ষকেরা আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, আপনার ছেলে আল্লাহর নিয়ামত। আল্লাহ তাকে নিয়া গেছে। আপনারা এসে তার লাশ নিয়ে যান। আমার ছেলেকে হারিয়ে আমরা শোকাহত। আলহামদুলিল্লাহ, আমার ছেলে আল্লাহর নিয়ামত ছিল। আমার ছেলের আচার আচরণে এলাকার সবাই খুশি ছিল। সে তিন বছর পর দাওরা পাশ করত। তার স্বপ্ন ছিল সে দ্বীনের খেদমত করবে। সে আমার স্বপ্ন ছিল। তার ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ ছিল। তার শহীদ হওয়াতে সকলেই শোকাহত। সকলেই আফসোস করে এমন একটা ছেলে এলাকায় নাই। আল্লাহ তাকে পছন্দ করেছেন তাই তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন।” শহীদের বড় ভাই সাকিব বলেন, “আমার ছোট ভাই অনেক ভালো-ভদ্র ব্যবহারের ছিল। সে কখনো কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করত না। সে শহীদ হয়েছে। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন।” শহীদ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ শিফাতের বাবা ও মা দুজনই কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক কিন্তু তাদের মোট আয়ের পরিমাণ খুব বেশি নয়। শিফাতের দুটি বোন এখনও পড়াশোনা করছে। বড় ভাই বিবাহিত, তিনিও একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করছেন। শহীদ শিফাত উল্লাহর ব্যক্তিগত তথ্য নাম : শিফাত উল্লাহ জন্ম তারিখ : ১২.১১.২০০৫ শহীদ হওয়ার তারিখ ও সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪, রাত ৮টা আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকেল: ৫টা শহীদ হওয়ার স্থান : গাজীপুর, শ্রীপুর, ২ নং সি এন্ড বি বাজার আঘাতের ধরণ : গুলিবিদ্ধ হত্যাকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার বিজিবি বাহিনী সমাধিস্থল : পারিবারিক কবরস্থান পেশা : ছাত্র পিতা : হাফেজ মাওলানা নুরুজ্জামান মাতা : মোসা: কামরুন্নাহার স্থায়ী ঠিকানা : উত্তর চরকাওনা, জাঙ্গালিয়া, কিশোরগঞ্জ শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগীতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. বাবা ও মা দুজনই শিক্ষক কিন্তু মোট আয়ের পরিমাণ কম, ১৫০০০ টাকা মাত্র। তাদেরকে অর্থ সহায়তা করা যেতে পারে ২. শহীদের ছোট দুই বোনের পড়াশুনা সহ ভবিষ্যতের যাবতীয় বিষয়াবলীর নিশ্চয়তা দরকার ।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of শিফাত উল্লাহ
Image of শিফাত উল্লাহ
Image of শিফাত উল্লাহ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: তোফাজ্জল হোসেন

রমজান আলী

মো: কামাল হোসেন

আব্দুল্লাহ আল মাহিন

মো: নূরে আলম সিদ্দিকী

তনয় চন্দ্র দাস

মো: সোহাগ মিয়া

উমর ফারুক

সাব্বির ইসলাম

আ: আজিজ

সফিক মিয়া

শহীদ জাকির হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo