Image of  মো: রাব্বী মিয়া

নাম: মো: রাব্বী মিয়া

জন্ম তারিখ: ১১ নভেম্বর, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :শিক্ষার্থী, শাহাদাতের স্থান :জি-ফাইভ শোরুম এর সামনের বিল্ডিং এর চতুর্থ তালা, চিটাগাং রোড, সিদ্ধিরগঞ্জ,নারায়ণগঞ্জ।

শহীদের জীবনী

"আমার ছেলেটা প্রতিদিন ফোন করতো। সব সময় বলতো আমরা আর গরীব থাকবো না, মা দেইখো। ১২ দিন হয়ে গেল ছেলে আমাকে ফোন করে না। আর কোনদিন করবে না" জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার পঞ্চাশি নয়াপাড়া গ্রামের এক হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য শহীদ মো: রাব্বী মিয়া। তিনি ১১ নভেম্বর ২০০২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা মো: আব্দুর রহিম কৃষিকাজ করেন এবং মা মোসা: রাজিয়া বেগম গৃহিণী। শহীদ রাব্বী পড়াশোনা করতেন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে। পড়তেন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দ্বিতীয় বর্ষে। বিদেশে পড়ার আশা ছিল তার। এর জন্য আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পড়াশুনার সাথে তিনি নারায়ণগঞ্জের ওয়ালটন বেস্ট পয়েন্টের জুনিয়র অফিসার হিসেবে কাজ করতেন। পারিবারিক আর্থিক অসংগতি থাকায় শহীদ রাব্বী মিয়া পড়াশোনার খরচ এবং ঢাকা থাকার খরচ চালানোর জন্য টিউশনিও করতেন। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার পাইনদি নতুন মহল্লার একটি ভবনের চতুর্থ তলায় থাকতেন রাব্বী। ২০ জুলাই বাসায় থাকা অবস্থায় বাইরে বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে কৌতুহলবসত বারান্দায় যান। দেখতে পান কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে এবং পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায় রাব্বী তার মোবাইল বের করে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার ভিডিও করতে শুরু করলে একটি বুলেট তার বুকে লাগে। সেখানেই মারা যান রাব্বী।শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শহীদ মো: রাব্বী একেবারেই হতদরিদ্র পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা খুব কষ্ট করে অপরের জমিতে কৃষি কাজ করে দুই সন্তানকে পড়াশুনা করিয়েছেন। বাড়িতে দুইটা গরু পালেন রাব্বীর বাবা মো: আব্দুর রহিম সাহেব। বড় ছেলে ঢাকার গুলশান এলাকায় একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন এবং যতটুকু পারতেন সংসারের খরচ যোগাতেন। পড়াশোনা টিকিয়ে রাখতে রাব্বী প্রাইভেট পড়াতেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম জব করতেন। এভাবেই তিনি তার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দুই ভাইয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় কোনক্রমে দিন চলে যাচ্ছিল পরিবারটির। এত অসংগতি, এত বাধা, এত আর্থিক দুরবস্থা, হয়তো বা সেই কারণেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মাঠে ছিলেন না শহীদ মো: রাব্বী মিয়া। হয়তোবা পরিবারের জন্যই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে শুধু মাঠে ময়দানের সংগ্রামী যে প্রকৃত সংগ্রাম এমনটি নয়। