Image of মো: আবুজর শেখ

নাম: মো: আবুজর শেখ

জন্ম তারিখ: ৩ মার্চ, ২০০০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৭ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান : নদ্দা ওভার ব্রিজের পাশের রাস্তা, প্রগতি সরণি, ঢাকা

শহীদের জীবনী

জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার নয়ানগর গ্রামে ৩ মার্চ ২০০০ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শহীদ মোঃ আবুজর শেখ। পিতা মৃত তারা মিয়া এবং মা মোছা: ছবি (৬০) একজন গৃহিণী। সংসারের দারিদ্রতা ঘোচাতে প্রায় সাত বছর আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন আবুজর। সর্বশেষ তিনি বসুন্ধরা এলাকায় এক ব্যক্তির প্রাইভেট কারের চালক হিসাবে কাজ করতেন। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময় রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। আহত অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর একটি হাসপাতালে। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।শাহাদাতের প্রেক্ষাপট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ আবুজর শেখ শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন। ১৯ জুলাই আন্দোলনের দিনও তিনি মাঠে নেমে পড়েন। বিকাল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকার নর্দা ওভার ব্রিজের নিচে ঘাতক পুলিশের গুলিতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। তার পেটে পুলিশের দুটি বুলেট বিদ্ধ হয়। আহত আবুজরকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনা প্রসঙ্গে আবুজরের বড় ভাই শহিদুল বলেন, গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মুঠোফোনে এক ব্যক্তি কল করে জানান আবু জরের পেটে গুলি লাগছে। পরে ওই রাতেই রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান তারা। সেখানে চিকিৎসক অস্ত্রপাচার করার পরামর্শ দেন। রাতে অস্ত্রোপচারের পর আবুজরের শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়। চিকিৎসকরা অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আবারো অস্ত্রপাচার করার জন্য বলেন চিকিৎসকেরা। সেটা করালে আবুজরের শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হয়। পরে চিকিৎসকরা জানান তার ভাই আর বেঁচে নেই। এই দিন ছিল ২৭ জুলাই ২০২৪। শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি বৃদ্ধা মায়ের ভরসাস্থল এবং চোখের মনি শহীদ আবুজরকে হারিয়ে চারিদিকে কেবল অন্ধকার দেখছেন। তার আর্তনাদ যেন থামছেই না। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলেন," সংসারে সব সময় অভাব লাগিয়ে থাকতো। বহু কষ্টে পোলাপানগুলারে মানুষ করছি। আমার আবুজরের বয়স যখন ছয় তখন ওর বাপে মরে গেল। তখন থেকে কি যে কষ্ট করছি। ভাবছিলাম পোলাগুলা বড় হইয়া আমার কষ্ট দূর করব। তিন পোলা ও এক মাইয়ার মধ্যে সবার ছোট আমার আবুজর। অন্য পোলারা আলাদা হয়ে গেছে। ছোট পোলাডা আমার দেখাশোনা, খাওন-দাওন, ওষুধের খরচ দিত আর সেই পোলাডারেই গুলি কইরা মারল।" তিনি আরো বলেন, " হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমার পুলা আমারে বলছে কষ্ট করে হইলেও চিকিৎসা করাও। ভালো হয়ে সব টাকা দিয়ে দিমু। সবার থেকে নিয়ে কত কষ্ট করে ১৫ লাখ টাকা মিল করে পোলার চিকিৎসা করাইলাম, তবু তো পোলারে ফেরত আনতে পারলাম না। আল্লাহরে কতইনা ডাকলাম, আল্লাহ পোলাডারে রাইখা যাও।" ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত এই মা জাতির কাছে প্রশ্ন করেন, "আমার পোলা কার কি ক্ষতি করছিল? যে পোলা মার জন্য পাগল সেই পোলা কারও ক্ষতি করতে পারেনা। পোলারে গুলি কইরা কেন মারতে হয়েছে? " এই মা আরও বলেন, " আমার বাবা ১৯ জুলাই আন্দোলনে গিয়া গুলি খায়। লোকজন আমার বাবারে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যায়। ৬ দিন হাসপাতালে থাকার পর ডাক্তার বলে অনেক টাকা লাগবে, আপনারা অন্য হাসপাতালে যান। পরে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে অপারেশন করা হয়। দুইদিন পর আমার বাবা চলে যায়। বাবা যা কামাই করত বাড়িতে আমার কাছে পাঠাতো। আশা ছিল বাবারে বিয়া করাবো, নতুন বাসা বানাবো। আমার আশা শেষ। অনেক টাকা ঋণী হয়ে গেছি। আমার বাবার খুনিদের বিচার চাই। " শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ মোহাম্মদ আবুজর শেখের পিতা মৃত। মা ষাট বছরের বৃদ্ধা মোছা: ছবি। শহীদ আবুজর মাকে দেখাশোনা করতেন এবং তার সংসারের খরচ দিতেন। শহীদের বাকি দুই ভাই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আলাদা থাকেন। শহীদ আবুজারের চিকিৎসা বাবদ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। আবু জরের চিকিৎসার জন্য এটা তার পরিবার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার করেছেন, জায়গা জমি বিক্রি করেছেন, ঘরের জন্য কেনা ইট বিক্রি করে সংগ্রহ করেছেন। এরপরও প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণে পড়ে রয়েছেন। একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: আবুজর শেখ জন্ম তারিখ : ৩ মার্চ ২০০০ পিতা : মো: তারা মিয়া (মৃত) মাতা : মোসা: ছবি (৬০) স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: নয়ানগর, ইউনিয়ন: ১নং ওয়ার্ড, পৌরসভা, শ্যামপুর, থানা: মেলান্দহ, জেলা: জামালপুর আহত হওয়ার স্থান : নদ্দা ওভার ব্রিজের পাশের রাস্তা, প্রগতি সরণি, ঢাকা আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই, বিকাল ৫টা ২০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ২৭ জুলাই, রাত ১১.৩০ মিনিট মেট্রোপলিটন মেডিকেল সেন্টার লিমিটেড, তাজউদ্দিন সরণি, মহাখালী, ঢাকা যাদের আঘাতে শহীদ : ঘাতক পুলিশ শহীদের কবরস্থান : নিজগ্রাম, নয়ানগর, মেলান্দহ, জামালপুর শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের চিকিৎসা বাবদ ধার দেনা করা বড় অংকের টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করা ২. শহীদের মায়ের জন্য এককালীন কিংবা মাসিক অর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা অথবা স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সুমন হাসান

মো: শাহজাহান

মো: কাওসার মিয়া

 মোহাম্মদ কবির হোসাইন

মো: রিদওয়ান হোসেন (সাগর)

ফজলুল করিম (ফজল মিয়া)

সাইফুল ইসলাম (সেকুল)

মো:  শাকিবুল হাসান সাজু

মো: আলি হুসেন

আ: আজিজ

মো: আমিরুল ইসলাম

মো: সামিদ হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo