জন্ম তারিখ: ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা :কৃষক, শাহাদাতের স্থান :টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে।
"আমার সব জমি বিক্রি করে ছেলেকে মানুষ করলাম। আর সেই ছেলে দেশের জন্য জীবন দিল। এখন আমার আর কিছু নাই, না ছেলে না জমি" জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার হিরণ্য বাড়ি গ্রামে ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ মোখলেসুর রহমান। পিতা মোঃ হাবিবুর রহমান (৬৫) পূর্বে কৃষি কাজ করতেন এবং মাতা মরিয়ম বেগম (৫৫) একজন গৃহিণী। কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিত শহীদ মোখলেসুর রহমান টুকটাক কাজ করে বাবা-মাকে কিছু অর্থ প্রেরণ করতেন। পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে ১৭ জুলাই মোখলেসুর রহমান ঢাকা শহরে ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। সেদিন পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। মোখলেসুর রহমান আহত হন রাত ৯ টার দিকে। বাবার সঙ্গে তার কথা হয়। তিনি বাবাকে আশ্বস্ত করেন," বাবা আমি ঠিক আছি আমার কিচ্ছু হয়নি। আমার জন্য দোয়া করবেন। "এটাই ছিল তার শেষ কথোপকথন। পরদিন ১৮ জুলাই, মোকলেসুর রহমান আবারো আন্দোলনে যোগ দেন। তবে এবার বাড়িতে কোন খবর দেননি। পরিবার তার খোঁজ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ২০ জুলাই পরিবার নিশ্চিত হন, শহীদ মোখলেসুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন। ২১ জুলাই তার দাফনকার্য সম্পন্ন হয়। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শহীদের পিতা মো: হাবিবুর রহমান একসময় সচ্ছল কৃষক ছিলেন। নিজের জমিতে ফসল ফলিয়ে ছেলে মেয়েকে মানুষ করার স্বপ্ন দেখতেন। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগাড় করতে তিনি একা একা সব জমি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছেন। শহীদ মোখলেসুর রহমান সংসারের হাল ধরতে টুকটাক আয় করে বাবাকে সাহায্য করতেন। ১৭ জুলাই তিনি আন্দোলনে যোগদান করেন। আহত হন তবুও পরের দিন অর্থাৎ ১৮ জুলাই আবারো আন্দোলনে যোগদান করেন। এরপর আর তার কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। ২০ জুলাই শংকিত পরিবারের কাছে অপরিচিত এক নাম্বার থেকে ফোন আসে। ওই ব্যক্তি ফোনে জানান মোখলেসুর রহমান গুরুতর আহত, কপালে বড় আঘাত পেয়েছে। হাসপাতালে আসার জন্য পরিবারকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আর একটা ফোন আসে থানা থেকে। পুলিশের এক এসআই জানায় মোখলেসুর রহমানের লাশ পাওয়া গেছে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে। এভাবেই আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে এক তরুণ উদীয়মান কবি ও লেখক মোখলেসুর রহমান চিরতরে হারিয়ে যান। শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি কবি আর লেখক শহীদ মোকলেসুর রহমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, "আমার সব জমি বিক্রি করে ছেলেকে মানুষ করলাম। আর সেই ছেলে দেশের জন্য জীবন দিল। এখন আমার কিছু নেই, না ছেলে না জমি।" শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য এক সময়ে বেশ জমিজমার মালিক ছিলেন শহীদের পিতা মো: হাবিবুর রহমান। পাঁচ সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করতে গিয়ে একে একে বিক্রি করে ফেলেছেন সব জায়গা জমি। এখন আর তার তেমন জায়গা জমি নাই নিজের আয় রোজগারও নাই। শহীদ মোখলেসুর রহমান টুকটাক আয় করে বাবার হাতে কিছু অর্থ তুলে দিতেন। এখন তিনিও পরপারে চলে গেছেন। মেয়েরা তাকে টুকিটাকি আর্থিক সহযোগিতা করছেন। এগুলো দিয়েই কোন মতে সংসার চলে যাচ্ছে। মেয়ে রাজিয়া (৪০), রাসপিয়া সুলতানা (৩৮), ছেলে মোতালেব হোসেন (২৭) এবং ইসরাত জাহান (২২)। ছেলেমেয়েদের প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত এবং অনেকেই চাকুরী করছেন। শহীদের প্রোফাইল নাম : মোখলেসুর রহমান পিতা : মো: হাবিবুর রহমান মাতা : মরিয়ম বেগম জন্ম তারিখ : ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: হিরণ্য বাড়ি, ইউনিয়ন: ৮ নং মহাদান, থানা: সরিষাবাড়ী , জেলা: জামালপুর আহত হওয়ার স্থান : আজমপুর, উত্তরা, ঢাকা আহত হওয়ার সময়কাল : ১৭ জুলাই, ২০২৪ শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ২০ জুলাই (পুলিশ জানিয়েছে লাশ পাওয়া গেছে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে) যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলি শহীদের কবরস্থান : নিজগ্রাম, হিরণ্য বাড়ি, সরিষাবাড়ী, জামালপুর শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. বাসস্থান সংস্কার করা প্রয়োজন ২. শহীদের পিতার স্থায়ী উপার্জনের ব্যবস্থা করা শহীদ মোখলেসুর রহমানের এই ত্যাগ মানুষের জন্য বেদনাময় স্মৃতি হয়ে থাকবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই সৈনিক জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশের জন্য লড়াই করেছেন। তার এই অবদান দেশবাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।