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকেও সাহায্য করা যায়। শহীদ মো: রাব্বী মিয়া তার একটি উদাহরণ। তিনি মাঠে ছিলেন না ঠিকই, কিন্তু খুনি হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর নৃশংসতা, গণহত্যা, বর্বরতার দৃশ্য ধারণ করে ইতিহাসের সাক্ষী হতে চেয়েছিলেন। তার ধারণকৃত দৃশ্য হতে পারতো পতিত স্বৈরাচারের নির্মমতার প্রামাণ্য দলিল। তাইতো পতিত স্বৈরাচার খুনি হাসিনার বাহিনী যখন হেলিকপ্টার থেকে স্নাইপার দিয়ে বহুতল ভবনের ওপর থেকে জনতাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছিল, সেই সময়ে জীবনের মায়াকে উপেক্ষা করে সেই দৃশ্য ধারণ করছিলেন শহীদ মো: রাব্বি মিয়া। এই সময়েই, ২০ জুলাই ঘাতকের একটি বুলেট তার বুক ছিন্নভিন্ন করে দেয়। ঘটনাস্থলেই ইহলীলা সাঙ্গ হয় শহীদ মো: রাব্বি মিয়ার। এভাবেই শেষ হয়ে যায় অতি দরিদ্র ঘর থেকে উঠে আসা রাব্বী মিয়ার স্বপ্ন। শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি শহীদের পিতা মো: আব্দুর রহিম বলেন, কিভাবে নিজের মনকে বুঝাই। ছেলে হারিয়ে কিভাবে বাচবো? ছোট ছেলের মৃত্যুর ১২ দিন পরও চোখের পানি আটকাচ্ছে পারছে না শহীদ রাব্বির মা রাজিয়া বেগম। শহীদ রাব্বির একটি ছবি বুকে জড়িয়ে সারাক্ষণ কাঁদছেন তো কাঁদছেন। বিলাপ করছেন আর বলছেন, আমার ছেলেটা প্রতিদিন ফোন করতো সবসময় কথা বলত। বলতো, আমরা আর গরীব থাকবো না মা, দেইখো। ১২ দিন হয়ে গেল ছেলে আমাকে ফোন করে না। আর কোনদিন করবেও না। শহীদের বন্ধু মো: মনিরুজ্জামান মানিক বলেন, শহীদ রাব্বি অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল। আমরা এলাকাবাসী হিসাবে মেধাবী ছাত্র হত্যার সাথে জড়িত, দেশের সম্পদ নষ্টের সাথে জড়িত সেই হাসিনা সরকারের বিচার চাই। আমরা মামলা করতে চাই। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদের পিতা মো: আব্দুর রহিম কখনো রিকশা চালিয়ে আবার কখনো বা কৃষি কাজ করে সংসারের খরচ জোগাতেন। শত প্রতিকূলতা সত্বেও শহীদ রাব্বির বড় ভাই অন্তর মিয়া সম্প্রতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করে সরকারি চাকরি পেতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিজের খরচ চালাতে ঢাকার গুলশান এলাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করেন। নিজেদের খরচ মেটানোর পর অবশিষ্ট টাকা দুই ভাই বাসায় পাঠাতেন। দুই ভাইয়ের মিলিত আর্থিক সহযোগিতা এবং নিজের কৃষিকাজের অল্প আয় দিয়ে সংসার চলতো আব্দুর রহিমের। এক নজরে শহীদের তথ্যাবলি নাম : মো: রাব্বী মিয়া জন্ম তারিখ : ১১ নভেম্বর ২০০২ পিতা : মো: আব্দুর রহিম মাতা : মোসা: রাজিয়া বেগম স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: পঞ্চাশী নয়াপাড়া, ইউনিয়ন: আওনা, থানা: সরিষাবাড়ী, জেলা: জামালপুর আহত হওয়ার স্থান : ঢাকার ভাড়া বাসার বারান্দার লোকেশন-১০, তালা পাইনাদি নতুন মহল্লা, জি-ফাইভ শোরুম এর সামনের বিল্ডিং এর চতুর্থ তালা, চিটাগাং রোড, সিদ্ধিরগঞ্জ,নারায়ণগঞ্জ আহত হওয়ার সময়কাল : ২০ জুলাই, ২০২৪, বিকাল ৫টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ২০ জুলাই, আনুমানিক বিকাল: ৫টা যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলি (পুলিশ হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ে সেগুলি বুকের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়, ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি) শহীদের কবরস্থান : নিজগ্রাম, পঞ্চাশী নয়াপাড়া, সরিষাবাড়ী ,জামালপুর শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. বাসস্থান সংস্কার করা প্রয়োজন ২. শহীদের পিতার স্থায়ী উপার্জনের ব্যবস্থা করা কিংবা মাসিক বেতন ভাতা দিয়ে দেওয়া

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: জুবায়ের আহমেদ

মো: মোবারক হোসেন

আব্দুল্লাহ আল মামুন

মো: আমিরুল ইসলাম

ফজলুল করিম (ফজল মিয়া)

মো:  উবায়দুল হক

আব্দুল্লাহ আল মাহিন

মো: জাহিদুল হাসান

মো: সোহাগ মিয়া

রহমত মিয়া

শহীদ জাকির হোসেন

হৃদয় মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo