জন্ম তারিখ: ১৬ জুলাই, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা : গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান :মধ্য বাড্ডা ইউলুপের সামনে
শহীদ মো: লিটন জামালপুর জেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের খামারিয়া পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৬ জুলাই ২০০৬ সালে। বাবা সবুর মন্ডল (৫৭) পেশায় একজন কৃষক এবং মা মোছা: জাম্বি বেগম (৫৪) একজন গৃহিণী। তিনি সাত ভাই-বোনের মধ্যে ছিলেন সবার ছোট। মধ্য বাড্ডার রিস্টমেন্ট গার্মেন্টস কাটিং সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শহীদ মোহাম্মদ লিটন ছিলেন একজন কঠোর পরিশ্রমী গার্মেন্টস কর্মী। নিজে যা আয় করতেন তা থেকে পিতাকেও সহায়তা করতেন। মোটামুটি স্বচ্ছলতায় তার দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু ২০ জুলাই ২০২৪ তার জীবনের সব কিছু এলোমেলো করে দেয়। দিনটি তার পরিবারের কাছে একটি বেদনাময় দিন হিসাবে গৃহীত হবে। এদিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারের কিছু নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বিক্ষোভ করছিল। সকাল সাড়ে দশটার দিকে লিটন বাড়ি থেকে বের হন। অনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে তিনি মধ্য বাড্ডার ইউলুপের কাছে অবস্থান করছিলেন। শিক্ষার্থীরা বাড্ডা এলাকার রাস্তায় অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীদের হটাতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। ফলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের একটি গুলি লিটনের মাথায় আঘাত করে। গুলিটি এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ সময় লিটনের সঙ্গে তার ভাইও ছিলেন। কিন্তু বাজে পরিস্থিতির কারণে তাকে হাসপাতালে নিতে পারেননি। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অক্সিজেন দিলেও অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে তার জীবন রক্ষা করা যায়নি। কিছুক্ষণ পরে শহীদ লিটন মহান আল্লাহর দরবারে চলে যান। শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি সাত ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট মো: লিটন ছিলেন অতি আদরের। এলাকাবাসীর সাথে ছিল তার গভীর মমতার সম্পর্ক। প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকেরা শহীদ লিটনকে একজন বিনয়ী ও ভালো মনের মানুষ হিসেবে জানতো। তার মৃত্যুতে সবাই মর্মাহত এবং শোকাহত। এই মর্মান্তিকঘটনায় সবাই সরকারের প্রতি দাবি জানান, যেন এমন হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় এবং ভবিষ্যতে আর কোন পরিবারকে এমন শোক সইতে না হয়। এলাকাবাসী মোঃ ইউনুস বলেন, "লিটন খুবই ভালো ছেলে ছিল। এলাকার মধ্যে বেশ ভদ্র বিনয়ী হিসেবে তার সুখ্যাতি ছিল। তার মৃত্যুতে আমরা অনেক শোকাহত। আমরা সবাই লিটন হত্যার বিচার চাই।” শহীদের পিতা আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন,"লিটনকে হারিয়ে আমি খুব কষ্টে আছি। আমার মনে যে ব্যাথা তা কাউকে বলতে পারবো না। লিটন আমাকে আর্থিকভাবে খুব সহযোগিতা করতো। আমার বাকি ছেলেরা যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। মাঝে মধ্যে টাকা-পয়সা দিলে দেয়, না দিলে দেয় না। কিন্তু লিটন আমাকে সবসময় সাহায্য করতো। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ মো: লিটন সাত ভাই বোনের মধ্যে ছিলেন সবার ছোট। তিনি একটি গার্মেন্টসে কাটিং সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। একজন ভাই প্রবাসে থাকেন। তৃতীয় ভাই গার্মেন্টস কর্মী। আরেক ভাই মাদ্রাসার ছাত্র। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা একজন কৃষক। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: লিটন পিতা : মো: সবুর মন্ডল মাতা : মোসা: জাম্বি বেগম জন্ম তারিখ : ১৬ জুলাই ২০০৬ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: খামারিয়া পাড়া, ইউনিয়ন: চিনাডুলি, থানা: ইসলামপুর, জেলা: জামালপুর আহত হওয়ার স্থান ও সময়কাল : মধ্য বাড্ডা ইউলুপের সামনে, ঢাকা, ২০ জুলাই, সকাল ১১ টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ২০ জুলাই ২০২৪, দুপুর সাড়ে বারোটা, ইএমজি হাসপাতাল, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা যাদের আঘাতে শহীদ : ঘাতক পুলিশ শহীদের কবরস্থান : নিজ গ্রাম, খামারিয়া পাড়া শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের ছোট ভাইয়ের পড়া চালিয়ে নিতে বৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে ২. শহীদের পিতা-মাতাকে আর্থিক সহায়তা করা যেতে পারে