জন্ম তারিখ: ৩১ আগস্ট, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: দোকান কর্মচারী, শাহাদাতের স্থান : বোর্ডবাজার, গাজীপুর
হাওড় এলাকা হিসেবে কিশোরগঞ্জের রয়েছে বেশ সুখ্যাতি। চারিদিকে থই থই পানি, তার ভেতরেই মানুষের বসবাস চলছে। তেমনই এক এলাকা ভাটিনগর। ভাটিনগর কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। এখানেরই বাসিন্দা হরিকান্ত দাস ও সবিতা রানি দাসের কোলকে আলোকিত করে এক শিশুর আগমন হয়। যার নাম রাখা হয় তনয় চন্দ্র দাস। তনয় চন্দ্র দাস পৃথিবীর আলো-হাওয়ায় আগমন করে ২০০৫ সালের আগস্ট মাসের ৩১ তারিখে। যে শিশুর জন্মে সবাই হয়ে ওঠে উৎফুল্লিত বিশেষ করে বাবা এবং মায়ের মনে এনে দেয় সুখের পরশ। তনয় দাসের পূর্বে হরিকান্ত দাসের আরো দুই সন্তানের জন্ম হয়েছিল কিন্তু জন্মের পর তারা উভয়েই মারা যায়। এজন্য তনয় দাসের জন্ম পরিবারকে করে তোলে অনন্য সুখে আলোকিত। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকে পরিবার। বলা যায়, নতুন করে সুখী ও আশাবাদী হয়ে উঠেছিল পরিবারটি। ছোটবেলাতেই পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়েছিল তনয় চন্দ্র দাসের। প্রাইমারি ও মাধ্যমিক লেভেল শেষ করে সে ভর্তি হয় কুরিয়ার চর সরকারি ডিগ্রি কলেজে। এখানে সে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছিল। তনয় ছিল মেধাবী কিন্তু পারিবারিক দারিদ্রতা ছিল তার সঙ্গী। এজন্য তনয় যোগ দেয় কাজে। ঢাকার গাজীপুরের বোর্ডবাজারে একটি দোকানে সে কাজ করত। তনয়ের শহীদ হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তখন বেশ জোরেশোরে চলছে। সারাদেশের বিপুল ছাত্র-জনতা নেমে এসেছে রাজপথে। এদিকে সরকার বন্ধ করে দিয়েছে ইন্টারনেট। সবখানে চলছে যোগাযোগহীনতা কিন্তু থেমে নেই আন্দোলন। সবাই যে যার জায়গা থেকে নিজস্ব উদ্যোগেই নেমে পড়ছেন রাস্তায়। দিন থেকে দিন আন্দোলন আরো কঠোর হচ্ছে। সারাদেশের অন্যান্য জায়গার মত তখন ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল গাজীপুরের বোর্ডবাজারেও। এখানেই থাকত তনয় চন্দ্র দাস। সে একটি দোকানের কর্মচারী হিসেবে ছিল। তারসাথে সেখানে কর্মচারী ছিলো আরোও চারজন। ঘটনার দিন তারা কয়েকজন মিলে, তাদের নিত্যদিনকার কাজের ফাঁকে চা-নাস্তা করতে বের হয়েছিল দোকান থেকে। বোর্ডবাজার দিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাপকহারে গোলাগুলি চলছিল। সেখানের একটি গুলি এসে লাগে তনয় চন্দ্র দাসের গলায়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু ততক্ষণে সে মৃত্যুবরণ করে। নেমে এলো শোকের ছায়া পরপর দু’সন্তানের মারা যাওয়ার পর, তনয় চন্দ্র দাসের জন্ম বেশ আনন্দিত করে তুলেছিল পরিবারকে। কিন্তু হায়! হায়াতের মায়া তাকে শেষ করতে হলো। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার রক্ত পিপাসা কেড়ে নিলো তনয় চন্দ্র দাসের জীবনকে। পরিবারের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আরো নিঃস্ব হলো বাবা। কলিজার টুকরো ধনকে বিদায় দিয়ে দিশেহারা মা। মা সবিতা রানী দাস ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার ছেলে কী দোষ করেছিল? আমার নিষ্পাপ নিরপরাধ ছেলেকে কেন গুলি করে মারা হলো? আমি কার কাছে বিচার দিব?” তিনি কাঁদতে কাঁদতে আরো বলেন, “আমার ছেলে কখনোই আমাকে ছাড়া ভাত খেতো না। সে সবসময় সবার সাথে ভালো ব্যবহার করত। সবার সাথে হাসিমুখে কথাবার্তা বলত। আমার ছেলেকে আমি অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি। আমার একটা মাত্র সন্তান।” শহীদ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা তনয় চন্দ্র দাসের বাবা হরিকান্ত দাস পেশায় একজন জেলে। তার মা একজন গৃহিণী। হরিকান্ত দাসের আর কোনো সন্তান নেই। হরিকান্ত হাওড়ে মাছ ধরে বিক্রি করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে। তার আর কোনো আয়ের উৎস নেই। মাসিক আয় আট হাজার টাকার মত। এক নজরে তনয় চন্দ্র দাসের ব্যাক্তিগত তথ্য নাম : তনয় চন্দ্র দাস জন্ম তারিখ : ৩১.০৮.২০০৫ শহীদ হওয়ার তারিখ ও সময় : ২০.০৭.২০২৪, রাত ৮টা আহত হওয়ার সময় : সন্ধ্যা ৬টা শহীদ হওয়ার স্থান : বোর্ডবাজার, গাজীপুর আঘাতের ধরণ : গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সমাধিস্থল : নিজ গ্রাম পিতা : হরিকান্ত দাস মাতা : সবিতা রানী দাস স্থায়ী ঠিকানা : ভাটিনগর, হুমাইপুর, অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. বাসস্থান করে দেয়া ২. বাবার জন্য ভালো কোনো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান করে দেয়া