Image of মো: সবুজ

নাম: মো: সবুজ

জন্ম তারিখ: ২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :রিকশা চালক, শাহাদাতের স্থান : আশুলিয়া থানার সামনে, ঢাকা

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: সবুজ জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার কোনামালঞ্চ গ্রামের মোহাম্মদ আলী এবং জরিনা বেগমের সন্তান। তিনি ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শহীদরা দুই ভাই। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। বাবা মোহাম্মদ আলী (৪২) পেশায় রিকশাচালক এবং মা জরিনা বেগম (৩৪) একজন গৃহিণী। শহীদের বাবা রিকশা চালিয়ে স্ত্রী সন্তানসহ চার সদস্যের পরিবার একা চালাতেন। বাবার কষ্ট লাঘব করার জন্য ১৮ বছর বয়সে কিশোর সবুজ নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সংসারের সহযোগিতার দায়িত্ব। তিনি ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় রিক্সা চালাতেন। বিয়ে শাদী করেনি বিধায় নিজের থাকা খাওয়ার সমস্ত উপার্জন তুলে দিতেন মায়ের হাতে। ৫ আগস্ট ২০২৪, স্বৈরাচার পতনের খবরে সারা দেশে আনন্দ মিছিল এবং সমাবেশ হচ্ছিল। সাভারের আশুলিয়াও তার ব্যতিক্রম ছিল না। প্রতিদিনের মতো জীবিকার জন্য শহীদ সবুজ বের হলেও সেদিন তিনি বের হয়েছিলেন বিজয় মিছিলে যোগদান করার জন্য। মিছিলের উদ্দেশ্য দমনের জন্য পুলিশ ছাত্র-জনতার উপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ শুরু করতে থাকে। সেই সময় সবুজ মিছিলের ভিতরে ছিলেন। বিকাল ৫টা নাগাদ তিনি পুলিশের ছোঁড়া তিনটি বুলেটে মারাত্মকভাবে যখম হন। দুটি বুলেট সরাসরি বুকের বাম পাশে আঘাত করে এবং আরেকটি তার তলপেটে আঘাত হানে। পরবর্তীতে তাকে ৬ টা ৪৫ মিনিটে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর দুই ঘন্টা পর ৮টা ৫৭ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। রাতে শহীদের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন সকালে নিজ গ্রামে তাকে দাফন করা হয়। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট "ছাত্ররা দেশের সম্পদ। তাদের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। তাদের প্রতি বৈষম্য আচরণ করা মানে ভবিষ্যতের দেশের ওপর বৈষম্য করা। " এই সহজ কথাগুলো বোঝার জন্য অনেক বড় বড় পণ্ডিত হবার দরকার নেই। কিন্তু ক্ষমতার মোহ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। ক্ষমতা পেলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মানুষ। ধরাকে সরা জ্ঞান করতে থাকে। মনে করে তার ক্ষমতার কাছে সবকিছুই নগণ্য তুচ্ছ। সে তুড়ি মেরে সবকিছু উড়িয়ে দিতে চায়। অথচ ইচ্ছা করলেই তা পারা যায় না। হয়তোবা দুদিনের জন্য সফলতা অর্জন করা যায় কিন্তু অনন্তকালের ইতিহাসে ঘৃণিতের তালিকায় স্থান পেতে হয়। দেশের বড় বড় কর্তা ব্যক্তিরা কোটাকে বৈষম্য মানতে নারাজ ছিল। কিন্তু রিকশা চালক শহীদ মো: সবুজ বুঝতে পেরেছিলেন কোটা পদ্ধতি বৈষম্যের একটি হাতিয়ার। ছাত্রদের মেধার অবমূল্যায়ন, সর্বোপরি এটা ন্যায়ের পরিপন্থী। শহীদ সবুজ অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার কাতারে সমবেত হয়েছিলেন। তাদের কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন। তাদের আনন্দে শরিক হতে চেয়েছিলেন। ছাত্রদের আনন্দকে নিজের আনন্দ মনে করে ৫ আগস্ট যোগদান করেছিলেন আশুলিয়ার আনন্দ মিছিলে। কিন্তু