জন্ম তারিখ: ১২ আগস্ট, ১৯৮৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা :দিনমজুর, শাহাদাতের স্থান :নারায়ণগঞ্জর কাঁচপুর ব্রিজ।
শহীদ সফিক মিয়ার জন্ম ১২ আগস্ট ১৯৮৫ সালে শেরপুর জেলার নকলা থানার চিথলিয়া গ্রামে। বাবা জুলহাস আলী (৭৬) এবং মা কাঞ্চনী (৬০), উভয়ই বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। শহীদ সফিক মিয়া নারায়ণগঞ্জ এর কাঁচপুর এলাকায় স্ত্রী ও তিন কন্যা নিয়ে বাস করতেন। দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। স্ত্রী মুন্নি বেগম (৪০), কন্যা মেঘনা(১১) নাদিয়া (৬) এবং সাইদা (২) কে নিয়ে তার সংসার ছিল। তিনি ৪ আগস্ট বিকাল ৫টায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শহীদ সফিক মিয়া নারায়ণগঞ্জ এর কাচপুর এলাকার একজন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ ছিলেন। পরিবারের একমাত্র এই উপার্জনকারী মানুষটিকে খুনি হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। আগস্ট মাসের শুরু থেকেই নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলি চালানো হয় এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এর প্রতিবাদের সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া ছাত্রহত্যার বিচার যাবি এবং নির্যাতনের প্রতিবাদের ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও রাজপথে নামেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালিত হচ্ছিল। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ এলাকাতে এই দিন ছাত্র জনতার যৌথ আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছুড়ে। ওই সময় শহীদ সফিক মিয়া কাঁচপুর ব্রিজে অবস্থান করছিলেন। বিকাল পাঁচটার দিকে পুলিশের ছোড়া গুলিতে তিনি ব্রিজের উপরে গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান। সফিক মিয়ার নিথর দেহ ব্রিজের ওপরই পড়েছিল। পরিস্থিতি শান্ত হলে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারী ছাত্ররা তার মরদেহ উদ্ধার করে পাশের একটি মসজিদে নিয়ে যান এবং সেখানে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে শহীদ সফিক মিয়ার পরিবারের সদস্যরা একটি অ্যাম্বুলেন্স করে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে কবরস্থ করা হয়। শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি শহীদ সফিকের গ্রামের মানুষ এবং পরিবার সরকারের কাছে তার হত্যার সঠিক বিচার দাবি করেছে। তারা চায় এই মৃত্যুর ন্যায়বিচার হোক। যেন এমন ঘটনা আর কোন সাধারন পরিবারের উপর নেমে না আসে। সাধারণ পরিবারে যেন চরম বিপর্যয় ডেকে না আনে। শহীদের প্রতিবেশী মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, " শহীদ সফিক মিয়া ৪ আগস্ট বিকাল ৫ টায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। তার পরিবারের অবস্থা খুবই শোচনীয়। তার ছোট তিনটি মেয়ে আছে। তার পরিবারের প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ করছি। শহীদের জন্য দোয়া করবেন। " শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ সফিক মিয়া নারায়ণগঞ্জ এর কাঁচপুর এলাকায় স্ত্রী ও তিন মেয়ে নিয়ে থাকতেন। দিনমজুরি করে পাঁচ জনের সংসার চালাতেন। শহীদের স্ত্রী মুন্নি বেগম (৪০) গৃহিণী।বৃদ্ধ বাবা মা কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। শহীদ সফিকের দুইজন বোন থাকলেও তাদের আর কোন ভাই নেই যে বৃদ্ধ পিতামাতার ভরণ পোষণ করবে। আর্থিকভাবে চরম দুর্দশাগ্রস্থ এই পরিবারটি সামান্য কিছু অনুদান হিসেবে যা পেয়েছিল তা কিছুদিন পরেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আশে পাশের মানুষের দানের উপরেই বৃদ্ধ বাবা মা স্ত্রী সন্তানরা এখন দিনাতিপাত করছেন কোন রকমে। এক নজরে শহীদের তথ্যাবলি নাম : সফিক মিয়া পিতা : জুলহাস আলী(৭৪) মাতা : কাঞ্চনী (৬০) জন্ম তারিখ : ১২ আগস্ট ১৯৮৫ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: চিথলিয়া, ইউনিয়ন: গণপদ্দি, থানা: নকলা, জেলা: শেরপুর আহত হওয়ার স্থান : কাঁচপুর ব্রিজের ওপর, নারায়ণগঞ্জ আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৫ টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৪ আগস্ট, আনুমানিক বিকাল: ৫:৩০ মিনিট যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশ শহীদের কবরস্থান : নিজগ্রাম, চিথলিয়া, গণপদ্দি নকলা, শেরপুর শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. বাসস্থান সংস্কার ও টয়লেট নির্মাণ করা প্রয়োজন ২. শহীদের পিতা-মাতা ও স্ত্রী সন্তানের স্থায়ী উপার্জনের ব্যবস্থা করা কিংবা তাদের মাসিক ভাতা প্রদান করা অথবা স্ত্রীর জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ৩. শহীদের আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা ও কন্যাদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব নেওয়া