জন্ম তারিখ: ৭ জানুয়ারি, ১৯৯৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা : গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান :বাসন থানার সামনে, গাজীপুর, ঢাকা।
“তার মৃত্যুর কথা শুনে আমার শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠলো। আমার বাবা মাকে সেই দেখত, খাওয়াইত। কিন্তু এখন কে খাওয়াবে?” শহীদ রবিউল ইসলাম জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার কুলপাল গ্রামে ৭ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বৃদ্ধ পিতা জুলহাাস উদ্দিন (৮০) কৃষিকাজ করেন এবং মা আমিনা বেগম (৭০) গৃহিণী। শহীদ রবিউল ইসলাম নর্থ নীট ইন্ড্রাস্ট্রিস লিমিটেডে কোয়ালিটি চেক ইউনিটে চাকরি করতেন। চাকরির আয় থেকে তিনি নিজের এবং বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ব্যায়ভার বহন করতেন। দুই বছর বয়সী কন্যা মোবাশ্বেরা ও স্ত্রী নাজমুন নাহার লাবনীকে নিয়ে ঢাকার গাজীপুরের বাসন থানার নাওরোজ এলাকায় ভাড়া থাকতেন। ৫ আগস্ট খুনি হাসিনা সরকারের পতনের খবরে সারা দেশে আনন্দ মিছিল হচ্ছিল। গাজীপুরের একটি আনন্দ মিছিলে যোগ দিয়েছিল শহীদ রবিউল ইসলাম। মিছিলে পুলিশ অতর্কিত গুলিবর্ষণ শুরু করলে পুলিশের ছোড়া চার পাঁচটি বুলেট শরীরে এসে বিদ্ধ হয় শহীদ রবিউল ইসলামের। বুলেটগুলো তার বুকে পিঠে হাতে এবং তলপেটে আঘাত হানে। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই আনুমানিক ৫:২০ মিনিটের দিকে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তিনি শহীদ হন রাত ৮টার দিকে তার পরিবার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের পুরো জুলাই মাস যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের জোয়ারে আন্দলিত হয়েছিল, ঠিক তেমনি স্বৈরশাসকের পতনে জোয়ার উঠেছিল পুরো দেশ জুড়ে। ৫ আগস্ট যখন কাঙ্ক্ষিত সংবাদ আসে তখন সবাই বিজয় মিছিলে যোগ দিতে থাকে। শহীদ রবিউল ইসলাম আওয়ামী স্বৈরাচারের পতনে আনন্দিত হয়ে আনন্দ মিছিলে যোগ দেয়। তার ধর্মীয় লেবাস দেখে পৈশাচিক পুলিশরা হিংস্র হয়ে ওঠে। তাকে আটক করে বাসন থানার সামনে নিয়ে চার/পাঁচটা গুলি করে এবং নির্যাতন করে হত্যা করে। পুলিশ তার বুকে পিঠে হাতে এবং তলপেটে গুলি করেছিল। ঘটনাস্থলে তিনি মৃত্যুবরণ করলেও রাত আটটার পর তার পরিবার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি শহীদ রবিউল ইসলাম ছিলেন একজন পরহেজগার মানুষ। নিজে যেমন ধর্ম পালন করতেন তেমনি অপরকেও ধর্ম পালনের জন্য উপদেশ দিতেন। শহীদ রবিউল ইসলাম এর বড় ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, ” আমার ভাই অনেক ধার্মিক ছিল। আমাদের থেকে সে আলাদা ছিল। বাড়ির সবাইকে দাড়ি রাখতে বলত, সব সময় নামাজের কথা বলতো এবং সবার খেয়াল রাখার চেষ্টা করতো। বাংলাদেশের কোন আইনে আছে যে একটা লোককে এভাবে হত্যা করে আইনের লোক হয়ে? আমরা কার কাছে বিচার চাবো? কি অপরাধ ছিল তার? সে তো কোন অন্যায় করেনি। এখন তার বয়স্ক বাবা-মাকে কে কামাই করে খাওয়াবে? ” শহীদ রবিউলের পরিবার দাবি করেছেন তার হত্যাকারী যেন বিচার হয় এবং তাকে যেন মর্যাদা দেওয়া হয়। একই সাথে তারা আর্থিক দুরাবস্থা দূর করার জন্য সার্বিকভাবে সহযোগিতাও কামনা করেন। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ রবিউল ইসলাম মৃত্যুর সময় স্ত্রী নাজমুন নাহার লাবনী এবং দুই বছরের এক কন্যা সন্তান মোবাশ্বারাকে রেখে গেছেন। রেখে গেছেন অশীতিপর বৃদ্ধ বাবা-মাকে। শহীদের বড় দুই ভাই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শহীদ রবিউল ইসলামের ভিন্ন কোন আয়ের উৎস নেই। তার স্ত্রী এবং মেয়ে এখন গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন। শহীদের প্রোফাইল নাম : রবিউল ইসলাম পিতা : জুলহাস উদ্দিন (৮০) মাতা : আমেনা বেগম (৭০) জন্ম তারিখ : ৭ জানুয়ারি ১৯৯৮ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: কুলপাল, ইউনিয়ন: আওনা, থানা: সরিষাবাড়ী, জেলা: জামালপুর আহত হওয়ার স্থান : বাসন থানার সামনে, গাজীপুর, ঢাকা আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল: ৫টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট, আনুমানিক বিকাল: ৫টা যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশ শহীদের কবরস্থান : নিজগ্রাম, কুলপাল, আওনা, সরিষাবাড়ী, জামালপুর শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. বাসস্থান সংস্কার ও টয়লেট নির্মাণ করা প্রয়োজন ২. শহীদের পিতার স্থায়ী উপার্জনের ব্যবস্থা করা কিংবা তাদের মাসিক ভাতা প্রদান করা ৩. শহীদের স্ত্রী ও কন্যার আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করাশহীদের প্রোফাইল