হাসিনার রেখে যাওয়া ঘাতক বাহিনী সেই আনন্দ মিছিলে গুলি চালিয়েছিল ছাত্র-জনতার উপর। তাদের ছোঁড়া সেই গুলির তিনটি বুলেট আঘাত হেনেছিল মাংসহীন শ্রমে পিষ্ট শরীরটাকে। হয়তোবা শহীদ মো: সবুজ জীবনটাকে হারিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ঘাতকেরা কি পেরেছে তার বৈষম্যহীনতার চেতনাকে ধ্বংস করতে? শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি শহীদ সবুজ সবে মাত্র ১৮-তে পা দিয়েছিলেন। অতি দরিদ্র ঘরের সন্তান সবুজকে হারিয়ে বাবা-মা গভীর শোকাহত। শহীদের মা জরিনা বেগম কেঁদে কেঁদে চোখের পানি শুকিয়ে ফেলেছেন। শরীরের কাঁপুনিতে কথা বলতে তার কষ্ট হচ্ছিল। তবুও তিনি বলছিলেন, আমার ঘরের সম্রাটকে কেন মারল? তার কি দোষ ছিল?” শহীদের মা আরো বলেন,"আমার ছেলে অনেক ছোট ছিল, অনেক ভালো ছিল। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।" শহীদের চাচা হাবিবুর রহমান বলেন," সে বয়সে ছোট মানুষ ছিল। অভাবে সে বাবার সাথে রিকশা চালাতো। বাবাকে সাহায্য করত। ৫ আগস্ট শহীদ হয়। সে অনেক নম্র ভদ্র ছিল। আমরা তার হত্যাকারীদের সঠিক বিচার চাই।" শহীদের মামা হাফিজুর রহমান বলেন, সে বরাবরই পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং সহজ সরলভাবে এলাকায় চলাফেরা করতেন। দারিদ্রতা কাটাতেই তিনি শহরে পাড়ি জমান। বাবার সাথে রিকশা চালানোর জন্য।" তার বাবা দাবি করে বলেন, "আমার সাথে সংসারের হাল ধরা সহযোগী ছেলের নির্মম খুনের যেন বিচার হয়। এর সাথে সরকারের থেকে যেন তাদেরকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হয়।" শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য বাবা মোহাম্মদ আলী রিকশা চালিয়া স্ত্রী সন্তানের খরচ একা চালাতেন। বাবার কষ্ট দূর করার জন্য ১৮ বছর বয়সে কিশোর সবুজ নিজেও পেশা হিসাবে রিকশা চালানোকে বেছে নেন। অবিবাহিত সবুজের মোহাম্মদ সজীব নামে ১৬ বছরের একটি ভাই রয়েছে। শহীদ সবুজ অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার জন্য দেশ ও জাতির অনেক কিছু করার রয়েছে। সে তো নিজের মহা মূল্যবান জীবনটাকেই দেশের কল্যাণে বিলিয়ে দিয়ে গেল। একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: সবুজ জন্ম তারিখ : ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ পিতা : মোহাম্মদ আলী (৪২) মাতা : জরিনা বেগম (৩৪) স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: কোনামালঞ্চ, ইউনিয়ন: ৮ নং ফুলকুচা, থানা: মেলান্দহ, জেলা: জামালপুর আহত হওয়ার স্থান : আশুলিয়া থানার সামনে, ঢাকা আহত হওয়ার সময় কাল : ২০ জুলাই ২০২৪, বিকেল: ৫টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট, ২০২৪, রাত: ৯টা, এনাম মেডিকেল কলেজ হসপিটাল যাদের আঘাতে শহীদ : ঘাতক পুলিশের গুলি শহীদের কবরস্থান : নিজগ্রাম, পশ্চিম শ্যামপুর মেলান্দহ, জামালপুর শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা ২. শহীদের পরিবারের সদস্যের কর্মসংস্থান তৈরিতে আর্থিকভাবে সহায়তা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

তনয় চন্দ্র দাস

জোবায়েদ

মো: শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন

হৃদয় মিয়া

মো: আব্দুল নুর

মো: আহাদুন

মো: সবুজ মিয়া

মো: জাহিদুল হাসান

মো: আবুজর শেখ

কুদ্দুস মিয়া

সাফওয়ান আখতার সদ্য

মো: মাহিন মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo