Image of মো: আমজাদ

নাম: মো: আমজাদ

জন্ম তারিখ: ১০ অক্টোবর, ১৯৮০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান :নদ্দা ওভারব্রিজের পাশের রাস্তা, বসুন্ধরা, ঢাকা

শহীদের জীবনী

জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার পশ্চিম শ্যামপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা শহীদ মোঃ আমজাদ ১০ অক্টোবর ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা মৃত আকি মোল্লা এবং মা আয়নালি হক একজন গৃহিণী। স্ত্রী কুহুলা, ছেলে মো: সোনাহার (১৯) ও মো: কবির (১২) এই চারজন নিয়ে ছিল তার সংসার। রাজধানী ঢাকার কালাচাঁদপুরে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন তিনি। আশে-পাশে এলাকাগুলোতে বাসা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে তিনি মাছ বিক্রি করতেন। ২০ জুলাই সকালে শহীদ মো: আমজাদ রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার পাশে নদ্দা এলাকায় মাছ বিক্রি করছিলেন। ভ্রাম্যমান এই মাছ ব্যবসায়ী বাসা বাড়িতে বাকিতেও মাছ বিক্রি করতেন। ঘটনার দিন দুপুরে খেয়ে তিনি বকেয়া আদায় করতে বের হয়েছিলেন। তিনি যখন নদ্দায় অবস্থান করছিলেন তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল বের হয়েছিল এই এলাকায়। পুলিশ সেই মিছিলে গুলিবর্ষণ করে মিছিলটিকে ছত্র ভঙ্গ করতে চেয়েছিল। ফলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। মো: আমজাদ নদ্দা ওভার ব্রিজের আশেপাশে যখন পৌঁছায় ঠিক সেই সময় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশ ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে এলোপাথাড়ি গুলি ছোঁড়ে। মো: আমজাদ মূলত ওভার ব্রিজের পাশের রাস্তা ঘেঁষে থাকা দোকানের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। পুলিশ গুলি শুরু করলে তিনি দৌড় শুরু করেন কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ঘাতক পুলিশের ছোঁড়া গুলি তার চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। সাথে সাথে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন মো: আমজাদ হোসেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট জিদ, দাম্ভিকতা আর অহংকার একজন মানুষকে কত নিচে নামিয়ে দিতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরশাসক খুনি হাসিনা। এদেশের মানুষের চাওয়া খুব বেশি ছিল না। যুগ যুগান্তর ধরে চলে আসা প্রার্থনা "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে" এতটুকুও চায়নি এদেশের মানুষ। চাওয়া ছিল, আমার সন্তান যতটুকু শ্রম দিয়ে, ঘাম দিয়ে যোগ্যতা অর্জন করেছে তার ভিত্তিতে তাকে যেন মূল্যায়ন করা হয় আর কিছু না। কিন্তু নিকৃষ্ট স্বৈরাচার, যাদের অস্থিমজ্জা রক্ত চিন্তা-চেতনা কেবলমাত্র জিঘাংসা দিয়ে গঠিত, তারা এতটুকু অধিকারও দিতে রাজি ছিল না। দেশটা আমার, আমি যেভাবে চাবো সেভাবেই তোমাদের থাকতে হবে দাসত্বের জিঞ্জির গলায় পড়ে। এমন দাম্ভিকতার কাছে দেশের মানুষ যেন অসহায় হয়ে পড়েছিল। দেশের কোন মানুষের জীবনের ন্যূনতম মূল্য ছিল না। হানাদার টিক্কা খানদের পেতাত্মা হয়ে ঐ একই কথা বলছিল, " এদেশের মানুষ চাইনা এদেশের মাটি চাই।" এদেশের সন্তানদের মেধা নয় রক্ত চাই। তাইতো দেশকে রক্ত গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে হলেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল পতিত খুনি হাসিনা। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে নির্বিচারে হত্যা করেছে মুটে, মজুর, কুলি, গার্মেন্টস শ্রমিক, মাছ ব্যবসায়ী, রিকশাচালক, তরকারি ব্যবসায়ী, সাধারণ জনতাসহ আরো অনেককে। যেন যেকোনো মূল্যে তাকে ক্ষমতায় থাকতেই হবে। তাই তো জীবন দিতে হয়েছিল শহীদ মোঃ আমজাদ হোসেনের মত ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীকেও। তিনি ঘটনার কিছুই জানতেন না। কিন্তু বিশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টি করে, লাশ ফেলে দিয়ে, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছিল পতিত খুনি হাসিনা সরকার। প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যাওয়া, পালিয়ে বেড়ানো ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী আমজাদকেও তারা ছাড়েনি খুন করতে। জীবন নিয়ে পালিয়ে যাওয়া, দৌড়াতে থাকা আমজাদ হোসেনকে গুলি করে। ঘাতক পুলিশের বেপরোয়া গুলি শহীদের চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায় আমজাদ হোসেনের মত খেটে খাওয়া মানুষের। শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি আমজাদ হোসেনের মত খেটে খাওয়া মানুষের রক্ত আমাদের আহত করে, ব্যথিত করে। এমন মানুষের মৃত্যুতে সমাজ শোকাহত হবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি সমাজের এক শ্রেণীর মানুষের কাছে বাকিতে মাছ বিক্রি করতেন। কতটা বিশ্বাস করতেন মানুষকে। তাইতো তারা আমজাদ হোসেনের মত নিরীহ মাছ ব্যবসায়ীর মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যথিত করেছে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তার স্ত্রী এবং সন্তানদের। তার মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি। তারা যেন কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের হয়ে তার মামাতো বোন সাজেদা বলেন, " শহীদ আমজাদ খুব ভালো মানুষ ছিল। সে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসায় বাসায় মাছ বিক্রি করতো। তিনি শহীদ হওয়াতে তার পরিবার খুব অসহায় হয়ে পড়েছে। " তার পরিবারের সদস্যরা এই অন্যায়ের বিচার চায়। তার মৃত্যুতে গ্রামের মানুষ থেকে ঢাকার সহ পেশাদাররা মর্মাহত। তারাও এই ঠান্ডা মাথায় করা খুনের বিচার চায়। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ মোঃ আমজাদ ঢাকার অলিতে গলিতে ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করতেন। তার একলা উপার্জনেই চলত স্ত্রী এবং দুই পুত্র। তার মৃত্যুতে বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: আমজাদ পিতা : মৃত আকি মোল্লা মাতা : আয়নালী হক জন্ম তারিখ : ১০ অক্টোবর, ১৯৮০ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পশ্চিম শ্যামপুর, ইউনিয়ন: ১১নং শ্যামপুর, থানা : মেলান্দহ, জেলা: জামালপুর বর্তমান ঠিকানা : ক-২৫ কালাচাঁদপুর, গুলশান-১২১২, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আহত হওয়ার স্থান : নদ্দা ওভারব্রিজের পাশের রাস্তা, বসুন্ধরা, ঢাকা আহত হওয়ার সময়কাল : ২০ জুলাই, ২০২৪, ১:৪৫ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ২০ জুলাই, ২০২৪, দুপুর: ১:৪৫টা, ঘটনাস্থল যাদের আঘাতে শহীদ : স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার ঘাতক পুলিশের গুলি শহীদের কবরস্থান : নিজগ্রাম, পশ্চিম শ্যামপুর, মেলান্দহ, জামালপুর শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা ২. শহীদের পরিবারের সদস্যের কর্মসংস্থান তৈরিতে আর্থিকভাবে সহায়তা করা ৩. পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য শহীদদের সন্তানের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

ফজলুল করিম (ফজল মিয়া)

মো: জুবায়ের আহমেদ

মো. শাহিন মাহমুদ শেখ

মো: মোস্তফা

মো: রাহুল

নাজমুল ইসলাম রাজু

মো: মাছুম বিল্লাহ

শিফাত উল্লাহ

মো: রুবেল

রহমত মিয়া

ইসমাইল

মো: হাফিজুল ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo