জন্ম তারিখ: ৬ জুলাই, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা: কাঠমিস্ত্রি, শাহাদাতের স্থান: কাজলা যাত্রাবাড়ী
অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক সাহসী তরুণ শহীদ জোবায়েদ। জীবনযুদ্ধে অভাব-অনটনের সাথে লড়াই করা একটি দরিদ্র পরিবারের বড় সন্তান ছিলেন মো: জোবায়েদ। কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার গকূল নগর গ্রামে ২০০৭ সালের ৬ জুলাই জন্মগ্রহণ করে সে। বাবা নাজির হোসেন সি.এন.জি চালক এবং মা হোসনারা বেগম একজন গৃহিণী। ছোট্ট এই পরিবারটি জীবিকার তাকিদে নিয়মিত সংগ্রাম করে চলছিল। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে মো: জোবায়েদ দায়িত্ববোধে পরিপূর্ণ ছিলেন। জোবায়েদ ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন কিন্তু পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে তার শিক্ষাজীবন বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারেননি। সপ্তম শ্রেণির পর পড়াশোনা বন্ধ করে তাকে কাজের পথে নামতে হয়। জীবিকার তাকিদে তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ বেছে নেন। পরিবারের আরো আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য ছোট ভাই যোনায়েরকেও তার পথ ধরতে হয়। যোনায়ের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর একটি টেইলারিং দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করে। জোবায়েদের বাবা নাজির হোসেনও একজন সাহসী মানুষ। এত দারিদ্রতা সত্তেও তিনি ছিলেন এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার। জোবায়েদের শহীদ হওয়া পরিবারের আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে জোবায়েদ ঢাকায় এসেছিল কাজের জন্য। সে আসে ঢাকার শনির আখড়াতে। এখানেই কাজে যোগ দেয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম থেকেই সে ছিল সক্রিয় একজন। আন্দোলনের প্রতি ছিল গভীর ভালোবাসা। এর মাধ্যমেই সে সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের প্রকাশ ঘটিয়েছে। তার মা হোসনারা বেগম তার আন্দোলনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে সবসময়ই উদ্বিগ্ন থাকতেন। মা তাকে প্রথমবার আন্দোলন থেকে খুঁজে বের করে আনলেও সে থেমে থাকেনি। ১৯ জুলাইয়ের একটি আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের পরও, জোবায়েদ ৫ আগস্টের আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করে। এই দিনটি তার জন্য মর্মান্তিক হয়ে থাকলো। ৫ আগস্ট, সোমবার, সকাল ১০ ঘটিকা। জোবায়েদ বাসা থেকে বের হয়। প্রথমে দোকানে যায় কাজের জন্য কিন্তু ১টার দিকে সে যাত্রাবাড়ীর কাজলার দিকে রওয়ানা দেয় আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য। দুপুর ২টার দিকে কাজলায় যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনার লেলিয়ে দেয়া ঘাতক পুলিশের গুলিতে তার মাথায় এবং চোখে আঘাত লাগে। সেই মুহূর্তে ঠিক কারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল তা পরিবারের কেউ জানত না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর, অবশেষে রাত ১১.৩০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে তার নিথর দেহ খুঁজে পাওয়া যায়। গভীর রাত ৪ টায় জোবায়েদের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় তার পরিবার। মায়ের বক্তব্য জোবায়েদ শহীদ হওয়ার পর থেকে শোকের সাগরে ভাসে পুরো পরিবার। মায়ের বুকে নেমে আসে এক ঘন অন্ধকার শোকের ছায়া। মা হোসনারা বেগম বলেন- “ আমার ছেলে শহীদ জোবায়েদ ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পড়াশোনায় সে ভালো ছিল। অভাবের কারণে বেশি পড়াশোনা করতে পারেনি। পাঁচ-ছয় মাস আগে শনির আখড়ায় কাজের জন্য আসে। প্রথম আন্দোলনে সে অংশগ্রহণ করে, আমি খুঁজে বের করে তাকে নিয়ে আসি। পরে ৫ আগস্ট বড় আন্দোলনে সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ” কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা আরো বলেন, “ আমি পুত্রের জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করি। ছেলে আসে না, আমি খাবার না খেয়ে থাকি। ৩-৪টা বাজে আমার মন মানে না, অশান্তি লাগে। আমরা খোঁজ করতে বের হয়ে পড়ি। সারা যাত্রাবাড়ীর কোনো হাসপাতালে খুঁজে পাই না। এক হাসপাতাল থেকে বলা হয় আপনারা ঢাকা মেডিকেলে যান। ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে আমরা মর্গে তার লাশ খুঁজে পাই। ” কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তিনি আরো বলেন, “ যখন আমার পুত্রের লাশ দাফন কাফনের জন্য প্রস্তুত করা হয় তখন আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি নাই। আমার ছেলে আন্দোলন ভালোবাসত। আমি না বললেই বলত অত কথা বইলো না মা। আমার সমবয়সীরা আন্দোলন করতেছে, আজ দেশ স্বাধীন হবে। আমি সরকারের কাছে বিচার চাই। সরকার যেন আমাদের পাশে থাকে। আমার মত আর কোনো মা যেন তার অল্প বয়সের সন্তান হারা না হয়। ” পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা জোবায়েদ অর্থসংকটে কাজে যোগ দিয়েছিল, তার ছোট ভাইও একটি টেইলারে যোগ দিয়েছে। বাবা নাজির হোসেন সিএনজি চালক, তার মাসিক আয় ১৫ হাজারের মত। শহীদ জোবায়েদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : জোবায়েদ জন্ম তারিখ : ০৬.০৭.২০০৭ শহীদ হওয়ার তারিখ ও সময় : ০৫.০৮.২০২৪, দুপুর ২:৩০ শহীদ হওয়ার স্থান : কাজলা যাত্রাবাড়ীর কাছাকাছি ফ্লাইওভারের মুখে আঘাতের ধরণ : মাথায় ও চোখে গুলি লাগে আঘাতকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক পুলিশ সমাধিস্থল : নিজ গ্রাম পিতা : নাজির হোসেন মাতা : হোসনারা বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গকূল নগর, আগা নগর, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. এককালীন আর্থিক সহযোগীতা করা ২. ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার ব্যাবস্থা করা