Image of রহমত মিয়া

নাম: রহমত মিয়া

জন্ম তারিখ: ১২ ডিসেম্বর, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা:গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : মাওনা, চৌরাস্তা, গাজীপুর

শহীদের জীবনী

শহীদ রহমত মিয়া বগুড়া জেলার জামতল গ্রামে ১২ ডিসেম্বর ২০০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দিনমজুর পিতা মঞ্জু মিয়া কৃষিকাজ করেন। মা সুফিয়া বেগম গৃহিণী। ২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি গাজীপুরে এস এম নেটওয়ার্ক লিমিটেড কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন। এই গার্মেন্টস কর্মী সুইং অপারেটরের দায়িত্ব পালন করতেন। ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিজয় পরবর্তী সময়ে বিজিবির গুলিতে তিনি শহিদ হন।শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ৫ আগস্ট ২০২৪। স্বৈরাচার হাসিনার পতন হয়। একই সাথে বড় রকমের ধাক্কা খেল আগ্রাসী ভারত এ দেশ যেন দ্বিতীয় বারের মত স্বাধীনতা অর্জন করে। পুরো দেশের মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। রাস্তায় বেরিয়ে এসে আপামর জনসাধারণ উল্লাস শুরু করে। এই বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ জোয়ারে তারা যেন খেই হারিয়ে ফেলে। বুক-হাতে-মাথায়-কবজিতে পতাকা বেঁধে, কেউবা সন্তানকে কাঁধে নিয়ে, বউ ছেলেমেয়ে সহ পুরো পরিবার নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। এই মাহেন্দ্রক্ষণের, এই বিজয়ের, এই শুভ লগ্নের সবাই সাক্ষী হতে চায়। দীর্ঘ ১৬ টা বছর। কি দুর্বিষহ যন্ত্রণাই না পাড়ি দিতে হয়েছে এদেশের মানুষকে। জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছিল ভারতের সেবাদাস খ্যাত আওয়ামী হায়েনা গোষ্ঠী। মানুষ ধরেই নিয়েছিল হয়তো বা আর এই জগদ্দল পাথরকে নামানো সম্ভব না। তাইতো এই ফ্যাসিস্ট খুনি সরকারের পতনে এমন বাধ ভাঙ্গা উল্লাস। দুপুর দুইটার খাবারের পর এলাকার বাসা থেকে বের হন শহীদ রহমত মিয়া। যোগদেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। বিজয়ের এই মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী সেনাবাহিনীর গাড়িতে উঠে পড়েন তারা কয়জন বন্ধু। বন্ধুরা গাড়ি থেকে নেমে গেলেও তিনি ঘোরার আশায় আরো দূর চলে যান। দেশটা স্বাধীন আজ মনের মত করে ঘুরবো, গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যাব। কিছুদূর যাবার পর রহমত মিয়া গাজীপুর চৌরাস্তায় নেমে যান এবং আবারো আন্দোলনকারীদের সাথে যোগদান করেন। এখানে আটকাপড়া বিজিবি জনগণকে ভয় দেখানোর লক্ষ্যে আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়ে। আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিছু আন্দোলনকারী আবারও একত্রিত হয়ে পথ রোধ করে দাঁড়ায়। এবার বিজিবি আন্দোলনকারীদের দিকে গুলি ছুঁড়ে। এ সময় একটি গুলি রহমত মিয়ার ডান বগলের পাশ দিয়ে ঢুকে পিট দিয়ে বেরিয়ে যায়। রহমত মিয়া কিছুক্ষণ পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তবে তার মৃতদেহ আলহেরা মেডিকেল সেন্টারে পাওয়া যায়। শহীদের স্বজনদের প্রতিক্রিয়া শহীদ রহমতের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত ছোট ভাই আল আমিন বলেন, ’’ বড় ভাই আমাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করে আমাকে বাসাতেই থাকতে বলেছিলেন। আমাকে বাসায় থাকতে বলে সে নিজেই আন্দোলনে যাবে এবং পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিবে সেটা আমি কখনোই বুঝতে পারিনি।” শহীদ রহমতের প্রতিবেশী মো: আশরাফ বলেন, ”রহমত বেশ শান্তশিষ্ট ভালো ছেলে ছিল। কয়েক বছর যাবত গার্মেন্টসে চাকরি করে পরিবারকে সহযোগিতা করত। আচার ব্যবহার বেশ ভালো ছিল। আমরা এলাকাবাসী তার মত মানুষ হারিয়ে শোকাহত। আমরা এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই এবং রহমতকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শহীদ হিসেবে ঘোষণা করে ও তার পরিবারকে সুযোগ-সুবিধা দেয় সেই দাবি জানাচ্ছি।” শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ রহমত আলীর বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দির দুর্গম চর জামথল এলাকায়। তার বাবা মঞ্জু মিয়া একজন দিনমজুর, যিনি নিজের ভিটেমাটি হারিয়ে বর্তমানে একটি ইউপি সদস্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘদিনের নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে তারা অনেক কিছু হারিয়েছেন। পরিবারের অভাব ঘুচাতে শহীদ রহমত আলী পড়াশোনা ছেড়ে গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন পরিবারের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ ও একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। জামথল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম রিপন বলেন, ”নিহত রহমানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ যে অভাবের তাড়নায় রহমত পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে গার্মেন্টসে গিয়েছে চাকরি করতে। এখন তার পরিবার একেবারেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাবার দিনমজুরির আয় ও গ্রামবাসীর সহায়তায় এখন তাদের সংসার চলছে।” ভাই আল আমিন ছাত্র এবং পুত্রশোকে কাতর বাবা এখনো কাজ করতে পারছেন না। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : রহমত মিয়া পিতা : মঞ্জু মিয়া মাতা : সুফিয়া বেগম জন্ম তারিখ : ১২ ডিসেম্বর ২০০৫ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: জামথল, ইউনিয়ন : কাজলা, থানা: সারিয়াকান্দি, জেলা: বগুড়া আহত হওয়ার স্থান : মাওনা, চৌরাস্তা, গাজীপুর আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, দুপুর ৩.৩০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট, বিকাল ৪টা যাদের আঘাতে শহীদ : ঘাতক বিজিবি শহীদের কবরস্থান : জামথল কাজলা, সারিয়াকান্দি, বগুড়া শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন অনুদান দিতে হবে ২. শহীদের স্বজনদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করতে হবে ৩. শহীদের ভাইয়ের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে ৪. শহীদের পিতা মাতাকে মাসিক অর্থ সহায়তা দেওয়া দরকার

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of রহমত মিয়া
Image of রহমত মিয়া
Image of রহমত মিয়া

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো:  শাকিবুল হাসান সাজু

মো: এ কে এম শহীদুল ইসলাম

মো: সাদিকুর রহমান

মো: জুবাইদ ইসলাম

মো: শাহজাহান

মো: মাসুম শেখ

মো: নূরে আলম সিদ্দিকী

হৃদয় মিয়া

মো: আহাদুন

মো: কামাল হোসেন

মো: মাজিদুল

শিফাত উল্লাহ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo