জন্ম তারিখ: ১৩ জুলাই, ১৯৮৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৭ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা :গার্মেন্টস শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান :ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
শহীদ আ: আজিজের জন্ম ১৩ জুলাই ১৯৮৯ সালে শেরপুর জেলার নকলা থানার চরবাসন্তি গ্রামে। বাবা মোজাম্মেল হক মৃত এবং মা ছাহেরা খাতুন গৃহিণী। শহীদ আব্দুল আজিজ গাজীপুরের বাসন থানার টেক্স ইউরোপ বিডি লিমিটেড নামক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ৫ আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে কর্মসূচি পালনের সময় তিনি পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেটে আহত হন। তার চোখে মুখেও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রাবার বুলেট আঘাত করলে তিনি মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার সাথে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছিল তবে আব্দুল আজিজ এর আঘাত ছিল সবচেয়ে গুরুতর। দুইদিন চিকিৎসার পর সাত আগস্ট রাত ৩টায় তিনি ইন্তেকাল করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ৫ আগস্ট সারাদেশ বিক্ষোভে উত্তাল। আন্দোলনের ঢেউ গাজীপুরেও এসে পৌঁছে ছিল। শহীদ আব্দুল আজিজ এ আন্দোলনের অংশগ্রহণ করেছিলেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুলিশ বেপরোয়া লাঠিচার্জ শুরু করে। পুলিশি এ নৃশংসতার দৃশ্য অনেকেই ধারণ করছিলেন মোবাইল ফোনে। দুপুর দুইটার দিকে শহীদ আব্দুল আজিজ তার মোবাইল ফোনেও এ দৃশ্য ধারণ করছিলেন। হঠাৎই এক ঝাঁক রাবার বুলেট তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত হানে। চোখ মুখ বুক রক্তাক্ত হয়ে যায়। তার সাথে আরও বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছিলেন। তবে তার আঘাত ছিল গুরুতর। আন্দোলনের সাথীরা তাকে ধরাধরি করে স্থানীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে দুইদিন চিকিৎসারত অবস্থায় থাকার পর সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন। ৭ আগস্ট রাত তিনটায় তিনি মারা যান। পরের দিন ৮ আগস্ট তার মরদেহ নিজ গ্রাম চরবাসন্তীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে জানাযার পর তাকে দাফন করা হয়। শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি শহীদ আ: আজিজ ২০২৪ সালের পহেলা জুলাই একই গ্রামের হোসনা বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। হোসনা বেগমের এমন দুর্ভাগ্যে তিনি নিজেই বাকরুদ্ধ হয়ে যান। শহীদের ছোট ভাই এইচএসসি পরীক্ষার্থী আব্দুল মান্নান বলেন, " আমার মনে হয় আর লেখাপড়া হবে না। কে দেবে আমার লেখাপড়ার খরচ? " স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক গোলাম সারোয়ার বলেন, " বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত আব্দুল আজিজের পরিবারের প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়া। " শহীদের শশুর মোজামিয়া বলেন, " একমাস আগে বিয়ের কাবিন হয় আজিজের সঙ্গে কিন্তু গত পাঁচ আগস্ট পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ এখন কি হবে?" সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আহসান হাফিজ খান বলেন, "আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আব্দুল আজিজ -এর মৃত্যুর ঘটনার সঠিক বিচার দাবি করছি এবং পরিবারের প্রতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।" শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ আব্দুল আজিজ মাত্র ৫/৭ বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারিয়েছিলেন। তাই অল্প বয়সেই তাকে কাজের ভার নিতে হয়েছিল। বড় ভাই ইটভাটার শ্রমিক। মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে এক লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে তিনি বিবাহ করেছিলেন। স্থানীয় নকলা উপজেলা জামায়াতে ইসলামের পক্ষ থেকে তার সেই দেনমোহর পরিশোধ করা হলেও স্ত্রী হোসনা বেগম এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : আ: আজিজ পিতা : মোজাম্মেল হক (মৃত) মাতা : ছাহেরা খাতুন জন্ম তারিখ : ১৩ জুলাই ১৯৮৯ বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মুন্সিবাড়ি চর বাসন্তী (১ম অংশ), ইউনিয়ন: পাঠাকাটা, থানা: নকলা, জেলা: শেরপুর। আহত হওয়ার স্থান : গাজীপুর চৌরাস্তা আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪, দুপুর দুইটা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৭ আগস্ট, রাত তিনটা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলি শহীদের কবরস্থান : নিজগ্রাম, চরবাসন্তি শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন সহায়তা করা যেতে পারে। ২. শহীদের মায়ের জন্য মাসিক আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা। ৩. শহীদের ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সাহায্য করা।