Image of মো: রাহুল

নাম: মো: রাহুল

জন্ম তারিখ: ১০ মে, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান: যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে

শহীদের জীবনী

বাবা-মায়ের চক্ষু শীতলকারী এক সন্তান শহীদ মো: রাহুল। একইসাথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী যুবক। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায় জন্ম তার। এখানের এক গ্রাম পাটুনিতে ২০০২ সালের মে মাসের ১০ তারিখে বাবা মিজান ও মা রুমা আক্তারের কোল আলোকিত করে পৃথিবীর আলো হাওয়ায় আগমন করে শহীদ রাহুল। রাহুল ছিল বেশ ভদ্র একটি ছেলে। ছোটবেলা থেকেই পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছে সহজ-সরল, সৎ ও চরিত্রবান হিসেবে সুনাম ছিল। সকলের ভালোবাসার পাত্র ছিল সে। রাহুল প্রাইমারি ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হয়েছিল কলেজে। বাজিতপুর সরকারি কলেজের ছাত্র ছিল সে। অভাব-অনটনের পরিবারে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে রাহুল চলে গিয়েছিল ঢাকায়। এখানে এসে একটি জুতার দোকানে কাজ করত সে। নিজের পড়াশোনা, ঢাকায় থাকার খরচের পাশাপাশি পরিবারকেও কিছুটা খরচের যোগান দিত সে। রাহুল ছিলো পরিবারের আশার আলো। শহীদ হওয়ার ঘটনা ১৮ জুলাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন তখন বেশ জোরালো হচ্ছে। সারাদেশেই পালিত হচ্ছে আন্দোলন। বিক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সরকার সবখানেই কঠোরভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। পাখির মত গুলি করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে অহরহ। আন্দোলনকে দমন করার জন্য বন্ধ করে দিয়েছে সারাদেশের ইন্টারনেট। আন্দোলনকারীরা একে অপরের সাথে সারাদেশে যোগাযোগ করতে পারছে না। যে যার মত ভাইটাল পয়েন্টগুলোতে আন্দোলনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনই একটি পয়েন্ট ঢাকা যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এসে আন্দোলনে যোগ দেয় মো: রাহুল। ছাত্র-জনতার সাথে নিজেকেও তুলে ধরে কোটাবিরোধী আন্দোলনে। কিন্তু স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে। টিয়ার শেল গ্যাসের তীব্রতায় শ্বাসকষ্ট শুরু হয় রাহুলের। সহযোদ্ধা বন্ধুদের সহায়তায় তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হতে শুরু করে। তাকে বাজিতপুরের জহিরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ আছে, সেখানে করা হয়নি তাকে ঠিকমতো চিকিৎসা। এমনকি তাকে দেখানো হয় ভয়-ভীতি। যা তার অসুস্থতার ভেতর দাঁড়ায় আরেক বিভীষিকা হয়ে। ১৪ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা চলেছে রাহুলের। এরপর তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তখনও শরীর ভালো হয়নি। অবস্থা আরো খারাপ হলে আবারও তাকে জহিরুল মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানের ডাক্তারগণ তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যুবরণ করে রাহুল। দিনটি ছিলো ৮ আগস্ট ২০২৪। স্বজনদের বক্তব্য নম্র-ভদ্র মো: রাহুলের জীবনাবসানের পর পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। মা-বাবা হয়ে যান দিশেহারা। শোকার্ত বাবা মো: মিজান বলেন, “ আমার ছেলে আন্দোলনের আগে ফোনে বলল আমি আন্দোলনে আছি। আমার জন্য তোমরা চিন্তা করবা না। তারপর তো আমার ছেলে টিয়ার গ্যাসে আহত হয়। সে আমার সংসারের হাল ধরত। সে এখন আর নেই।” ছোট ভাই রাতুল বলেন, “শহীদ রাহুল আমার বড় ভাই, তিনি ঢাকায় আন্দোলনে শহীদ হন। ভাইয়া বাজিতপুর কলেজে পড়াশোনা করতো। ঢাকায় একটি জুতার দোকানে কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাত এবং পরিবারকে টাকা দিত। সে বড় ভাই হিসেবে নিজের পাশাপাশি আমাদের পরিবারেরও খেয়াল রাখত। আমার ভাই অনেক ভালো ছিল। আমাকে অনেক আদর করতো। আমাদের পরিবারের আশার আলো ছিল রাহুল ভাইয়া। আমরা গর্বিত, কারণ আমার ভাই দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। ” শহীদ রাহুল এলাকার মানুষের প্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুতে সবার ভেতর শোক নেমে এসেছে। তার আত্মত্যাগের কথা সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে। শহীদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ রাহুলের বাবা বালুর ট্রলারের চালক। তার ছোট ছেলে বাবাকে সহযোগীতা করে। মাসিক আয় ১২০০০ টাকার মত। এছাড়া আয়ের অন্য উৎস নেই। শহীদের এক বোন পড়াশোনা করে। এক নজরে শহীদ রাহুলের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: রাহুল পেশা : ছাত্র পিতা : মিজান মাতা : রুমা আক্তার স্থায়ী ঠিকানা : পাটুনী, দিঘীরপাড়, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ জন্ম তারিখ : ১০.০৫.২০০২ আহত হওয়ার তারিখ : ১৮.০৭.২০২৪, দুপুর: ২.৩০ শহীদ হওয়ার তারিখ ও সময় : ০৮.০৮.২০২৪, বিকেল: ৫টায় শহীদ হওয়ার স্থান : যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে আঘাতের ধরণ : টিয়ার গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে আঘাতকারী : ঘাতক পুলিশ সমাধিস্থল : নিজ গ্রাম শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগীতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. পরিবারের স্থায়ী কোনো আয়ের ব্যাবস্থা করা ২. পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ৩. শহীদের ছোট বোনের পড়াশুনার পাশাপাশি ভবিষ্যতের সকল খরচের নিশ্চয়তা প্রদান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রাহুল
Image of মো: রাহুল
Image of মো: রাহুল

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আহাদুন

মো: ইমরান হোসাইন

মো. শাহিন মাহমুদ শেখ

মো:  শাকিবুল হাসান সাজু

মো: আলি হুসেন

 মোহাম্মদ কবির হোসাইন

মো: মাজিদুল

জসিম উদ্দিন

মো: মাছুম বিল্লাহ

মো:  হুমায়ুন কবির

 মোঃ রফিকুল ইসলাম

মো: বকুল মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo