জন্ম তারিখ: ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৫ জুন, ২০২৫
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা : গার্মেন্টস শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান :নদ্দা ওভার ব্রিজের পাশের রাস্তা, বসুন্ধরা, ঢাকা
জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার নয়ানগর গ্রামে ২৯ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শহীদ জসিম উদ্দিন । পিতা মো: জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) পেশায় মিষ্টি বিক্রেতা এবং মাতা আছিয়া বেগম (৫০) পেশায় গৃহিণী। গার্মেন্টস কর্মী স্ত্রী বানেছাহ ও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে উত্তরখান থানার ময়নার টেক এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। শহীদ জসীমউদ্দীন সরকার নিজেও ছিলেন একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। ৪ আগস্ট বিকালে উত্তরার আজমপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশগ্রহণ করেন তিনি। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয় এখানে। এই সময়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তবে শহীদের স্ত্রী তার কোথাও খোঁজ পাচ্ছিলেন না। অবশেষে ১৬ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ৪ আগস্ট দুপুর ১২ টায় তাদের গার্মেন্টস থেকে ছুটি দেওয়া হয় সবাইকে নিরাপত্তা জনিত সমস্যার কারণে। এরপর শহীদ জসিম বাসায় আসেন। দুপুর ১ টায় খেয়ে বিশ্রাম নেন তিনি। এরপর তার বাসায় পূর্ব পরিচিত কিছু ছাত্র বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানায়। শহীদ জসিম ছাত্রদের সাথে বাসা থেকে বের হয়ে উত্তরার আজমপুর এলাকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। এরপর তিনি আর বাসায় ফিরেনি। পরদিন ৫ আগস্ট জসীম উদ্দীনের স্ত্রী ফোন দেন গ্রামের বাড়িতে থাকা জসীম উদ্দিনের মায়ের নাম্বারে। কল দিয়ে জানান যে, " মা গতকাল থেকে আপনার ছেলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। "এভাবে ৭ আগস্ট পর্যন্ত শহীদ জসিমের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। জসিম একাধিক সিম ব্যবহার করতেন। এর জন্য তার স্ত্রী বানেছাহ অনবরত কল দিতে থাকেন। ৮ আগস্ট এক পর্যায়ে একটি নাম্বারে কল ঢুকে এবং অপরিচিত একজন লোক ফোন রিসিভ করেন। তখন জসিমের স্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, "আপনি নাম্বার কই পাইলেন? " জবাবের লোকটি বলে এই ফোনের মালিক যিনি তিনি গুলিবদ্ধ হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, তার এই মোবাইল আমার কাছে আছে। এরপর ওই লোক আর কোন কলও রিসিভ করেননি এবং ফোন বন্ধ করে দেন। শহীদের স্ত্রী বানেছাহ স্বামীর খোঁজে বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে খবর নেন কিন্তু কোথাও স্বামীকে খুঁজে পাননি। ১৬ আগস্ট আর একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কেউ একজন কল দিয়ে শহীদ জসিমের স্ত্রীকে জানান তার স্বামীর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। এরপর শহীদের পরিবার হাসপাতালে যান। সেখানে তাদেরকে অনেক লাশ দেখানো হয়। কিন্তু অধিকাংশ লাশের চেহারা গুলিবিদ্ধ হবার কারণে বিকৃত ছিল। ফলে পরিবার তার লাশ শনাক্ত করতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে তার পরনে লাল শার্ট এবং নেভি ব্লু জিন্স প্যান্ট দেখে শনাক্ত করেন তার স্ত্রী। লাশ হস্তান্তরের জন্য হাসপাতালের লোকজন ৫০ হাজার টাকা দাবি করে শহীদের পরিবারের কাছে। কিন্তু পরিবার সেনাবাহিনী ডেকে আনার কথা বলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা ছাড়াই লাশ দিয়ে দেয় পরিবারের কাছে। মোট ১১ দিন পর শহীদ জসিমের লাশ ফিরে পান তার পরিবার। পরবর্তীতে তার নিজ গ্রাম নয়ানগরে তাকে দাফন করা হয়। শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি শহীদ জসিম উদ্দিন সরকারের মৃত্যুর পর তার বাবা-মা সব সময় কান্নাকাটি করছেন। তার বৃদ্ধ মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, " আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। "তার বাবা শিশুর মত কান্নাকাটি করছেন। তিনি বলেন, " আমার ছেলে আন্দোলনে গিয়ে তিনটা গুলি খায়। ”বাবারে নির্মমভাবে গুলি করে মারছে হাসিনার গুন্ডাবাহিনী। আমার ছেলের খুনীর ফাঁসি চাই। আমি আর কিছু চাইনা। আমি সরকারের কাছে সঠিক বিচার চাই এটাই আমার কথা। "শহীদের চাচা ওমর আলী বলেন, "খুবই ভালো আচরণের ছেলে ছিল সে। এলাকার সবাই তাকে পছন্দ করত।" শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সরকার এবং তার স্ত্রী বানেছাহ, উভয়ই গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। মারা যাবার সময় শহীদ জসিম উদ্দিন সরকার মোহাম্মদ বায়েজিদ (১৫), জান্নাতুল (১২), জয়া খাতুন (৭) এবং মুহাম্মদ রাব্বি (৫) নামে চার ছেলেমেয়ে রেখে গিয়েছেন। তিনি ঢাকার উত্তরা এলাকার ময়নারটেক, আব্দুল্লাহপুরে সপরিবারে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। গ্রামের বাসায় রয়েছে শহীদের বৃদ্ধ পিতা-মাতা। শহীদের আরেকজন স্ত্রী নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেন। শহীদের স্ত্রী বানেছাহ চার ছেলেমেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তিনি বলেন, “একার স্বল্প আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। সরকার আমাদের আর্থিক সহযোগিতা দিক এবং আমার চার সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যতের দায়িত্ব নিক।” এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : জসিম উদ্দিন পিতা : জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) মাতা : আছিয়া বেগম (৫০) জন্ম তারিখ : ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নয়ানগর, ইউনিয়ন: ১নং ওয়ার্ড, পৌরসভা, থানা: মেলান্দহ, জেলা: জামালপুর বর্তমান ঠিকানা : ময়নাটেক, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরখান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আহত হওয়ার স্থান : নদ্দা ওভার ব্রিজের পাশের রাস্তা, বসুন্ধরা, ঢাকা আহত হওয়ার সময়কাল : ৪ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪:০০টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ১৪ আগস্ট, ২০২৪, সকাল ১১:২০ মিনিট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাদের আঘাতে শহীদ : ঘাতক পুলিশ শহীদের কবরস্থান : নিজগ্রাম, নয়ানগর, মেলান্দহ, জামালপুর শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা ২. শহীদের পরিবারের সদস্যের কর্মসংস্থান তৈরিতে আর্থিকভাবে সহায়তা করা ৩. পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য শহীদের ছোট ছোট সন্তানের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা ৪. শহীদের সন্তানেরা যেন সমাজ থেকে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা