Image of মো: রুবেল

নাম: মো: রুবেল

জন্ম তারিখ: ১০ অক্টোবর, ১৯৮৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ব্যবসা , শাহাদাতের স্থান: কালিবাড়ি রোড, (থানার পশ্চিম পাশে), কিশোরগঞ্জ সদর

শহীদের জীবনী

শহীদ আব্দুল্লাহ রুবেল কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার নোয়াবাদ ইউনিয়নের সিন্দ্রীপ গ্রামে ১৯৮৯ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো: আজহারুল ইসলাম (৬৩) সরকারি চাকরি করতেন। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত এবং অসুস্থ। মা মোসা: মাহমুদা আক্তার (৫০) একজন গৃহিণী। তারা পাঁচ ভাইবোন। রুবেল ছিলেন মেজ এবং বিবাহিত। তার এক ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। তারা পড়াশোনা করে। কিশোরগঞ্জ সদরে তিনি ব্যবসা করতেন। পরোপকারী এবং অনেক ভালো মনের মানুষ শহীদ রুবেল। কেউ অসুস্থ হয়েছে শুনলে তার সাথে দেখা করতে যেতেন, প্রয়োজন হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেন। রোগীর সেবা করতেন। মাঝে মধ্যে তাবলীগের সাথে চিল্লায় যেতেন। মসজিদ মাদ্রাসার খেদমত করতেন। ৪ আগস্ট শহীদ রুবেল সকাল দশটায় বাসা থেকে বের হয়ে নিজের দোকানের দিকে যান। কিন্তু দোকান না খুলে তিনি ছাত্র-জনতার সাথে আন্দোলনে যোগ দেন এবং অনেক মানুষকে পানি পান করান। আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতাকে নিয়ে মেডিকেলে দৌড়ঝাঁপ করেন অনেকক্ষণ। এরপর আবার বাসায় ফিরে এসে ৩০ মিনিটের মত বিশ্রাম নেন। আবার আন্দোলনে যোগ দেন এবং সবাইকে পানি পান করান। ইতিমধ্যে তিনি ঘাতক পুলিশদের নিক্ষিপ্ত টিয়ার শেলের ভিতরে পড়েন। এত দৌড়ঝাঁপ, পরিশ্রম আর টিয়ারশেলের গ্যাসের কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন। তাকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা তাকে রেফার করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ওখানে নেওয়ার পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট একজন ভালো মনের পরোপকারী মানুষ ছিলেন শহীদ মোঃ রুবেল। ভালো-মন্দের পার্থক্য তিনি ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। কোটাপ্রথা একটি চরম অবিচার। তাই সারা বাংলার মানুষের কন্ঠে কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল- ” কোটা না মেধা মেধা মেধা ”। সরকারের এই অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সারা বাংলার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। কোটা নামক এই বৈষম্যের নীতি তারা বাস্তবায়িত হতে দিবে না। যার যার অবস্থান থেকে তাইতো মানুষ এই আন্দোলনের সমর্থনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শহীদ মো: রুবেলও এইসব প্রতিবাদী মানুষদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিজের ইচ্ছায় যোগদান করেছিলেন। ধর্মপ্রাণ এই মানুষটার কাছে কোটাবিরোধী ছাত্রদের মাঠকে মনে হয়েছিল একটি যুদ্ধের মাঠ। এই মাঠে তিনি পানি নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে। আহত নিহতদের সেবার পাশাপাশি তিনি তাদের পৌঁছে দিচ্ছিলেন হাসপাতালে। সারাদিনের দৌড়াদৌড়ি আর অন্যের সেবা করতে গিয়ে তিনি হয়ে পড়েছিলেন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। সরকারের অনুগত পেটুয়া বাহিনী মুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট আর অসংখ্য টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিবেশকে বিষিয়ে দিয়েছিলেন। এই বিষাক্ত পরিবেশে ধোঁয়ায় ক্লান্ত পরিশ্রান্ত কল্যাণকামী মানুষের প্রতিচ্ছবি শহীদ মোঃ রুবেল জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে তার সহকর্মীরা দৌড়াদৌড়ি করেন। কিন্তু তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মানুষের পরম কল্যাণকামী এই পরোপকারী মানুষটি মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। শহীদের স্বজনদের প্রতিক্রিয়া শহীদ মোহাম্মদ রুবেল ছিলেন অতি বিনয়ী মানুষ। শহীদের মামা লুৎফর রহমান লতিফ বলেন, ” রুবেল অনেক ভালো পরোপকারী মানুষ ছিল। কেউ অসুস্থ শুনলে সাথে সাথে তাকে দেখতে যেত।” শহীদ রুবেলের ভাগ্নে আল আমিন বলেন,’’আব্দুল্লাহ মামা অনেক ভালো মানুষ ছিল। তার মৃত্যুর সংবাদে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। দুপুরে জোহরের নামাজ পড়তে যাব এমন সময় শুনলাম রুবেল মামা মারা গিয়েছেন। উনি আমাকে সন্তানের মত ভালবাসতেন, গ্রামের বাড়ি আসলে আমার খোঁজ খবর নিতেন। অল্প বয়স হলেও সবার ভালবাসা অর্জন করেছেন। তিনি সবসময় গরীব মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, সাহায্য করতেন। এক এতিম মহিলাকে উনি দেড় বছর যাবত খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। মামা মারা যাওয়ার পর উনি এসে কান্না করতে করতে বলেন এখন আমাকে কে খাওয়াবে? এটা শোনার পর থেকে রুবেল মামার বাবা ঐ মহিলাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন।” শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ রুবেল নিজের ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত (সরকারি চাকরি করতেন)। তিনি মাসে ১০,০০০ টাকা পেনশন পান। তার আরো দুই ভাই ও দুই বোন রয়েছে। এক ভাই ও দুই বোন পড়াশোনা করে। বড় ভাই মারুফ মিষ্টির দোকানে কর্মচারী হিসেবে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে শ্রম দেন। শহীদের বাবা ও ভাই তাদের উপার্জন থেকে সামান্য আর্থিক সহযোগিতা করছেন শহীদ রুবেলের স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য। শহীদের স্ত্রী মাজেদা (২৭ ) একজন গৃহিণী। তাদের ঘরে জান্নাতুল ফেরদৌস নুন(১০), জান্নাতুল মাওয়া (৮) এবং মুহাম্মদ (৩) নামে তিন ছেলে মেয়ে রয়েছে। মেয়ে দুইটা পড়াশোনা করে। ভাই তোফায়েল (২২) বোন সুমাইয়া (২৪) এবং মুনিয়া(২১) অনার্সের শিক্ষার্থী। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: রুবেল পিতা : মো: আজহারুল ইসলাম মাতা : মোসা: মাহমুদা আক্তার জন্ম তারিখ : ১০ অক্টোবর, ১৯৮৯ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: সিন্দ্রিপ, ইউনিয়ন: নোয়াবাজার, থানা: করিমগঞ্জ, জেলা: কিশোরগঞ্জ আহত হওয়ার স্থান : কালিবাড়ি রোড, (থানার পশ্চিম পাশে), কিশোরগঞ্জ সদর আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট, ২০২৪, দুপুর: ১২ টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৪ আগস্ট, দুপুর ১টা, কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে যাদের আঘাতে শহীদ : ঘাতক পুলিশ শহীদের কবরস্থান : সিন্দ্রিপ, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন অনুদান দেয়া যেতে পারে ২. শহীদের ক্রয়কৃত জমিতে বাসস্থান নির্মাণ করে দেওয়া যেতে পারে ৩. শহীদের ছেলে-মেয়ের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে ৪. শহীদের স্ত্রীর কর্মসংস্থানে সহায়তা করা ৫. শহীদের বোনদের বিবাহে সহায়তা করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রুবেল
Image of মো: রুবেল

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

তোফাজ্জল হোসেন খান

 মোঃ রফিকুল ইসলাম

মো: মাজিদুল

মো: সামিদ হোসেন

রবিউল ইসলাম

মো: আমিরুল ইসলাম

কুদ্দুস মিয়া

উমর ফারুক

মো: আব্দুল নুর

মো: রবিউল ইসলাম রকিব

মো:  উবায়দুল হক

মো: আনারুল ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo