জন্ম তারিখ: ৩ জুলাই, ১৯৮৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা : পোল্ট্রি ফার্মের কর্মচারী শাহাদাতের স্থান : সাভার
শহীদ মো: ফারুক জামালপুরের ডেংগারনগর গ্রামে ১৯৮৫ সালের ৩ জুলাই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা মৃত হায়দার আলী এবং মা মৃত ফাতেমা। তিনি ছিলেন পোল্ট্রি ফার্মের একজন সাধারণ কর্মচারী। ২০ জুলাই ২০২৪ তারিখে ঢাকার সাভারে তীব্র হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন। অনেক ছাত্র আহত হয়। তারা বাঁচার জন্য দোকানে দোকানে আশ্রয় নেয়। তখন ঘাতক পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। একটি গুলি শহীদ ফারুকের মাথায় লাগলে তিনি গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তার মালিকও আহত হয়। দুপুর দেড়টার দিকে বাড়িতে ফোন দিয়ে জানানো হয় ফারুক আহত। তার মালিককে ফোন দিলে জানান আমি ও আহত, ফারুক কোথায় জানিনা, হাসপাতালে আছে মনে হয়। পরে খোঁজ নিয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় জানা যায় সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফারুক বারান্দায় শুয়ে আছে। তখনো তার চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। ফারুকের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। ডাক্তার বললেন, তার প্রাণ আছে কিন্তু রক্ত নাই। তারপর তার সিটি স্ক্যান করা হয়। সিটি স্ক্যান করার পর ডাক্তার বলেন, তার মাথায় অনেক গুলি এটা অপারেশন করা সম্ভব না। আপনারা আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। পরদিন রাত সাড়ে আটটায় খবর আসে শহীদ ফারুক ইন্তেকাল করেছেন। ২২ জুলাই সকাল ১১ টায় নিজ এলাকায় তার জানাজা সম্পন্ন হয় এবং বাড়ির পাশেই তাকে দাফন করা হয়। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শহীদ ফারুক ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একজন সমর্থক। তিনি আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও আন্দোলনের প্রতি ছিল তার পূর্ণ সমর্থন। ঘটনার দিন ২০ জুলাই সকাল থেকেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। সকাল ১২ টার দিকে ছাত্ররা পুলিশের গুলি থেকে বাঁচার জন্য তার দোকানে আশ্রয় নিয়েছিল। তিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেনও। এ সময় পুলিশ তার দোকানের দিকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিতে ফারুক ও তার মালিক দুজনই আহত হন। গুলি ফারুকের মাথায় তীব্র আঘাত হানে। এই আঘাতেই তিনি ইন্তেকাল করেন। শহীদের স্বজনদের প্রতিক্রিয়া শহীদ মো: ফারুক অতি সহজ সরল ভালো মানুষ ছিলেন। শহীদের এলাকাবাসীর দাবি, যেহেতু সে আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে, তাই তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভূষিত করা হোক এবং তার হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হোক। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ ফারুক ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তিনি সাভারে একটি মুরগির দোকানের কর্মচারী ছিলেন। মাসে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। তার মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে পড়াশোনা করে এবং স্ত্রী গৃহিণী। আত্মীয়-স্বজন এবং চ্যারিটি সংস্থার কিছু সহযোগিতায় তাদের দিন চলছে। তারা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বড় ছেলে মাহফুজ (১২) পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং মেয়ে তাবাসসুম (৮) প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: ফারুক পিতা : হায়দার আলী মাতা : ফাতেমা জন্ম তারিখ : ৩ জুলাই, ১৯৮৫ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: ডেংগার নগর, ইউনিয়ন: ২ নং শ্রীরামপুর, জামালপুর সদর, জেলা: জামালপুর আহত হওয়ার স্থান ও সময় : সাভার শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ২১ জুলাই ২০২৪, রাত ৮টা, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাভার, ঢাকা যাদের আঘাতে শহীদ : স্বৈরাচার হাসিনার ঘাতক পুলিশ শহীদের কবরস্থান : নিজ গ্রাম শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন অনুদান দিতে হবে ২. শহীদের স্বজনদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করতে হবে ৩. শহীদের সন্তানদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে