জন্ম তারিখ: ১৫ মার্চ, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : মৌচাক, গাজীপুর
শহীদ মো: মোস্তফা জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানার মহিষবাথান ইউনিয়নের ধলিরবন্দ গ্রামে ১৫ মার্চ ২০০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ স্বপন মিয়া টেক্সটাইলে চাকরি করেন এবং মা মর্জিনা বেগম গৃহিণী। মোস্তফা বিএমডি কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছিলেন। বাবা মা, স্ত্রী এবং ছোট দুই ভাইয়ের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নেওয়ার জন্য তিনি নিজের লেখাপড়াকে বিসর্জন দিয়ে গাজীপুর সাদমা গার্মেন্টসে প্রোডাকশন অপারেটর হিসেবে চাকরি নেন।শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শহীদ মোস্তফা ছিলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক। বাস করতেন গাজীপুরের মৌচাক এলাকায়। ৫ আগস্ট বিকাল চারটায় তিনি বাসা থেকে বের হয়ে কোম্পানির বসের সাথে দোকানে বসে চা পান করতে করতে শুনেন শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে। শহীদ মোস্তফা এ সময় যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলে। ওই মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে মোস্তফা গুলিবিদ্ধ হয়ে তখনই শাহাদত বরণ করেন। মোস্তফা ৫ আগস্ট মৃত্যুবরণ করলেও তার লাশ পাওয়া গিয়েছিল না। পরের দিন ৬ আগস্ট সকাল দশটার দিকে সফিপুর আনসার একাডেমি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভেতরে এক জঙ্গলের মধ্যে শহীদ মোস্তফার লাশ পাওয়া যায়। ৫ আগস্ট তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আনন্দ মিছিলে যোগ দিতে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে স্ত্রী যেতে বারণ করেন। তাই তাকে ভিতরে রেখে দরজা মেরে প্রতিবেশীর কাছে চাবি দিয়ে বিজয় মিছিলে অংশ নিতে চলে যান। তার শরীরের সবেশ কিছু গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। এক প্রতিবেশীর নিকট থেকে ফোন পেয়ে পরিবারকে তার লাশ উদ্ধার করে। শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি শহীদ মোস্তফা ছিলেন একজন ধার্মিক মানুষ। খুব ছোট থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। তিনি কখনো নামাজ কাজা করতেন না। মানুষের উপকার করার চেষ্টা করতেন। তাই বিনয় ও ভদ্র শহীদ মোস্তফার ইন্তেকালের মানুষ গভীরভাবে শোকাহত হন। স্ত্রীর বাধা অতিক্রম করে তিনি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তাই তার স্ত্রী নুরুন্নাহার বলেন- " আগে যদি জানতাম আমার স্বামী আর ফিরবে না তাহলে আমার সব শক্তি দিয়ে ওনাকে আটকে রাখতাম।" তিনি আরো বলেন,"আমার কোন সন্তান নেই। উপার্জনেরও কোন পথ বা উৎস নেই। সংসার চালানোর জন্য আর্থিক সহায়তা দরকার।" শোকে কাতর মা বলেন, "মার কিছুই নাই, জমি জিরাত,টাকা পয়সা কিছু নাই। আমার বাপ জানে আমারে চালাইতো। সবার খেয়াল রাখত। পোলারে বিয়া করাইছি এখনও বাচ্চাকাচ্চা হয় নাই। আমার পোলার জীবন শেষ হয়ে গেল। আমাদের এখন দেখবে কে?" এ অবস্থায় তার দাবি ছেলে হত্যার যেন সুষ্ঠু বিচার হয়। তাদের পরিবারের জন্য যেন সরকার আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়,যাতে তার বিধবা স্ত্রী এবং ছোট ভাইদের ভবিষ্যতে একটু হলেও সুন্দর হয়।" শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য পাঁচ ছয় মাস আগে মাত্র ২১ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন শহীদ মো: মোস্তফা। তারপর পারি জমিয়েছিলেন গাজীপুরে। সদ্য বিধবা স্ত্রীর আয়ের কোন উৎস নেই। তার আরও দুটি ছোট ছোট ভাই রয়েছে। মেহেদী হাসান (১৩) ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে এবং নুর আলমের বয়স মাত্র চার বছর। শহীদের প্রোফাইল নাম : মো: মোস্তফা পিতা : মো: স্বপন মিয়া মাতা : মর্জিনা বেগম জন্ম তারিখ : ১৫ মার্চ, ২০০২ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: ধলিরবন্দ, ইউনিয়ন : মহিষবাথান , থানা : মাদারগঞ্জ, জেলা: জামালপুর আহত হওয়ার স্থান : মৌচাক, গাজীপুর আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪:৪০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট, ২০২৪ বিকাল, ৪:৪৫ মিনিট যাদের আঘাতে শহীদ : বিজিবি ও পুলিশের গুলি শহীদের কবরস্থান : নিজগ্রাম ধলিরবন্দ, মহিষবাথান, মাদারগঞ্জ, জামালপুর শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা যেতে পারে ২. শহীদের স্ত্রী ও বাবাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা প্রয়োজন ৩. শহীদের ছোট ভাইদের শিক্ষা বৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে